মহাসড়কে রিকশা আটকাচ্ছেন ওরা কারা?
ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা। বিভিন্ন সময়ে এ সকল রিকশা আটকিয়ে হাইওয়ে থানায় নিয়ে যায় হাইওয়ে থানা পুলিশের সদস্য এবং সাদা পোশাকের কিছু ব্যক্তি। প্রশ্ন উঠেছে এই সাদা পোশাকধারীদের নিয়ে, কারা এরা?
তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে সাদা পোশাকে এমন কেউ তাদের সদস্য নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ সাদা পোশাকের এ সকল ব্যক্তিরা মহাসড়ক থেকে রিকশা আটকিয়ে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সমঝোতাকারী হিসেবে কাজ করে। রিকশা চালকের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়ে রিকশা ছেড়ে দেওয়ার কাজটি করে থাকেন তারা।
সরেজমিনে সোমবার (২৩ অক্টোবার) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকাটিতে প্রায় শতাধিক অবৈধ রিকশা মহাসড়ক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। সড়কে চলছে অটোরিকশা। ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি বাইপাইল মোড়ে থাকা সত্ত্বেও তাদের সামনে দিয়েই চলছে এ সকল অবৈধ বাহন। মহাসড়কে চললে এসকল অবৈধ ৩ চাকার বাহন আটকে জরিমানাসহ চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিয়ম থাকলেও এ ধরনের তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পুলিশ সদস্যদের। বেশিরভাগ রিকশাই চলছে। তবে ৪-৫টি অটোরিকশা পুলিশ বক্সের পাশে রেকারের সামনে আটকে রাখতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে সাদা পোশাকের ব্যক্তিদের মাধ্যমে রিকশা আটকান। পরে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিয়ে রিকশা ছেড়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশাচালক বলেন, পুলিশ সঙ্গে যে সোর্স থাকে সে রিকশা আটক করে পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। পরে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। টাকা দিলেও কোনো রশিদ দেয় না। সোর্সদের কাজই এটা।
মহাসড়কে এ সকল রিকশা চালানো অবৈধ জানালে তিনি বলেন, সবাই চালায়, পেটের দায়ে আমরা বাধ্য হয়েই রিকশা চালাই। পুলিশ যদি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো তাহলে আমরা চালাইতাম না। আমাদের চলাচলের জন্য সড়কের পাশ দিয়ে যদি লাইন করে দেওয়া হতো তাইলে আমরা সেখান দিয়ে চালাতাম। হাজার হাজার রিকশা চলে, তার মধ্যে প্রতিদিন ২০-৩০টা আটকায়। মাঝে মাঝে এর বেশিও আটকায়।
মহাসড়কে রিকশা চালকদের কাছে অবৈধভাবে টাকা গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটি সভাপতি খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, একজন রিকশাচালক অত্যন্ত দুঃখ দুর্দশার মধ্যদিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করেন । অথচ এই চালকদের কাছ থেকে রেকার বিলের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, প্রতিবাদ করলে শারীরিক নির্যাতন, মিটার ভাঙা হচ্ছে, ব্যাটারি খুলে নেওয়া হচ্ছে আবার মামলা দিয়ে জেলে দেওয়া হচ্ছে। রিকশা চালকরাও তো মানুষ তাদেরও তো আয়ের একটা উৎস তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে রিকশা চালকরা বাধ্য হয়ে চলেন। যাত্রীরা তাদের পরিবহন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় রিকশা ব্যবহার করে থাকেন। যাত্রীরাই বাধ্য করেন রিকশা চালকদেরকে মহাসড়ক দিয়ে গন্তব্য স্থানে নিয়ে যেতে। জরিমানা করা সমাধান নয়। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে রিকশা চালকদের জন্য পৃথক একটি লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে আমরা এই দাবি সংশ্লিষ্ট মহলে জানিয়েছি। তবে আমাদের দাবির বাস্তবায়ন হয়নি।
সাদা পোশাকে রিকশা আটক করেন এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মহাসড়কে রিকশা চললে আমরা আটকিয়ে স্যারদের কাছে নিয়ে যাই। স্যাররা জরিমানা করেন। আরও কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে গাড়িতে স্যার আছেন তাকে জিজ্ঞেস করেন।
ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা শেষ করে তার দেখিয়ে দেয়া পুলিশের গাড়ির দিকে যেতে যেতেই গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়।
এ বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবুল হাসান বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের আগে কি হয়েছে জানি না। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে এরকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। কোন অভিযান থাকলে আমি নিজে থাকি গাড়িতে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।