আন্তর্জাতিক

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন: থাকছে যেসব সুবিধা

ডেস্ক রিপোর্ট: নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও বিশ্বের বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত দেখতে প্রতিবছর দেশি বিদেশি ৫০ লাখের বেশি পর্যটক আসে দেশের দক্ষিণ পুর্বাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারে। তবে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কক্সবাজারে পর্যটকদের যাতায়াতের মাধ্যম ছিল পাহাড়ের আকাবাঁকা ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক পথ অথবা ব্যয় বহুল বিমান ব্যবস্থা।

এবার পর্যটকদের নিরাপদে কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলবে এ রুটে। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসনামল, পাকিস্তান নিপীড়ন ও দেশ স্বাধীনের পরবর্তী সময় মিলে ৯ দশক পর রেল যুগে প্রবেশ করেছে কক্সবাজারবাসী। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত আইকনিক রেলস্টেশন।  

বিশ্ব মানের কী কী সুযোগ সুবিধা থাকছে কক্সবাজারের আধুনিক এই রেলস্টেশনে……

২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের ৬ তলা আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটিতে প্রবেশ করতেই দেখ মিলবে দৃষ্টি নন্দন আগমন লাউঞ্জ। সেখান থেকে স্টেশনের বাইরে দিকে তাকালেও বাহ্যিক সৌন্দর্য আপনাকে শিহরিত করবে। এছাড়া প্রবেশের পর বামদিকে তাকাতেই মিলবে টিকেট কাউন্টার, এবং তার পাশেই মিলবে লকার সুবিধা। এছাড়া ডাকঘর, এটিএম বুথ সেবা, ঔষধালয় ও বিভিন্ন তথ্যের জন্য রেলওয়ে পরিষেবা অফিস থাকবে লেভেল-১ এ। 

দৃষ্টি নন্দন আগমন লাউঞ্জ 

লেভেল-১ এর পাশাপাশি লেভেল-২ অর্থাৎ ২য় তলায়ও মিলবে লকার সুবিধা। টিকেট সংগ্রহ শেষে চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে ২য় তলার বহির্গমন দিয়েই যেতে হবে প্লাটফর্মে । এছাড়া দ্বিতীয় তলায় নামাজের স্থান, ক্যাফে ও বিক্রয় কেন্দ্রের সুবিধা রাখা হয়েছে।

খাবার ওষুধ, নামাজের স্থান ও বিশ্রামের স্থান তো মিলেই গেলো প্রথম ও দ্বিতীয় তলায়, তাহলে ৩য় তলায় কী আছে ভাবছেন নিশ্চয়ই?

স্টেশনের তৃতীয় তলায় আছে শপিংমল 

আইকনিক এই রেল স্টেশনের তৃতীয় তলায় আছে শপিংমল। সেখানে ঘুরাঘুরি শেষে পছন্দ মত কেনাকাটা সেরে নিতে পারবে পর্যটকরা। এছাড়া রেস্টুরেন্টও আছে সেখানে।

৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল ব্যবস্থা আছে ৪র্থ তলায়। খাবার গ্রহণের জন্য সেখানে রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক ডাইনিং ব্যবস্থা।

 

আরো পড়ুন: ‘আঁর বাপ- দাদা কেউ ভাবে নো এডে ট্রেন আঁইব’

 

পাশাপাশি পঞ্চম তলায় রেলওয়ে অফিস। সেখানে আছে উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট সেবা। আর স্বপ্নের এই রেলস্টেশনের ষষ্ঠ তলায় আছে মিলনায়তন।

পঞ্চম তলায় আছে উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট 

কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনের বাইরেও রয়েছে চমক। বহির্গমন লাউঞ্জসহ প্লাটফর্মে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি চলন্ত সিঁড়ি, এক প্লাটফর্ম থেকে আরেক প্লাটফর্মে যাতায়াতে আছে দৃষ্টি নন্দন ফুটওভার ব্রিজ। এছাড়া আধুনিক ৪টি প্লাটফর্ম আছে স্টেশনটিতে। গমন ও বহির্গমনের জন্য তৈরি হয়েছে পৃথক দুটি সড়ক। আছে গাড়ি পার্কিংয়ের পৃথক তিনটি বড় জায়গা। সব মিলিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অত্যাধুনিক রেলসেবার মতই কক্সবাজার রেলস্টেশন থেকে সেবা পাবে বাংলাদেশের মানুষ এমন প্রত্যাশা রেল কর্তৃপক্ষের। সেই সাথে এই রেলস্টেশন দেশের অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

 

আরো পড়ুন: দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি

 

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে।

এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিল, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুমসহ মোট স্টেশন থাকছে ৯টি।

এ ছাড়া ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং রয়েছে। পুরো প্রকল্পে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ২৪২টি কালভার্ট রয়েছে। হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *