সারাদেশ

ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা: এনআইডি হাতে নিয়ে ভাইকে খুঁজছে আলমগীর

ডেস্ক রিপোর্ট: ভৈরব জংশনের অদূরে জগন্নাথপুর আউটার রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে অন্তত ২০০ মিটার দূরে ঢাকাগামী এগারসিন্ধু এক্সপ্রেসের দুটি বগি পড়ে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এসব ট্রেনের বগি। এছাড়া অদূরে আরও একটি ক্ষতিগ্রস্থ বগি রাখা আছে। এই বগি গুলোতেই ছিলো শতশত ঢাকাগামী যাত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসছে মালবাহী ট্রেন ও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এগারোসিন্ধু ট্রেনের ভয়াবহ চিত্রের বর্ণনা। চুরমার হয়ে যাওয়া এসব বগির নিচে পড়ে ছিলো মানুষের ক্ষত-বিক্ষত দেহ। কোন দেহে প্রাণ আছে আবার কোন দেহ নিথর। শুধু বগির নিচেই নয়, রেললাইনের দুই পাশেই টুকরো টুকরো হাত-পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো।

ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ি স্থানীয় রোকন মোহাম্মদের। সংঘর্ষের বিকট শব্দ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে এসে দেখেন, ‘মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে। মারাত্মক আহত অনেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে বাঁচার আকুতি করেছে। ভৈরবের স্থানীয় ভাষায় তিনি বলেন, ট্রেনের নিচে চাপা অনেককেই দেখেছি হাত নেই, পা নেই। অনেকেই এমন ছিলো যাদের কোমড় থেকে পা এবং বুক থেকে মাথা নেই। শুধু বুকটা পড়ে আছে লাইনের ধারে।’

এই ঘটনায় সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৮ জন নিহত এবং ৮০ জনের মতো আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত রোগীকে ঢাকা মেডিকেলসহ পঙ্গু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

ভৈরব উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ১৮ টি মরদেহ এসেছে। এর মধ্যে ৮ টি মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। মোট ৮০ জনের মতো আহত অবস্থায় এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। তাদের মধ্যে ২০ জনকে বেশি গুরুতর হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। অনেকেই স্থানীয় অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি আছে।

এ দিকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বগির বিভিন্ন অংশ কাটা হচ্ছে। ক্রেন দিয়ে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বগির বিভিন্ন অংশ।

ক্রেন দিয়ে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বগির বিভিন্ন অংশ। কী কারণে এই দূর্ঘটনা?

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে ঢোকায় এই দূর্ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্ব বিভাগের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ঢাকা থেকে আসা মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে ঢুকে পড়ে। যার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এরইমধ্যে চালক, সহকারী চালক এবং ট্রেনের পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলিম হোসেন শিকদার বলেন,”ঢাকা থেকে একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ভৈরব স্টেশনে ঢুকছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারসিন্দুর ট্রেনটি ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল। জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় এগারসিন্দুর ট্রেনের শেষের দুই-তিনটি বগিতে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। মূলত সিগন্যালের কোনো জটিলতার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল বিভাগ। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকা বিভাগীয় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকার বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা। এ ছাড়াও সদস্য হিসেবে থাকবেন বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লোকোমেটিভ, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এবং বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগেও একটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আরমান হোসেন, সিএসপি তুষার এবং চিফ মেডিকেল অফিসার আহাদ আলী সরকার।

বৃষ্টি মাথায় চলছে উদ্ধার কাজ

সাগরে নিন্মচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। ভৈরবে হওয়া বৃষ্টি আলাদা চ্যালেঞ্জ যোগ করেছে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের। তবে বৃষ্টি মাথায় চলছে উদ্ধার কাজ। রাত সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হওয়া ঝুম বৃষ্টি কিছুটা বিরতি দেয় রাত সাড়ে ১১টার দিকে। এরপর সাড়ে ১২ টা থেকে আবারও ঝড়ছে বৃষ্টি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *