সারাদেশ

রাজশাহীতে ভ্যানচালক হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের হাওর ও জলাভূমিগুলো অপার সম্ভাবনার আধার। হাওর ও জলাভূমিগুলো যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে এবং এখানকার সম্পদকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। আরও নানাভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। হাওর ও জলাভূমির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য।

রোববার (৯ জুন) রাজধানীর গ্রিন রোডে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরে ’১০০ বছরে হাওর ও জলাভূমি’ শীর্ষক আয়োজিত একটি কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতর ও ‘আমরা নারী’ এর যৌথ উদ্যোগে অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণে অধিদফতর আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দেশের সব জলাভূমি সংরক্ষণে এবং এগুলোর উন্নয়নে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি এই ব্যাপারে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, আমরা টুনা ফিস ধরতে পারি না। অথচ জাপান আমাদের এখান থেকে এই মাছ ধরে জাহাজেই প্রসেসিং করে বাজারজাত করছে।

তিনি বলেন, ৮০’র দশকে বাংলাদেশে বন ছিল ৭ শতাংশ, থাকতে হবে ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ১৭ শতাংশ। দেশের ৮০ শতাংশ এলাকা বছরের ৮ মাস ধরে সবুজ থাকে। আমরা ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করছি। হাওরে ৭ মাস পানি থাকে। তখন মানুষের কাজ থাকে না। এই সময় তারা হাওর থেকে মাছ ধরে থাকে।

তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে হাওর ও জলাভূমিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পলি। শুধু পলি নয়, পাথর ও বালিকণাও রয়েছে। প্রতি বছর কমপক্ষে এক বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি পড়ে। এতে করে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের ডিজি বলেন, দেশের ৭১ শতাংশ জিডিপি আসতে পারে মিঠা পানির মাছ রফতানি করে। ধানের চেয়ে মাছ চাষে তিনগুণ বেশি লাভ। মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে এক কোটি মাছ পালনে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করলে তা ২০০০ হাজার কোটি টাকা বিক্রি করা সম্ভব।

সিলেটের রাতারগুল জলাবনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রাতারগুলে ১০০ কোটির মতো গাছ রয়েছে। এসব গাছের গোড়ায় মাছ আশ্রয় পাচ্ছে। গাছে পাখি আশ্রয় নেয়। রাতারগুলের এই মডেল হাওর ও দেশের অন্যান্য জলাভূমির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাতে পরিবেশেরও উন্নতি হবে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রসঙ্গ টেনে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বাড়লে যশোর, নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চল ডুবে যাবে। হাওর ও জলাভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

এহসানুল হক জসীম তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সাতটি জেলা এবং ভারতের কিছু এলাকা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও হাওর নেই। হাওরের খাদ্য উৎপাদন ১৭ শতাংশ, ২০ শতাংশ মাছ উৎপাদন হয়। দেশের গ্যাসের ৯০ শতাংশ হাওর অঞ্চল থেকে উৎপাদিত হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, সরকারের অনেক প্রকল্পের কারণে হাওর নষ্ট হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের মানুষজনের একটা বড় অংশ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। ইদানিং মারাত্মক আকারে বন্যা দেখা দিচ্ছে। বজ্রপাতে মারা যায় অনেক মানুষ। কিন্তু এসবের খবর মিডিয়ায় কম আসে।

তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জের ওয়াল ওয়েদার রোডের কারণে হাওরের পানি যেতে পারে না। এতে ক্ষতি হচ্ছে। পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২২ সালে ভয়াবহ হওয়ার ক্ষেত্রে এটা অন্যতম কারণ। সেই বন্যায় ১০০ জনের মতো মানুষ মারা গেছে দাবি করে তিনি বলেন, এই তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি। হাওরের সংবাদগুলো যথাযথভাবে গণমাধ্যমে তুলে আনার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

হাওর ও জলাভূমি ইস্যুতে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এবং মিডিয়ায় আরও বেশি নিউজ কভারেজের জন্য বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি অধিদফতর প্রয়োজনীয় কর্মসূচি রাখতে পারে। সাংবাদিকদের নিয়ে ট্রেনিং কর্মসূচি ও সরেজমিন প্রতিবেদনের জন্য ফিল্ড ট্রিপের ব্যবস্থা করতে পারে।

সেভ আওয়ার সি- এর মহাসচিব গাজী মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড পানির উন্নয়ন না করে শুধু বাঁধ দেয়। ছাদে মাছ চাষ করে ভূগর্স্থ পানি নষ্ট হচ্ছে। এতে মাছের গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ হাওর ও জলাধারগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা হলে ছাদে মাছ চাষের কোন প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান এই কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। ‘আমরা নারী’ এর ফাউন্ডার এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ’হাওর সংরক্ষণ ও উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এহসানুল হক জসীম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মো. আখতারুজ্জামান।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম তানভীর হাসান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ, সেভ আওয়ার সি- এর মহাসচিব গাজী মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকার সিটি এডিটর নাসিমা আক্তার সোমা, মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি রাশেদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক কেফায়েত শাকিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফারুক আহমদ, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক গাজী মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *