আন্তর্জাতিক

কানাডাগামী সিলেটের যাত্রীদের আটকে দেয়ায় লিগ্যাল নোটিশ

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ থেকে কানাডাগামী বাংলাদেশ বিমানের সিলেটের ৪৫ জন যাত্রীকে ফ্লাইট না দেওয়ার ঘটনায় কয়েকদিন থেকে দেশজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদিও শুরু থেকেই গণমাধ্যমে ৪২জন কানাডাগামী যাত্রীকে অফলোড করা হয়েছে বলে প্রকাশিত হয়। তবে তা ছিল ৪৫জন।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি জানাজানি হয় ১২ নভেম্বর। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেশবিদেশে।বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নানা-প্রশ্ন দেখা দেয়।বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলে ঘটনার এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার (১৪নভেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৪নভেম্বর) কানাডাগামী যাত্রীদের বিমান থেকে অফলোডের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল উদ্দিনকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী কাজী মোশাররফ রাশেদ।

নোটিশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা ও অন্যায়ভাবে, বেআইনি ও বিনা অধিকারে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের পক্ষে মানহানি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে, নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ সিলেটের পক্ষে এ লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন অ্যাডভোকেট কাজী মোশাররফ রাশেদ।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডাগামী ৪২ জন যাত্রীকে আটক করে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠিছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই দিনে কর্মরত বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারী। অথচ তারা প্রত্যেকেই কানাডার বৈধ ভিসা নিয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের তাদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঢাকায় এসে ট্রানজিটে লাউঞ্জে টরেন্টোগামী বিমানের কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষারত ছিলেন। ওই যাত্রীদের ফেরত প্রদানের কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে যে আমন্ত্রনপত্রের মাধ্যমে তারা ভিসা পেয়েছেন সেটি ছিল ভুয়া। এ ছাড়া বলা হয়েছে ভিসা প্রাপ্তদের বেশিরভাগ এর আগে দেশের কোথাও বাইরে বেড়াতে যাননি। এটা তাদের প্রথম সফর। অথচ কানাডা হাইকমিশন ইতিপূর্বে ৪২জন যাত্রীর সংশ্লিষ্ট ভিসা আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্রটি বিশ্বাসযেগ্য বলে মনে করেই প্রত্যেককে ভিসা ইস্যু করে।

লিগ্যাল নোটিশ প্রদানকারী অ্যাডভোকেট কাজী মোশাররফ রাশেদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে, আশা করছি আগামীকাল বিমান চেয়ারম্যান নোটিশটি প্রাপ্ত হবেন। ৭ দিনের মধ্যে কারণ দশার্নোর কথা বলা হয়েছে, অন্যথায় ৪২ জন যাত্রীকে হয়রানি ও মানহানী এবং অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেওয়ানী ফৌজদারি আদালতে এমনকি উচ্চ আদালতে বাংলাদেশ সংবিধানের এর আর্টিকেল ১০২ মোতাবেক মোকদ্দমা দায়ের করিতে বাধ্য হবো।

অপরদিকে, কানাডাগামী ফ্লাইটের ৪৫ যাত্রীকে অফলোডের ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার গণমাধ্যমে প্রেরিত বক্তব্যে জানান, বিমানের সিলেট স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ যাত্রীদের ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখতে পান ৪৫ জন যাত্রী একই ব্যক্তির আমন্ত্রণ পত্রের মাধ্যমে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে কানাডা যাচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ডকুমেন্টসমূহ পর্যালোচনা করে সন্দেহ হওয়ায় সিলেট স্টেশন থেকে যাত্রীর ডকুমেন্ট ঢাকাস্থ পাসপোর্ট কন্ট্রোল ইউনিটে (পিসিইউ) পাঠানো হয়।

উক্ত ইউনিট ডকুমেন্টসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দিল্লিস্থ কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির (সিবিএসএ) কাছে পাঠালে প্রথমে তারা জানায় সিবিএসএ এর সিস্টেমে যাত্রীর তালিকায় যাত্রীর তথ্য সঠিক রয়েছে। ফলে সিলেট থেকে যাত্রীদেরকে বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করা হয় এবং যাত্রীগণ ঢাকায় পৌঁছান। ইতোমধ্যে কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি থেকে আবার জানানো হয় যাত্রীদের আমন্ত্রণ পত্রের তথ্যের সঙ্গে থাকার (আবাসন) বিষয়ে সিস্টেমে গরমিল রয়েছে। যাত্রীদের আমন্ত্রণপত্রে হোটেলে থাকার কথা থাকলেও যাত্রীদের কাছে ভাড়া বাসার ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। কানাডিয়ান আইন অনুযায়ী একটি রেন্টেড হাউজে ৪৫ জন যাত্রী থাকার কোনো নিয়ম নেই এবং তা Fire code violation বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

পরে যাত্রীদের ডকুমেন্টসমূহ ও কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির বার্তা পর্যালোচনা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ৪৫ জন যাত্রীকে ৭ নভেম্বর টরন্টো ফ্লাইট থেকে অফলোড করা হয়।

তিনি আরও জানান, ঢাকাস্থ পাসপোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) এর মাধ্যমে যাত্রীবৃন্দের তথ্যাদি সিবিএসএ এর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সিবিএসএ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে উল্লিখিত যাত্রীদের ভিসা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের পর সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের ইমেইলে সিদ্ধান্ত জানাবে।

এ ঘটনার পর যাত্রীদেরকে হোটেল অফার করা হলে তারা হোটেলে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টরন্টো ফ্লাইটে না পাঠানোর বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হলে তারা বিষয়টি অনুধাবন করেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন থেকে তাদের বহির্গমন সিল বাতিল করে ব্যাগেজ বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং যাত্রীগণ নিজেদের মতো এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন।

তিনি আরও জানান, যাত্রীর কাছে যথাযথ ডকুমেন্ট না থাকলে বা এ ধরনের ভায়োলেশনের জন্য কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যাত্রীপ্রতি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে ৩২০০-২০,০০০ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করতে পারে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *