সারাদেশ

‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে’

ডেস্ক রিপোর্ট: মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে সকলকে অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমরা সকলকে অনুরোধ জানাবো এ উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি ও নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন। যেহেতু আদালতের রায় এখনো সুনির্দিষ্টভাবে আমার হাতে আসেনি বা পড়ে দেখতে পারেনি; তাই সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য আমি করছি না।

শনিবার (৮ জুন) এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে জেলা প্রশাসনের ভূমিসেবা সপ্তাহ-২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা জীবন বাজি রেখে আমাদেরকে এ দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোটার যে বিষয়টি ছিল সেটা যথাযথ প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অমনোযোগিতা ও অমান্য করা হচ্ছে। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা এসেছিল। আমরা সকলকে অনুরোধ জানাবো এ উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি ও নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন।

যেহেতু আদালতের রায় এখনো সুনির্দিষ্টভাবে আমার হাতে আসেনি বা পড়ে দেখতে পারেনি; তাই সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য আমি করছি না। তবে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে মুক্তিযুদ্ধের এত সময় পরে এসেও তাদের সন্তানদের জন্য রাখা কোটা প্রশ্নে কিছু মানুষের এত উষ্মা, তা খুবই দুঃখজনক। দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়েছে তাদের সন্তানদের দিয়ে তারা যদি দ্বিতীয়বার প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্ণফুলী নদীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ যাতে দূষণ না হয় সেজন্য শিল্পনগরী গড়ে দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় শিল্পনগরী বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী। সেখানে বিশাল একটি এলাকার শিল্পায়ন এবং শিল্প সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সে হিসাবে আমি বলতে পারি যে, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ যাতে আমরা না করি। বিশেষ করে নদী যে ব্যবস্থাপনা এবং পানির যে বিশুদ্ধতা, দূষণমুক্ত রাখা এবং নদীর চলাচলের উপযুক্ত রাখা, এ বিষয়ে তো শুধু আমাদের নির্বাহী বিভাগ বা সরকার নয় বিচার বিভাগ থেকেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। নদী রক্ষা করতে হবে। নদীর বহমান ধারা এবং সেটাকে বিশুদ্ধতা ডাকার প্রশ্নে সবাই ঐক্যমত আছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমি সুনির্দিষ্টভাবে সেটি এখনো অবগত নয় যদিও কেউ এরকম পরিকল্পনা করে থাকে। হঠাৎ নদীর মধ্যবর্তী জায়গায়, সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে। সেটি আমার যে সাধারণ দৃষ্টি, সেটিতে নদীর জন্য কখনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না করে বলে আমি নিজে মনে করি না।প্রকল্প সংকৃষ্ট ব্যক্তিরা পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স নিয়েছে কিনা সেটা আমাদের দেখতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর এর ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোন প্রকল্প করা সেটা যথাযথ নয়। এই বিষয়ে আমি পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কথা বলব। শুধু আমার নির্বাচনী এলাকা বলে নয় সারা বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে বর্জ্য ফেলা হবে ও নিষ্কাশন করা হবে এবং বর্জ্য থেকে কি শিল্পায়িত কাজ করা হবে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, পরিবেশের জন্য এবং নদীর পরিবেশের জন্য সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন হ্যাঁ বা না আমি কোন কিছু বলবো না। তবে কখনোই পরিবেশের দিক থেকে যথাযথ হতে পারে না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের ৭০ এর নির্বাচনে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার পক্ষে ২০ শতাংশ ভোট যায়নি। সেই ২০ শতাংশ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী যে অংশটি ছিল তারা এখনও দীর্ঘ ২৬-২৭ বছর সরকারের আনুকূল্য পেলে ফুলেফেঁপে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। সুতরাং সেই গোষ্ঠীগুলো যে বেড়ে অনেক বড় হয়নি সে কথা তো বলা যেতে পারে না। তারা রাজনীতিত ও সমাজে বিদ্যমান এবং অর্থনীতিতে খুব শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এই শক্তিটা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরোধিতা করবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলে পাকিস্তান নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব তিনি বলছেন, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। তো কতটুকু পাকিস্তানি প্রেম দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই দলে মহাসচিবের মধ্যে থাকতে পারে সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি। সেটা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি স্বাধীনতার এতদিন পরে এসেও এরকম আছে কিনা আমি জানি না। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তা আছেন।

আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় কুচক্রিরা তাদেরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে তারা রয়ে গিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম। তারাই কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায়িক চেতনা কি বিচ্যুত করে সেটাকে এক ধরনের সম্প্রদায়িককরণে প্রচেষ্টা তারাও করে।

শিক্ষা কারিকুলামে সব ধর্মের প্রতি সম্মানের ভূমিকা শক্তিশালী থাকবে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় বলে এসেছি, শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রক্রিয়া, পাঠদান ব্যবস্থা ও পাঠক্রমের মধ্যে সবসময় সকল ধর্মের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গাটাতে আমরা সবসময় শক্তিশালী ভূমিকাই থাকবো। এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কাজ জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার কখনো করেনি আগামীতেও করবে না। কিছু কিছু বিষয় তারা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন সেগুলো অবশ্যই আমরা নিরসন করব।

শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা আমরা বিবেচনা করছি ঈদুল আযহার পরে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও আমাদের কিছুটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

কক্সবাজারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী নদী থেকে নাফ নদী পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বিশাল জেলা এবং বান্দরবান এই তিন জেলায় মিলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে একটি বিশাল জেলা সমান ধরা যায়, সেখানে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে ভেটেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ সেখানে আছে কিন্তু ওখানে পাঠদান কার্যক্রম হয় না গবেষণা কার্যক্রম হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দেয়ার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতির জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কক্সবাজারে যেন মূলত সে বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়। তাহলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান থেকে শিক্ষার্থীরা যেতে পারবে। সেভাবে করে জায়গাটা নির্ধারণ করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে কক্সবাজারে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *