আন্তর্জাতিক

রাজনীতিকদের ভাবনার কেন্দ্রে জনগণ ও জনস্বার্থ নেই: ড. বারকাত

ডেস্ক রিপোর্ট:  

দেশে রাজনৈতিক দলগুলির ভাবনার কেন্দ্রে ‘জনগণ ও জনস্বার্থ’ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সৃষ্ট জনগণের সংকট লাঘবে সরকারকে ও অবরোধে কর্মহীন হওয়া মানুষদের দায় অবরোধ আহ্বান করা রাজনৈতিক দলগুলিকে নেওয়ার আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশের চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। 

বার্তা২৪.কম: আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে গতকাল (বুধবার)। একজন রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হিসেবে এই নির্বাচনকে ঘিরে বড় রকমের কি পরিবর্তন দেখছেন?

ড. আবুল বারকাত: দেশের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে বড় একটা জায়গা, সেইটা যে ভেতরে ভেতরে প্রকট হচ্ছে, মূলধারার রাজনীতিও এ নিয়ে কিছু বলে না। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তথাকথিত বাম নেতারাও মিটিং করেন। মনে হচ্ছে অবস্থাটা এমন যে, সবাই সুযোগ খুঁজছে। কিসের সুযোগ? আমাদের রাজনীতি প্রবলভাবেই ধর্মাশ্রয়ী হয়ে যাচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। এ দেশের মানুষ এমনিতেই ধর্মভিরু সেটা সমস্যা নয়। আমি অনেক আগে থেকে বলেছি-ধর্মভিরুতা থেকে ধর্মান্ধতার দিকে কেউ নিয়ে চলে যাচ্ছে কিনা সেটা ভেবে দেখা উচিত। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ-সুশীল সমাজ-বুদ্ধিজীবী-সাধারণ মানুষ সবারই ভাবা দরকার বিষয়টা। মোটা দাগে রাজনীতিতে এই পরিবর্তনটি উল্লেখযোগ্য।

বার্তা২৪.কম: এবারের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। দেশটির এই ভূমিকাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ড. আবুল বারকাত: প্রথম কথা হচ্ছে, দেশের রাজনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থা তা নিয়ে আমি অনেকভাবে ভেবেছি, কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করা গেল না?  হয়তো অবস্থাটা এমন হতো না যদি বিদেশিরা…বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এইভাবে হস্তক্ষেপগুলো না করতো। নির্বাচন নিয়ে এরা যা করলো এবং এখনও করছে, এবং করতেই থাকবে। এটা কোন একটা জায়গায় তো তাদের দিক থেকেই বন্ধ করা দরকার ছিল। সেই বুদ্ধি পরামর্শ তো দেওয়ার আমরা কেউ নই। কিন্তু তারা কি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিয়েছে? এটা তো খুবই অনৈতিক। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

বার্তা২৪.কম: কিন্তু তারা তো ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ রক্ষার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। সেটা তো সার্বজননীন চাওয়াই। তাহলে আপত্তিটা কোথায়…

ড. আবুল বারকাত: তারা মানবাধিকার আর গণতন্ত্র নাম দিয়ে যা বলে আসলেই কি মানবাধিকার আর গণতন্ত্র তাদের বিষয়? আমার মনে হয় না! আমার কাছে কেন যেন মনে হয় তাদের আসল বিষয় সম্পদ। বাংলাদেশের সম্পদ আর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ-সেগুলো হচ্ছে প্রধান বিষয়। প্রধান বিষয়টা তো কেউ বলেই না। জনসাধারণও সেটা সামান্যই জানেন। জনগণ জানে, পিটার হাস বলে একজন লোক আছে সে খুব মানবাধিকার আর গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলছেন, খুব দৌঁড়াদৌড়ি করছে। ওরা যদি সত্য কথাটা না বলে… সত্য কথাটা তো মানুষকে জানানো দরকার। যে ওরা এই কাজগুলো করছে অন্য কারণে। এটাও কোনভাবে জানানো হয়নি। কোন সংবাদপত্রের শিরোনামে আমি দেখিনি। এটা বলে না যে, চীনের ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশে অনেক বেশি হয়ে গেছে। এই নিয়ে সরকার না বললেও অন্যান্য জায়গা থেকেও যে খুব একটা কথা বলা হয় না। এটাই বোধহয় আমার কাছে প্রথম ও প্রধান কথা।

বার্তা২৪.কম: রাশিয়া- ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে ধুঁকতে থাকা বিশ্ব অর্থনীতির ধাক্কা তো অনেক পূর্বেই লেগেছে দেশে। এর মাঝেই সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি কি ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. আবুল বারকাত: দেশে অব্যাহত ঘুষ-দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাঝে এই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিশ্চিতভাবেই নতুন করে দারিদ্র পুনরুৎপাদন করবে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলো চরম সংকটে পড়বেন। ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থায় থাকাদের শোচনীয় অবস্থা হবে। বিশেষ করে বিদ্যমান সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি সেখানে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি এই মূল্য ২০ শতাংশ হারে বাড়বে। এতে সার্বিকভাবে চাপে পড়বেন বৈষম্যের শিকার মানুষগুলোই।

আমি তো মনে করি, সাধারণ মানুষের এই সংকটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে আর অবরোধের ফলে কর্মহীন হওয়া মানুষদের দায়িত্ব অবরোধ ডাকা দলগুলিকেই নিতে হবে। কিন্তু খুব স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাজনৈতিক দলগুলির ভাবনার কেন্দ্রে জনগণ ও জনস্বার্থ নেই। এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে খুবই অশুভ ইঙ্গিত।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *