জয়পুরহাটের খবর

কালাইয়ের সবজি ঢাকায় বিক্রি করে দিন বদলেছে জাবেদের জীবন

তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর,স্টাফ রিপোর্টারঃ

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলাসহ জেলার চারটি উপজেলা থেকে প্রায় ৩০জন  শ্রমিকের সাহায্যে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার কেজি বিভিন্ন ধরনের সবজি সংগ্রহ শেষে, ট্রাকযোগে সেগুলো ঢাকা শহরে নিয়ে বিক্রি করেন তিনি। ফিরে আসেন তিনি প্রতি রাতেই। তিনি ট্রাকেই বসে খাবারখান আর ট্রাকেই ঘুমান। এভাবে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি দিন তাঁর লাভ থাকে প্রায় চার হাজার টাকা। ১৯৯৫ সাল থেকে এ কাজ করছেন তিনি। এভাবেই তাঁর দিন বদল হয়েছে। কথাগুলো বলা হচ্ছে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের পাঁচগ্রামের বাসিন্দা মো.জাবেদ আলী প্রামানিকের কথা।

জাবেদ আলী প্রামানিক জানান, এখন থেকে ৩০ বছর পূর্বে, তাঁর সামান্য জমাজমি ছিল। সেই জমির উপরে ছিল ঘড়ের তৈরি একটি কুড়ে ঘর। সংসার ছিল টলটলে। কিভাবে দিন চলবে, সংসার চলবে- তা নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৯৫ সালে যমুনা নদীর উপর বঙ্গন্ধু সেতে নির্মাণ শেষে উদ্বোধন হয়। ঢাকায় চলাচল সহজ হয়। তখন তাঁর মাথার ঢাকা শহরে সবজি রপ্তানির বুদ্ধি আসে। সেই থেকেই এ ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমান তার আছে ইটের ঘর, গোয়াল ভরা আছে গরু, কিনেছেন অনেক জমি। এখন স্ত্রী আর ২ ছেলেকে নিয়ে তার দিন চলে নির্ভাবনায়।

একই গ্রামের শ্রমিক আরিফুল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলাম জানান, ব্যাপারী জাবেদ আলী প্রামানি প্রতিদিন জেলার কালাই, জয়পুরহাট সদরসহ ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের নিকট থেকে বেগুন, করল, শসা, খিরা, মুলা, বরবটি, টমেটো, কচুর লতি, কচুর মুখীা, ফুলকপি, কাঁচামরিচ ও পটলসহ নান সবজি কিনে নেন, তাঁরা প্রায় ৩০ জন শ্রমিক সেগুলো ট্রাকে লোডের জন্য বস্তাবন্দি করে ভ্যানযোগে আরতে নিয়ে যান। এ জন্য তাঁরা একবেলা খাবারসহ প্রতি দিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। এতে তাঁদের সংসারও ভালোভাবে চলে। উপজেলার বহুতী গ্রামের সবাজচাষী মজিদুল ও এনামুল হক জানান, তাঁরা ৩ বিঘা জমিতে চিচিঙ্গা ও ৩ বিঘা লাউ আবাদ করেন। তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজারের ওপর ভরসা করে চাষাবাদ করতে হয়। কখনো তাঁরা ভালো দাম পাই, আবার কখনো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছিল। বর্তমান সবজি ব্যাপারী মো.জাবেদ আলী তাঁদের এলাকা থেকে সরাসরি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাঁরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এ বিষয়ে কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় “দৈনিক জয়পুরটহাট খবর”-কে বলেন, কালাই উপজেলাসহ এ জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবজির ব্যাপারী  জাবেদ আলী প্রামানিকের ভূমিকা ইতিবাচক। জেলার সবজি ঢাকায় বিক্রি করে তিনি নিজের সাথে সাথে অন্তত ৩০ জন শ্রমিককের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছেন। যাহোক, সামনে শীতকাল। সবজির ভরা মৌসুম। আশা করি, তখন সবজির উৎপাদন বাড়েবে এবং দামও থাকবে সহনীয় পর্যায়ে। জয়পুরহাট জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, জেলায় চলতি খরিপ-২ মৌসুমে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত সবজি উৎপাদনের অর্জন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে।  এই জেলায় উৎপাদিত রকমারি সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হচ্ছে। এ কাজ করে জেলার অনেকেই এখন সচ্ছল। জাবেদ আলী প্রামানিক তাঁদেরই একজন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, সবজি উৎপাদনে উর্বর জেলা জয়পুরহাট। আর কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ইতিবাচক মনোভাবের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এ কারণেই জেলায় দিন দিন নিরাপদ সবজির উৎপাদন বাড়ছে। আর জেলার বাইরে সেগুলোর রপ্তানিও বেড়েছে। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত রকমারি সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে প্রতিদিন। সবজি রপ্তানিকারী জাবেদ আলী প্রামানিক তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক জয়পুরহাট খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *