আন্তর্জাতিক

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

ডেস্ক রিপোর্ট: কোটা সংস্কার আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

বুধবার (২৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বলেন, শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও ছাত্রলীগ নির্বিচারে হত্যা করেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব গুলি ছাড়া কিছু বুঝে না। তিনি বলেন, ‘দেখা মাত্রই গুলি করতে’। পুলিশ প্রধান আ.লীগের দলীয়দের মতো বক্তব্য দিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা দলীয় বক্তব্য দিতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন থামানো যাবে না। এখন সঠিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়না। সঠিক সংবাদ প্রকাশ করলে পত্রিকা, টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৫ মার্চ পাকিস্তানীরা যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তেমনিভাবে এ কোটা আন্দোলনেও নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দাবি অনুযায়ী আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের চারজন সাংবাদিককে জীবন দিতে হয়েছে। শতশত শিক্ষার্থীদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইসরায়েলে যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তেমনিভাবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিটা হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে হবে এবং হতেই হবে। জনগণ যখন জীবন দিতে শিখেছে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেই ছাড়বেই।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, পুরো বাংলাদেশে মোট ৪ জন সংবাদিক নিহত হয়েছেন। কোটা বিরোধী আন্দোলনের নিউজ করতে গিয়ে যখন সাংবাদিক হাসান মেহেদী মারা যায় তখন তার পরিবারের কাছে আমরা কি জবাব দিবো? আজকে সঠিক সংবাদ প্রকাশ করা হলে অনেকগুলো টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, জাতিকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে রাজপথে নেমে আসতে হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মুজাহিদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যা করার পরেও কোনো আইনি ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি? এর কারণ হলো পুলিশের গুলিতে হাসান মেহেদী নিহত হয়েছে।

এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বিএফইউজে ও ডিইউজের পক্ষ থেকে ১৭ টা দাবি তুলে ধরেন।

১. সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
২. গত ১৬ বছরে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে, এসব খুনের বিচার করতে হবে
৩. কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা
করতে হবে।
৪. সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করতে হবে।
৫. দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক দিবকে, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবি টেলিভিশনসহ বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিতে হবে।
৬. সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
৭. অবিলম্বে ইন্টারনেট চালু করতে হবে।
৮. গণমাধ্যমের উপর থেকে সকল প্রকার চাপ তুলে নিতে হবে। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
৯. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল মামলা তুলে নিতে হবে।
১০. গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বৈষম্য দূর করতে হবে। ভুয়া সার্কুলেশন দেখিয়ে বিজ্ঞাপনের টাকা লুট বন্ধ করতে হবে।
১১. অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গণ খুলে দিতে হবে।
১২. আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর বল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতিবাদকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. গণহত্যা ও গণগ্রেফতার বন্ধ করতে হবে এবং কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে।
১৪. মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
১৫. নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূসের উপর বিচারিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
১৬. গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করতে হবে।
১৭. একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে হত্যা, ছাত্র হত্যা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বল প্রয়োগ বন্ধ, ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন- নিপীড়ন বন্ধ করতে করতে হবে। দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, লুটেরাদের বিচার করতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ আকন্দ, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলমসহ আরো অনেক সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *