সারাদেশ

আশুলিয়ায় কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় আরও ৫ মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট: অগ্নিকাণ্ডের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও খোলা আকাশের নিচে মোহাম্মদপু‌রের কৃ‌ষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশন অক্টোবরে পুনঃনির্মাণ কাজ শুরুর ঘোষণা দিলেও অদৃশ্য কারণে থমকে রয়েছে সবকিছু।

রাজধানীর মোহাম্মদপু‌রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কৃ‌ষি মা‌র্কেটটি গত ১৩ সে‌প্টেম্বর গভীর রাতের অগ্নিকাণ্ডে দুই-তৃতীয়াংশ দোকান ভস্মীভূত হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা বেশি দাবী করলেও খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ‌্য অনুযায়ী ক্ষ‌তিগ্রস্থ দোকানের সংখ্যা ২১৭‌টি। প্রত্যেকটি দোকানে একটি পরিবার হিসেব করলে ২১৭টি পরিবার এখন পথে বসে গেছে। আর দোকানের কর্মচারীর সংখ্যা হিসেব করলে ভুক্তভোগি পরিবারের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মা‌র্কেটের নি‌র্দিষ্ট এলাকা খা‌লি ক‌রে ফেলা হ‌য়ে‌ছে। চারপাশে কিছু দূর পর পর রড়ের খুঁটি পুতে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পূন‌ঃর্নিমাণ করা ওয়াচ টাওয়ারে রঙ করা হ‌চ্ছে। সেই টাওয়ারের পাশেই ভি‌ত্তি প্রস্তর ফলকের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আর ভুক্তভোগী ব‌্যবসা‌য়ীরা চৌ‌কির উপর দোকান সা‌জি‌য়ে বসেছেন। এ যেন সেই প্রবাদের মতো ”সকাল বেলা বাদশা রে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা।” যে দোকানীদের এক সময় বাহারী আয়োজন ছিল, তারাই এখন ফুটপাতের হকার সেজেছেন।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পর ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম ৩০ অক্টোবর পুনঃনির্মাণ কাজ শুরুর ঘোষণাও দেন। এতে আশায় বুক বেধেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ ঢাকা উত্তর সি‌টি কর‌পো‌রেশন (ডিএনসিসি) থে‌কে নির্মাণ সামগ্রী টিনসহ নগদ সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষিত সময় পার হ‌লেও শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। তা‌দের ভাষ‌্য ম‌তে, অদৃশ‌্য কোন বাধায় আট‌কে র‌য়ে‌ছে মা‌র্কেট নির্মা‌ণ কাজ।

নাম প্রকা‌শে না করার শর্তে ক্ষ‌তিগ্রস্থ একা‌ধিক ব্যবসা‌য়ী বার্তা২৪.কম‌কে বলেন, ৩০ অক্টোবর মা‌র্কেটের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ক‌য়েকদফা সময় দি‌য়ে আবার সময় প‌রিবর্তন করা হ‌য়ে‌ছে। আগে যেমন টি‌নের মা‌র্কেট ছিল ঠিক তেমনই মা‌র্কেট করার কথা। এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। কিছু ব্যবসায়ী চান বহুতল ভবন করা হোক আবার কেউ কেউ চান আগের মতোই থাকুক। নতুন স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে একা‌ধিক গ্রুপ। এসব গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন চা‌হিদার কারণে শুরু‌তেই নানাভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে কাজ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা দ্রত সম‌য়ের ম‌ধ্যে কাজ শুরু ক‌রে দি‌বে। যত তাড়াতাড়ি ব‌্যবসা‌য়ীদের ব‌্যবসার সু‌যোগ ক‌রে দেওয়া যায় সেই ব‌্যবস্থা করা হবে। মেয়র সাহেব ১৪ নভেম্বর নির্মাণ কা‌জের উদ্বোধন করতে চান।

বহুতল নাকি টিনসেড হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বহুতল ভবন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। নকশা থে‌কে শুরু ক‌রে অনেক প্রক্রিয়ার ম‌ধ্য দিয়ে যে‌তে হয়। এই মুহু‌র্তে আমরা চাই ব‌্যবসা‌য়িরা যা‌তে দ্রুত সম‌য়ে তা‌দের ব‌্যবসা প‌রিচালনা কর‌তে পা‌রে। তারা আর কত‌দিন রাস্তায় ব‌সে ব‌্যবসা কর‌বে। তাই আমরা বহুতল ভবন তৈরীর প্রক্রিয়ায় এখনই যে‌তে চাচ্ছি না। আপাতত আগের মতো মা‌র্কেট ক‌রে ব‌্যবসা‌য়ীদের ব‌্যবসার সু‌যোগ ক‌রে দি‌তে চাই। ত‌বে ভ‌বিষ‌্যতে উন্নত মা‌র্কেট করার প‌রিকল্পনা রয়েছে।

গ‌ত ২৩ অক্টোবর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট পরিদর্শন শেষে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা করেছিলেন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন, আপনারা ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হোন সেজন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মার্কেট নির্মাণ করে দোকান ফিরিয়ে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে চাই। ৩০ অক্টোবর থেকে পূর্বের নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ শুরু হবে। যার যেখানে দোকান ছিল, যতটুকু জায়গা ছিল সে অনুযায়ী আপনারা দোকান বরাদ্দ পাবেন।

তিনি আরও বলেছিলেন, এখানে পরে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে৷ সিনেপ্লেক্স, শিশুদের খেলার জায়গাসহ মাল্টিপারপাস শপিং মল নির্মাণ করা হবে।  তখন নোটিশ দিলে মার্কেট নির্মাণের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। নতুন বহুতল মার্কেট নির্মাণ হওয়ার পরও আপনারা অবশ্যই এখানে দোকান বরাদ্দ পাবেন। এটি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

এসময় মেয়র আতিকুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এক কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার এবং মার্কেট নির্মাণের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ সাদেক খান বলেন, অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি জানি অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে। মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় আজ তারা কঠিন বিপদে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের বিপদে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি মেয়র দ্রুতই মার্কেটটি নির্মাণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দোকান বুঝিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মীরা মানুষের বিপদে কখনো ঘরে বসে থাকে না। অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো বিপদে মানুষের জন্য ঝাপিয়ে পড়েন। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। ব্যবসায়ী ভাইদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

ডিএনসিসির ২৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচা বাজার (কৃষি মার্কেট) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ সলিমউল্লাহ (সলু) বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্যই আবার মার্কেট নির্মাণ করা হবে। পূর্বে বরাদ্দকৃত সবাই অবশ্যই দোকান পাবেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *