শেকৃবি কৃষি অনুষদের যত সমস্যা, সমাধানে দীর্ঘসূত্রিতা
ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা ক্লাসরুম গুলোর অবস্থা শোচনীয়। প্রায় ১০০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্লাসরুম গুলোর কোনোটিতেই নেই সাউন্ড সিস্টেম। এছাড়াও অনুষদটিতে নেই পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত সাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২ শতাধিক শিক্ষার্থীর কৃষি অনুষদে এত অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তবে এসব সমস্যার সমাধান প্রশাসন পরিকল্পনায় রেখেছে এবং দ্রুতই তার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় শেকৃবি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীনতম অনুষদ ভবন কৃষি অনুষদ। ভবনটি তে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ক্লাসের জন্য রয়েছে ৭ টি শ্রেণি কক্ষ। এছাড়াও প্রতিটি বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনার জন্য রয়েছে ১৬ এর অধিক শ্রেণি কক্ষ। তবে ভবন পুরাতন হওয়ায় অনেক ক্লাসরুমের সিলিং থেকে খসে পড়ছে সিমেন্ট। এর ভেতরেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
তাত্ত্বিক ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রায় ১০০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্লাস সংখ্যা ৭ টি। যার একটিতেও নেই কোনো সাউন্ড সিস্টেম এর ব্যবস্থা। এছাড়াও শ্রেণীকক্ষে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদ্যুতিক বাতি।
শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকগণ কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল ফয়েজ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “আমাদের ক্লাসরুমগুলো একটু বড় এবং বেশি শিক্ষার্থী থাকে। এজন্য ক্লাসরুমগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম থাকাটা খুব প্রয়োজন। আমরা যে বিষয়গুলো পাঠদান করে থাকি, অনেক সময়ই পেছনে থাকা শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিতে পারে না। এছাড়াও আমাদের দীর্ঘসময় উচ্চস্বরে লেকচার দিতে হয়। এতে শিক্ষকদেরও অসুবিধা হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ না করে দিতে পারলে পাঠদান ফলপ্রসূ করা কঠিন। ক্লাসরুম গুলোতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টেরেও অনেক সময় সমস্যা করে থাকে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, অনুষদ ভবনে ৭ টি শ্রেণি কক্ষের জন্য রয়েছে একটি খাবার পানির ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে সেটিও নষ্ট থাকে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ছোট্ট একটি কমন রুম ও একটি ওয়াশরুম। অন্যদিকে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র দুইটি ওয়াশরুম। ১২ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ভবনে মাত্র একটি খাবার পানির ব্যবস্থা ও তিনটি ওয়াশরুম কিভাবে যথেষ্ট হয় সে নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি খুব গরমের ভেতরে অস্বস্তিকর পরিবেশে আমাদের ক্লাস করতে হয়েছে। পানির জন্য একটা ফিল্টার আছে সেটিও মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও ওয়াশরুম এর ব্যাবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রয়োজন হলে যেতে হয় তৃতীয় তলায় আবার তা যদি মোটামুটি স্বাস্থ্যসম্মত হতো তাহলেও ভালো হতো।
কৃষি অনুষদের কোনো তাত্ত্বিক শ্রেণীকক্ষেই নেই শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। ফলে অতিরিক্ত গরমের মাঝেও অস্বস্তিকর পরিবেশেই নিয়মিত ৯ টা থেকে ৪ টা অবধি ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
পাশাপাশি ভবনটি দীর্ঘদিনের হওয়ায় কয়েকটি ক্লাসরুমের সিলিং থেকে সিমেন্ট খসে পড়ছে। কৃষি অনুষদের একজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালীন সময় ক্লাস রুমের ছাদের অংশ খসে পড়ে। কোনো শিক্ষার্থী ঐ স্থানে না বসায় আহতের ঘটনা ঘটেনি।
অনুষদের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগ থেকে মূল ভবনে আসার পথের টিন প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলে ভিজেই আসতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এর স্থায়ী কোনো সমাধান করাও হয় না কখনো। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই।
এ বিষয়ে শেকৃবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড অলোক কুমার পাল বলেন, ” আমরা দ্রুতই ক্লাস রুমে সাউন্ড সিস্টেম এর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ বা ৪ টি ক্লাস এ তা করা হবে। এছাড়াও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করার চিন্তাও রেখেছে। কৃষি অনুষদ এ ওয়াশরুম বৃদ্ধিরও চেষ্টা করছি। এজন্য কয়েকটি বিভাগের সাথে দ্রুতই বসবো আমরা।”
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।