‘বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত গণতন্ত্র-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা’
ডেস্ক রিপোর্ট: টানা দুইদিন বৃষ্টি বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। লোকালয় থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত থেকে দ্রুতগতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। সূর্যের আলো দিয়ে শনিবার সকাল শুরু। বৃহত্তর ফটিকছড়ির বন্যা প্লাবিত এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে সরে যাচ্ছে পানি। আজকে দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বন্যার পানিতে রাস্তা ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে সরজেমিনে দেখা যায়, বন্যা কবলিত গ্রামগুলো থেকে পানি নেমে যাওয়ায় মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। অনেকে ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র পরিষ্কার ও শুকানোর কাজ করছে। নাজিরহাট, সুয়াবিল, সুন্দরপুর ও পাইন্দং সহ প্লাবিত নিচু এলাকার ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। কারও থাকার ঘর, কারও আবার রান্না ঘর। কারও কারও পুরো ঘর বিলীন হয়ে গেছে বন্যায়। এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানেও পানি প্রবেশ করে ক্ষতি হয়েছে অনেক। অনেকের চাষের মাছ, মুরগির খামার ক্ষতি হয়েছে।
পানির স্রোতে ভেসে গেছে বাড়ি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ফটিকছড়ির ব্যবসায়িক কেন্দ্র বিবিরহাট বাজার। একই সঙ্গে উত্তর চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে গতি ফিরছে। সকালে কথা হয় সুন্দরপুর এলাকায় বাসিন্দা ননা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দুইদিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। ঘরের চারপাশে ছিল পানি আর পানি। অনেকে বুক সমান পানিতে এসে খাবার দিয়ে গেছে, এসব খেয়েই ছিলাম। রান্না হয়নি ঘরে। আজকে পানি কমে যাওয়ায় ঘরের জিনিসপত্র বের করে রোদে শুকাতে দিচ্ছি।
পানি কমতেই ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে বলেন বন্যাপ্লাবিত ছোট ছিলোনিয়ার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার কয়েকশ ঘর পানিতে ডুবে ছিল কাল। রাত থেকে পানি সরতে শুরু করলে অনেকের ঘরে ধসে গেছে। কারও দেয়াল ভেঙে গেছে। গ্রামের প্রায় রাস্তা ক্ষতি হয়েছে।
গ্রামীণ রাস্তায় গর্ত তৈরি হয়েছে হালদা পাড়ের বাসিন্দা এনাম ঘর হারিয়ে দুশ্চিন্তায়। কিভাবে কী করবেন! সব যেন শেষ তার। এনাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাঙা বাঁধ দিয়ে আমার ঘরের ওপর হয়ে পানি যাচ্ছে। হোটেলে কাজ করে কোনরকম ঘর চালাতাম, সেই ঘরটিও শেষ।
এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম বলেন, বন্যার কারণে চারদিন ধরে ব্যবসা বন্ধ। অনেকের দোকানের সব জিনিসপত্র ভিজে গেছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এখনি বলা যাচ্ছে না।
পানির নিচে নিমজ্জিত ঘরবাড়ি এদিকে হালদার পানি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের ওপর দিয়ে নাজিরহাট এলাকায় বেশ কয়েক জায়গায় সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ভাঙন ধরেছে।
বন্যায় ফটিকছড়িতে এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, অনেক জায়গা থেকে পানি নেমে গেছে।
বন্যার পানি নেমে জেগে উঠেছে রাস্তার ক্ষত তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে চেষ্টা করেছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন সরাসরি কাজ করছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি পুরোপুরি তালিকা না করে বলতে পারছি না।
স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার দুর্গত মানুষের জন্য আপনাদের দুই হাত ভরে সাহায্য এক অভাবনীয় মানবিক নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। উপজেলাটি একটি কৃষিভিত্তিক উপজেলা হওয়ায় নিয়মিতভাবে কোন ক্রেন এখানে পাওয়া যায় না। বড় বড় বোট নামানো এবং উঠানো নিয়ে অনেককেই কষ্ট পেতে হয়েছে। কেউ এখন ত্রাণ বিতরণ করতে হলে বোট আনতেই চাইলে ছোট এবং হালকা বোট আনলে ভালো হবে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।