গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু আজ, রয়েছে পেছানোর শঙ্কা
ডেস্ক রিপোর্ট: রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সাড়ে ৫০০ এরও অধিক শিশুর নিথর দেহ, হাসপাতালে গণকবর আর একটা ভূখণ্ডের স্মরণকালের সবথেকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে আজ থেকে যুদ্ধবিরতি হওয়ার কথা!
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা থেকে গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হবে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
তবে এ যুদ্ধবিরতি একদিন পিছিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গাজা উপত্যকায় অব্যাহত রয়েছে টানা ইসরায়েলি হামলা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু নাও হতে পারে। এমনকি যতক্ষণ পর্যন্ত যেসব জিম্মি মুক্তি পাবে তাদের নাম চূড়ান্ত না হচ্ছে ততক্ষণ যুদ্ধবিরতি হবে না।
এর আগের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের চলমান যুদ্ধ চার দিনের জন্য স্থগিত রাখা হবে। বৃহস্পতিবার থেকেই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে হামাস। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মধ্যে ৫০ জন নারী ও শিশুকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিপরীতে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে ১৫০ ফিলিস্তিনি নারী ও কিশোরকে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল সরকারি একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, কাতারে অবস্থানরত মোসাদ প্রধান জিম্মিদের চূড়ান্ত তালিকা পেয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। যাদের যুদ্ধবিরতির প্রথমদিন ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের তালিকা হাতে পেলেই নিশ্চিত হবে যুদ্ধবিরতি।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হতে দুই পক্ষেরই সমর্থন ও স্বাক্ষর লাগবে। যেটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হতে পারে। অন্যদিকে অপর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান জানিয়েছে, ‘বৃহস্পতিবারও যুদ্ধ চলবে।’
এ টালমাটাল যুদ্ধবিরতিতে কতটুকু দুর্ভোগ বাড়ছে গাজার?
যুদ্ধবিরতি মানেই যুদ্ধের শেষ নয় বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের ভাষ্যমতে সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে একেবারেই নির্মূল করার আগ পর্যন্ত তারা হামলা চালিয়ে যাবে। যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার দিনেও (বুধবার) তারা গাজা উপত্যকায় স্থল ও বিমান হামলা চালিয়েছে।
মূলত গাজার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফাসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল হামলায় অনেক বেসামরিক নাগরিক ও নবজাতকের মৃত্যুর কারণ হয়েছে ইসরায়েল। টানা দেড় মাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সাড়ে ৫০০ এর বেশি।
আত্মরক্ষার অযুহাতে এমন বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানোয় প্রভাবশালী কিছু দেশের পূর্ণ সমর্থন পায় দেশটি। কিন্তু ২ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের এমন হামলার সমালোচনা করে কঠোর হুশিয়ারি দেয়। ভারতও জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
জাতীয় পর্যায়ে হামাসের হাতে বন্দী থাকা জিম্মিদের মুক্ত করার চাপ এবং একইসাথে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে ইসরায়েল। এরই মধ্যে কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ৪ দিনের যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি এসব সংবাদমাধ্যমের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান তাজাচি হানেগবি জানিয়েছেন, শুক্রবারের আগে কোনো জিম্মিকে হামাস মুক্তি দেবে না। তাই যুদ্ধবিরতি অন্তত ১ দিন পেছানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান আরও বলেছেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তির আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে এবং অব্যাহতভাবে চলছে।’
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।