আন্তর্জাতিক

আল শিফায় অস্ত্র পাওয়ার ভিডিওটি এডিট করা: বিবিসি

ডেস্ক রিপোর্ট: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালে অস্ত্র মজুদ এবং উদ্ধারের যে ভিডিওটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীরা ভাইরাল করেছে সেটি এডিট করা বলে মন্তব্য করেছে বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

আইডিএফ হাসপাতাল থেকে (কথিত) উদ্ধার করা যে গুটিকয়েক অস্ত্র দেখিয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই অ্যাসাল্ট রাইফেল বলে মন্তব্য করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এছাড়াও দেখা যায়, ব্যাগে যে পরিমাণ অস্ত্র ছিল তার চেয়ে বেশি অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিবিসির বিশ্লেষণে ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে বলে ওঠে এসেছে।

ভাইরালকৃত ভিডিওটিতে আরও দেখানো হয়, আল-শিফা হাসপাতালের এমআরআই মেশিনের পেছন থেকে কথিত উদ্ধারকৃত অস্ত্র দেখাচ্ছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক কর্মকর্তা। তারা দাবি করছে কোনোরকম এডিট ছাড়া সরাসরি ধারণ করা হয়েছে এই ভিডিও।

কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষক জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতালের এমআরআই মেশিনের পেছন থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের ব্যাগটি সাংবাদিক আসার কয়েক ঘণ্টা আগে স্কচট্যাপ দিয়ে প্যাঁচানো হয়েছিল। ভিডিওটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এটিকে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

এর আগে গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) গাজার সবচেয়ে বড় প্রধান এই হাসপাতালটিতে হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। হামলা চালানোর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি গ্রাফিকস ভিডিও প্রকাশ করে। সে ভিডিওতে দেখা যায়, আল-শিফার নিচে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিস্তৃত সুড়ঙ্গ ও কমান্ড সেন্টার রয়েছে এবং সেখান থেকেই হামলার পরিকল্পনা করে হামাস।

ইসরায়েলি বাহিনী কমান্ড সেন্টার খুঁজে বের করার বাহানায় আল-শিফায় বর্বর হামলা চালায়। হাসপাতালটিকে গণকবরে পরিণত করে কয়েকদিনের টানা হামলায়। অসহায় নবজাতক, শিশু এবং চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায় তারা। কিন্তু তারা হাসপাতাল হামলার কোনো শক্তিশালী প্রমাণ এখনও পর্যন্ত দেখাতে পারেনি বলে মন্তব্য করে বিবিসি। 

এই অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি দিয়ে সেখানে সশস্ত্র যোদ্ধাদের অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু এর মাধ্যমে হাসপাতালের নিচে হামাসের বিশাল কমান্ড সেন্টার থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যায় না বলে জানায় বিশ্লেষকরা। সামরিক হুমকির বিষয়টি প্রমাণ করতে না পারলে যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়বে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড এবং হাসপাতাল হামলা।

আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, হামলার আগে ইসরায়েল যে গ্রাফিকস ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল, সেটিতে দেখানো হয়েছিল হাসপাতালের অনেক নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার অবস্থিত। হয়ত তারা সেখানে এখনো পৌঁছাতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল যেসব প্রমাণ দেখানোর চেষ্টা করেছে সেগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র সন্দেহ থাকবে।

উল্লেখ্য, ভিডিওটির সত্যতা এবং হাসপাতালে হামাসের সামরিক অবকাঠামো না পাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলিদের ধারণকৃত এসব ভিডিও যদি এডিটেড প্রমাণিত হয় তাহলে তারা জেনেভা কনভেনশনের চুক্তি ভঙ্গ করেছে। 

জেনেভে কনভেনশন চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, হাসপাতাল যদি বড় কোনো সামরিক হুমকি না হয় তাহলে এটিতে হামলা চালানো যাবে না। উল্টো হাসপাতাল রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

হাসপাতালে হামলার কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার তদন্ত হবে। যদিও এসব তদন্ত এবং রায় প্রকাশের বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ তবুও এমন মিথ্যাচার ইসরায়েলের জন্য ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *