আন্তর্জাতিক

লালমনিরহাটে বন্যার আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাটে প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্কে থাকেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। এই ভয়াল থাবায় সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় প্রায় কয়েক হাজার পরিবার। তিস্তায় পানি বাড়লে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। এমন অবস্থায় তিস্তার স্থায়ী ভাঙন ঠেকাতে তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশার আলো দেখলেও বাস্তবায়নের অপেক্ষায় তিস্তা পাড়ের মানুষ।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৯ টার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা ডালিয়া পয়েন্টে পানির সমতল ৫১.৪২ মিটার যা বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নিচে।

নদী ভাঙনের পরে নিজের সবটুকু হারিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে তিস্তায় জেগে ওঠা কোনো নতুন চরে। 

প্রতিবছর বন্যায় লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, ফকিরপাড়া, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দেখ অপরদিকে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগা খড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি এবং গয়াবাড়ি ইউনিয়নের একাংশের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী ও বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

জানা যায়, এতে অনেক পরিবার নদী ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন। বারবার নদী ভাঙনের কবলে পড়া হাজারও মানুষ ব্যর্থ হয়ে নদীতে জেগে ওঠা নতুন কোনো চরে আশ্রয় নেয়। এতে বন্যার পানিতে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ কিংবা বাঁধ নির্মাণ করলেও বন্যার ভাঙন রোধে সেটি সাময়িক রক্ষা দিলেও পরে ভাঙনে ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষ। এসময় আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সকল সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এতে রক্ষা পেতে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তিস্তা পাড়ের মানুষের।

সিন্দুর্না ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা আইরিন আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে বাড়ি ঘর তৈরি করি, হঠাৎ করে বন্যা আসলে ঘরবাড়ি সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের তিস্তা পাড়ের মানুষের কষ্টের কোনো শেষ নেই। ছেলে মেয়েকে নিয়ে যখন একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি তখনই তিস্তায় বন্যা দেখা যায়। বারবার নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করতে হয়। আমাদের জীবন শুধু নদীর চরেই একবার এখানে আরেক ওখানে ঘরবাড়ি তৈরি করতে হয়। বন্যার পরে সবকিছু হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করি আমরা। আমরা ত্রাণ চাই না, দ্রুত মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।

তিস্তা পাড়ের আরেক বাসিন্দা আলাউদ্দিন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, বর্ষাকালে সবসময় ভয়ে থাকতে হয়। এখন যে বন্যা শুরু হয় আর বন্যা শুরু হলে আমাদের সবকিছু ভেঙে যায়। এতে আমরা ঘরবাড়িসহ পানিবন্দী হয়ে পড়ি। আমার বিয়ের পরে কয়েকবার এখানে পানিবন্দীর ভয়াবহ দেখেছি। পানি উঠলে সন্তানের পড়ালেখা স্কুলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যায়। তাই আমরা এটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাই।

প্রসঙ্গত, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ভারত কিংবা চীনের আশায় না থেকে পদ্মা সেতুর মতো নিজের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাসহ ৬ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *