তফসিল ঘোষণার পর আনন্দ মিছিল করবে আওয়ামী লীগ
ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা এবং জোট প্রশ্নে আবারও সময় হলেই সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, দেশ, জনগণ ও পার্টির জন্য যা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রেসিডিয়ামের পর কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটিও নির্বাচন এবং জোট প্রশ্নে জিএম কাদেরকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করলো। তারই জবাবে এমন মন্তব্য করেন জিএম কাদের। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) আইডিইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির নির্বাহী কমিটি ও জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন মন্তব্য করেছেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে কি না তা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে নানাভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাই, তখনই পিছুটান আসে কিন্তু সরকার দল ভাঙতে পারছে না। আমার অনুরোধ, যে সিদ্ধান্ত নেব, সবাই সে সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন হয়তো সবার মতামতের প্রতিফলন নাও হতে পারে। রাজনীতিতে আবেগের মূল্য দিলে পথভ্রষ্ট হতে হবে, বাস্তবতাকে মূল্য দিতে হবে।”
রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে জেলা পর্যায়ের প্রায় ৬৫ জনের মতো নেতা বক্তব্য রাখেন। তারা প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না করার পক্ষে কথা বলেন। তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি। আওয়ামী লীগ কোন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি, তাদের বিশ্বাস করা যায় না। বেশ কয়েকজন নেতা সরাসরি বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের পক্ষেও মত দিয়েছেন।
জেলা নেতাদের বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেছেন, আজকে দেশ একটি জটিল সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না! নির্বাচনে অংশ নিলে কোনো জোটে যোগ দেবে কিনা। এসব প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি পার্টির চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা দিতে চান? জবাবে সকলেই হাত উঁচিয়ে সমর্থন জানান বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, জিএম কাদের তার বক্তৃতায় কোন সিদ্ধান্ত জানাননি। সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য আরও সময় নিয়েছেন। সময় হলেই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত জানাতে চেয়েছেন। বক্তৃতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের চিঠির প্রসঙ্গে তুলেছেন। সেই চিঠিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে ভিসানীতি প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। আমরা কি সেই দায় নেবো!
জিএম কাদের তার বক্তৃতায় নির্বাচনে গেলে কি হবে। না গেলে কি হবে এমন প্রশ্ন রেখেছেন নেতাদের কাছে। তখন অনেকেই স্লোগান দেন, দালালি না রাজপথ? অন্যরাও জবাব দেন স্লোগান গলা মেলান, রাজপথ, রাজপথ। জিএম কাদের সংলাপে বেশি জোর দিয়েছেন।
পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্ব রূদ্ধদ্বার সভাটি বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়, শেষ হয় বিকেল সোয়া ৫টায়। সিনিয়র নেতারা প্রায় সকলেই উপস্থিত হন। তবে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদকে অনুপস্থিত থেকেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টিতে মোটা দাগে দু’টি ধারা বিদ্যমান, একটি অংশে রয়েছেন যারা নিয়মিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন হচ্ছেন। ভবিষ্যতেও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরেকটি বড় অংশ রয়েছে যারা জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বে রয়েছেন। তৃণমূলের নেতারা অনেকেই বঞ্চিত কেউ কেউ নানাভাবে হয়রানির শিকারও হয়েছেন। তাদের ভাবনা এক রকম। আবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভাবনা অন্য রকম, তারা জয় পরাজয়ের হিসেব কষে সিদ্ধান্ত নেন। কোন জোটে গেলে কি হতে পারে সেটিও মাথায় রেখে ছক কষেন। এমনও অনেকে রয়েছেন যারা ২০১৪ এবং ২০১৮ কোন ফর্মুলায় নির্বাচনেই বেশি আগ্রহী। যাতে তাদের জয় সহজ হয়।
২০১৪ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করার পর হঠাৎ করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু বড় একটি অংশ এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে থেকে যান। এবারও সে রকম দৃশ্য চিত্রায়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। যে কারণে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চান জিএম কাদের।
যে কোনো দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আসতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তত্বাবধায়কের দাবিতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দাবি আদায়ে হরতাল অবরোধসহ টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল এখন পর্যন্ত অবস্থান পরিষ্কার করেনি।
৪ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আমরা এখন নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আমরা এখনও জানি না দেশের পরিস্থিতি কি হবে। তবে সময় এলে সিদ্ধান্ত নেবো, নির্বাচনে অংশ নেবো কিনা। যতক্ষণ ঘোষণা না দিয়েছি, ততক্ষণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আছি।
জাতীয় পার্টির নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর। নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করতে না পারায় দুই দফায় সময় নেওয়া হয়েছে ইলেকশন কমিশন থেকে। বিশাল আকারের নির্বাহী কমিটির একটি মাত্র বর্ধিত সভা হয়েছে। ১৪ নভেম্বর প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।