সারাদেশ

ভাড়া নৈরাজ্য-সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে ব্যবস্থা নিন: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদুল আজহায় যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এছাড়া দেশের সড়ক পথে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরগুলোর প্রতিও আবেদন জানানো হয়েছে।

সোমবার (১০ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘প্রতিবছর ঈদে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধিতে নাগরিক সমাজের উদ্বেগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এই দাবি জানান।

আলোচনা সভায় যেসব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে সরকার যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা শতভাগ বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীল করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়।

আলোচনা সভার ধারণাপত্রে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার প্রতিবছর ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মুনাফার অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি সভা করে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব দিলেও তারা সবাই মিলেমিশে ভাড়া নৈরাজ্য চালান।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে, ফিটনেটবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে গঠিত মনিটরিং কমিটিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি শুধুমাত্র পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দায়িত্বে থাকেন।

বাস্তবতা হলো, ৯০ শতাংশের বেশি যাত্রীকে প্রতি ঈদে বাড়ি যেতে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়। এমন কী বিআরটিএ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না করে বরং যাত্রীরা স্বল্প দূরত্বে গেলেও রুট পারমিটের শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

যারা সড়কে চাঁদাবাজিতে জড়িত, তাদের ওপর ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে, চাঁদাবাজরাই চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত আটকে দেন। লক্কড়-ঝক্কড় বাস চালাতে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তাদের ওপর ঈদযাত্রায় লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল বন্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সড়কে দায়িত্ব পালনকারীরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন না জানিয়ে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতি ঈদে ফিটনেসবিহীন বাসের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী বহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা বিভিন্ন পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে পরিবহন সংকট, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে নিম্ন আয়ের লোকজনের এসব পরিবহনে যাতায়াত ঠেকানো যায় না। বরং এসব পরিবহন যাদের বন্ধ করার কথা, তারা জায়গায় জায়গায় এসব যানবাহন আটকে উৎকোচ নেন।

তিনি বলেন, দেশের সড়ক-মহাসড়কে ‘নসিমন’ ‘করিমন’, ‘ভটভটি’, অটোরিকশা চলাচলে যারা উপকারভোগী, তাদের ওপর এসব যানবাহন চলাচল বন্ধের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এতে করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। একারণে প্রতিটি ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহনে বিশৃঙ্খলায় প্রাণহানি ও মানুষের যাতায়াতে হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য দফায় দফায় বেড়েই চলেছে।

সরকারের ধারাবাহিকতায় লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে সড়কের অবকাঠামো উন্নত করলেও পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারের ইমেজ চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম. মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মহসিন প্রমুখ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *