সারাদেশ

অগ্রসর হচ্ছে নিম্নচাপ, সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত

ডেস্ক রিপোর্ট: ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। ‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ এ স্লোগানে সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হলেও চালকদের মাঝে তৈরী হচ্ছে না সচেতনতা। চালকরা সচেতন না হওয়ায় কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে মহাসড়কের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের মোহাম্মদ আলী বাজার থেকে লেমুয়া ব্রীজ পর্যন্ত দেখভাল করে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ। লেমুয়া ব্রীজ থেকে ফেনীর শেষ সীমান্ত ধুমঘাট ব্রীজ পর্যন্ত দেখভাল করে ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশ। অন্যদিকে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ। এই দুই সড়কে প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে বাড়ছে প্রাণহানি। অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখা যায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মহাসড়কে দুর্ঘটনা। চলতি অক্টোবর মাসেই ফেনীতে ঘটেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা। ফেনী-সোনাগাজী সড়কে কলঘর নামক স্থানে  শনিবার (২১ অক্টোবর) সিএনজি অটোরিক্সায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দারোগার হাট আল জামেয়াতুদ দ্বীনিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাস্টার আবুল বাশার। এর আগে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ফেনী সদর ও দাগনভূঞায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুই শিশু। নিহতরা হলো উম্মে আয়মান বৈশাখী (১৩) ও মোছাম্মৎ নিহা (১২)। এর মধ্যে বৈশাখী ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের এলাহিগঞ্জ বাজারে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মৃত্যুবরণ করে অন্যদিকে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের দাগনভূঞায় চৌমুহনী রোডের ইব্রাহীম ফিলিং স্টেশনের সামনে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করে নিহা। এর আগেরদিন সোমবার (১৬ অক্টোবর) ফেনী শহরে রামপুর সৈয়দবাড়ির রাস্তার মাথায় কাভার্ডভ্যান চাপায় শরিফুল হাওলাদার (৪৫) নামে এক রিক্সা চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ১২ অক্টোবর মহাসড়কের লালপোলে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালক বাবুল নিহত হয়।

এছাড়াও ৭ অক্টোবর সোনাগাজীর ডাকবাংলায় এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আবদুল কাইয়ুম (২৭) নামে এক মাদরাসা শিক্ষক নিহত হয়েছেন। এর আগে গত মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ঘোপাল ইউনিয়নের সমিতি বাজার এলাকায় বাসচাপায় সিএনজি অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হন। তার মধ্যে রয়েছেন সেনা কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী এবং সিএনজি চালক।

এদিকে দুর্ঘটনা কমাতে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ ও ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশকে দেয়া হয়েছে  ডোপটেস্ট গান ও মাত্রাতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয়েছে স্পীড গান। কিন্তু এসব যন্ত্রগুলোর নেই যথাযথ ব্যবহার। যাত্রী ও চালকরা বলছেন, মহাসড়কের নিরাপত্তা দিতে পারছে না হাইওয়ে পুলিশ। দুর্ঘটনার পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই ঘটনারও প্রতিকার মিলছে না।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফেনীতে সড়ক দুর্ঘটনা অনুপাতে মামলার পরিমাণ কম। পুলিশ বলছে অনেকে ঝামেলার কারণে মামলা দায়ের করতে চায় না। পুলিশ যেসব দূর্ঘটানার খবর পায় সেগুলোর মামলা দায়ের করে। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ ২০টি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে ৯টি চার্জশীট ও ৬ টি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং বাকি ৫টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা বলছেন, মামলার চার্জশীট জমা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা হলেও আলোর মুখ দেখে না। বেপরোয়া গতি আর অদক্ষ চালকদের খামখেয়ালীতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটলেও চালকরা পার পেয়ে যাচ্ছে আইনের ফাঁকফোঁকরে। শুধুমাত্র মামলা দায়ের ও গাড়ী জব্দ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ কার্যক্রম। মহাসড়ক নিরাপদ করা এবং যানজটমুক্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হাইওয়ে পুলিশ গঠন করা হলেও অধিকাংশ কাজের ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশকে জেলা পুলিশের সহায়তা নিতে হয়।

দুর্ঘটনা কমাতে হাইওয়ে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না দাবি স্থানীয়দের ।অন্যদিকে হাইওয়ে পুলিশের দাবী জনবল সংকটের কারণে হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

এসব বিষয়ে ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন চৌধুরী বলেন, চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের পরিবহনকে অপরাধের জন্য মামলা দেওয়া হয়েছে ৩হাজার ৮২৬টি। সিএনজি আটোরিক্সা আটক করা হয়েছে ১হাজার ১২৩টি। দুর্ঘটনা রোধে ডোপটেস্ট ও স্পীড গান ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান মহাসড়কে মহিপালে ফ্লাইওভার হওয়ার কারণে যানজট নেই। মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি নেই। ধ্রুতগতিতে গাড়ী চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। জনগন সচেতন না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। জনগনকে সচেতন করতে আমরা কাজ করছি। গাড়ী গতি নিয়ন্ত্রণ করতে স্পীড গান ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রসিকিউশন না থাকায় ডোপটেস্ট ব্যবহার হচ্ছে না।

সড়ক দুর্ঘটনার মামলার বিষয়ে ফেনী আদালতের পিপি হাফেজ আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারর মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হয়। এ ধরণের মামলায় আসামীদের জামিনের বিরোধিতা করা হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *