আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিন নজরদারিতে চীনা ক্যামেরা ব্যবহার করছে ইসরায়েল

ডেস্ক রিপোর্ট: জেরুজালেমের ওল্ড সিটির প্রধান প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেটে অসংখ্য নজরদারি ক্যামেরা। আবার পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ানের সব রাস্তায়ও ক্যামেরা বসানো। সেই সব ক্যামেরা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়িতেও নজরদারি করা হয়। 

ফিলিস্তিনের অধিকৃত এলাকাগুলোর সর্বত্র ইসরায়েলের নজরদারির এসব ক্যামেরা সরবরাহ করছে চীনা কোম্পানি হিকভিশন। 

সারা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই ক্যামেরায় এমনভাবে প্রত্যেক লোককে শনাক্ত ও নজরদারি করা সম্ভব, যেন সেই সব ক্যামেরা তাদের বাড়িতেই বসানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনি নাগরিক সারা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের বাড়িকে কখনোই নিজের বাড়ি মনে হয় না। আমাদের সব সময় পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে থাকতে হয়।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ‘অটোমেটেড অ্যাপার্থেইড’ বা স্বয়ংক্রিয় বর্ণবাদ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, এই গেটে ফিলিস্তিনিদের সর্বদা পর্যবেক্ষণ ও গতিবিধি মূল্যায়নের মধ্যে রাখা হচ্ছে।

অ্যামনেস্টির অনুসন্ধানী দলের মতে, এই ক্যামেরাগুলো কেবল প্রতিবাদ করার সক্ষমতাই নয়, দখলদারের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনেও ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে।

এর আগের এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, এখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একটা বর্ণবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।

এসব ক্যামেরা সরবরাহকারী চীনা কোম্পানিটি আবার চীনের উইঘুর মুসলিমদের দমন-পীড়নে সি চিনপিং সরকারের সহযোগী। চীনের হ্যাংজুতে অবস্থিত কোম্পানিটি ভিডিও নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ভেন্ডরদের মধ্যে একটি।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। উইঘুর জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর চীনের দমন-পীড়নে জড়িত থাকার কারণে যুক্তরাজ্যও কোম্পানিটিকে ‘বিশ্ব নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পশ্চিম তীরে হিকভিশনের ক্যামেরার উপস্থিতির তথ্য প্রথম গত মে মাসে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। তখন মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকে পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে এই চীনা কোম্পানির ক্যামেরা, এটি মূলত ‘ডিজিটাল দমন’।

অ্যামনেস্টি পশ্চিম তীরের পার্শ্ববর্তী দুই এলাকা, পূর্ব জেরুজালেম ও হেবরনে জরিপ চালায়, যেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে।

সেখানে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে চেহারা শনাক্তকরণ (ফেসিয়াল রিকগনিশন) ব্যবস্থাসহ উন্নত নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহ করার মাধ্যমে ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন চলাফেরার স্বাধীনতা আরও সংকুচিত করছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্ণবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে উন্নত প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা ব্যবহার করা হচ্ছে।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে হিকভিশনের কয়েক ডজন ডিভাইস শনাক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০টি পাওয়া গেছে নিরাপত্তা অবকাঠামো এবং সিলওয়ানের আশপাশের অবৈধ বসতিগুলোতে। ডিভাইসগুলো ইসরায়েলি পুলিশ ও বসতি স্থাপনকারীরা পরিচালনা করে।

 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *