আন্তর্জাতিক

কেন বাংলাদেশে আসছে আরো ১৫টির বেশি এয়ারলাইন্স

ডেস্ক রিপোর্ট: চোখ ধাঁধানো তৃতীয় টার্মিনালকে কেন্দ্র করে পাল্টে যেতে শুরু করেছে দেশের বিমান চলাচল খাতের চেহারা। গত অক্টোবরে উদ্বোধনের পর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নান্দনিক এই টার্মিনালকে ঘিরে বিশ্বের ১৫টির বেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এর তুলনায় দ্বিগুনের বেশি আয়তনের তৃতীয় টার্মিনালকে ঘিরে যে এয়ারলাইন্সগুলোর আগ্রহ তৈরি হবে তা আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তা সত্যি হলো। টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ মিলিয়ে আয়তন এক লাখ বর্গমিটার। আর তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার।

টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হলেও যাত্রীরা এর সব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন আগামী বছরের ডিসেম্বরে। আগের দুটি টার্মিনাল দিয়ে বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আর এই টার্মিনাল দিয়ে এক কোটি ৬০ লাখ যাত্রীকে সেবা প্রদান করা যাবে। যাত্রীদের ব্যবহারের আগেই ২০২৪ সালের এপ্রিলে কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করা যাবে। তৃতীয় টার্মিনালের কারণে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৬৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা সম্ভব হবে। আগে যা ছিল অর্ধেকেরও কম।

সেই সাথে টার্মিনালের মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার, ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার, ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার ও ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের সুবিধা বিশ্বের সব খ্যাতনামা এয়ারলাইন্সকে এখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহী করে তুলছে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক নিরীক্ষা বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো প্রায় এক কোটি আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিচালনা করেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৮৫ লাখের কিছু বেশি। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আকাশপথের যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুন হবে।

এই পরিসংখ্যানও এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল যাত্রী পরিবহনের সুযোগ তৈরি হবে তা নিতে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠছে।
গারুদা এয়ারলাইন্স, কোরিয়ান এয়ার, জিন এয়ার, ইরান এয়ার, ইরাকী এয়ার, উইজ এয়ারের মতো এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালাতে চায়। এছাড়াও বন্ধ হয়ে যাওয়া পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ), ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আবারো ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালাতে চায়। বর্তমানে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ার এশিয়া, এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই, এয়ার এরাবিয়া আরও সংখ্যা বাড়াতে আগ্রহী। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে ইজিপ্ট এয়ার।

বর্তমানে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে ৭৫ শতাংশ মার্কেট রয়েছে। আর দেশীয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ারের কাছে রয়েছে ২৫ শতাংশ মার্কেট।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষে যেসব এয়ারলাইন্সের কাছে শত শত উড়োজাহাজ রয়েছে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়বে। তবে যাত্রী সাধারণের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিদেশি এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে দেশীয় এয়ারলাইন্সের মার্কেট শেয়ার ২০ শতাংশেরও নিচে নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারীর পর বিশ্বের বৃহৎ এয়ারলাইন্সসমূহ একের পর এক রুট চালু ও চলমান রুটসমূহে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং এই ব্যবসাকে আরো বেশি লাভজনক করতে নতুন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে এগোনোর বিকল্প নেই।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত অর্ধবছরে এমিরেটস এয়ারলাইন রেকর্ড পরিমান ২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩৪ শতাংশ বেশি। উল্লেখিত সময়ে অন্যান্য অপারেটিং আয়সহ এমিরেটস ১৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে এমিরেটস এয়ারলাইন ২ কোটি ৬১ লাখ যাত্রী পরিবহণ করেছে যা পূর্ববর্তী একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি।

এই হিসাব থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে যাত্রী সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বৃহৎ এয়ারলাইন্সগুলো।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলছেন, দেশের স্বার্থ তারা অবশ্যই দেখবেন। তবে বিমান চলাচল খাতের বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশীয় এয়ারলাইন্সের সক্ষমতার যেখানে শূন্যতা সেখানে অন্যদেরকে সুযোগ দেওয়া হবে।

বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩৪টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *