সারাদেশ

আ. লীগের মনোনয়নে বেশ কয়েকজন এমপি বাদ পড়েছেন: কাদের

ডেস্ক রিপোর্ট: দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের কাজ শেষে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বসেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এদিকে দলের টিকিট পেতে শেষ সময়ের দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত বর্তমান সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতাসহ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

তবে সবার দৃষ্টি এখন মনোনয়ন বোর্ডের দিকে।

নির্বাচনী এই ডামাডোলে আলোচনা চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ছয়টি আসন নিয়ে। এই জেলার ৬টি আসনের বিপরীতে নৌকার মাঝি হতে চান ৫০ জন। তাদের মধ্যে যেমন স্বামী-স্ত্রী আছেন, তেমনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেও কিনেছেন মনোনয়ন ফরম।

সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে। এই আসনের জন্যে সর্বোচ্চ ১৩ জন দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আর সবচেয়ে কম মনোনয়নপ্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে। এই আসনে মাত্র ৩ জন দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৫ আসন নিয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তার নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে আসনটি শূন্য হয়। পরে সরকারি সহায়তায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আব্দুস সাত্তার। তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে ৫ নভেম্বর উপনির্বাচন হয়। সেখানে নৌকা নিয়ে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু নির্বাচিত হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ম্যানেজিং ডিরেক্ট এবাদুল করিম বুলবুল। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান। এছাড়া জোটের খেলায় আসনটি হাতছাড়া হতে পারে তার। এখান থেকে মনোনয়ন চান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ। জোর গুঞ্জন রয়েছে আওয়ামী লীগ এবার জোটের প্রার্থীর জন্য আসনটি ছেড়ে দিবে। এর আগে ২০১৪ সালেও জাসদের প্রার্থী শাহ জিকরুল আহমাদের জন্য আসনটি ছেড়েছিল দলটি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন চূড়ান্তের কাজটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে শেষ করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সরকারি ও বেসকারি ছয়টি সংস্থার জরিপে নেতিবাচক প্রতিবেদন আসায় এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন অনেকেই। তিনি সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, দলীয় রিপোর্ট ও নিজস্ব সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করেছেন ৩০০ আসনের প্রার্থী। তবে এর মধ্য থেকে শরিক দলগুলোর সঙ্গে শেষ হিসেব-নিকেশে বাদ যাবে বেশকিছু প্রার্থীর নাম।

সূত্রগুলো বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১, ৩, ৪ ও ৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যরা আবারও নৌকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হয়েছে তাদের পক্ষে বর্তমান জনসমর্থন ও দলের প্রতি আত্মনিবেদন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক টিকিট পাবার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন সবার আগে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অব. এ বি তাজুল ইসলাম পুনরায় আওয়ামী লীগের টিকেট পাচ্ছেন বলে সূত্র জানায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন যারা-

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে দলের মনোনয়নের জন্যে ফরম নিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এমএ করিম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম আলমগীর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা নাজির মিয়া ও তার স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মোছাম্মৎ রোমা আক্তার, ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফারুক, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. ইখতেশামুল কামাল, প্রভাষক ইমরান হাই জাবেদ, কৃষক লীগ নেতা আদেশ চন্দ্র দেব, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ নেতা এডভোকেট রাকেশ চন্দ্র সরকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের জন্যে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সদ্য উপনির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, নারী সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মাইনুদ্দিন মঈন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল হান্নান রতন, কামরুজ্জামান আনসারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডাক্তার আশীষ কুমার চক্রবর্তী, সরাইল আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট নাজমুল হোসেন, আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী ছফিউল্লাহ মিয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, সরাইল যুবলীগ নেতা এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু, জাপান যুবলীগ নেতা আবু শামীম পিয়ার পলাশ, সরাইল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. জালাল মিয়া। এ ছাড়া এই আসনে তৃণমূল বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়েছেন প্রয়াত আলোচিত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল ইসলাম তুষার। এর আগে পিতার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে তুষার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের জন্যে মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও, সুইডেন প্রবাসী জহিরুল হক চৌধুরী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আনিসুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আলহাজ মো: শাহআলম, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এ কেএম বদিউল আলম জামাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ন সাহা মনি, জেলা যুবলীগ নেতা তসলিমুর রেজা, কসবা যুবলীগের সাবেক নেতা হাজী মো. লুৎফুর রহমান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল, সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী অধ্যাপক নূরুন্নাহার বেগম, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মো. কবির আহমেদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. আলামিনুল হক ও হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাইদ। এই আসনে জাসদের মনোনয়নপ্রার্থী এডভোকেট আখতার হোসেন সাঈদ। এছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অব. এ বি তাজুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলাম আবুল ও এডভোকেট দিদার হোসেন রেজভী, বাঞ্ছারামপুর আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ আহমেদ বাবু, এডভোকেট হাবিবুর রহমান বাদল ও মো. গোলাম মোস্তফা কামাল, ঢাকা বাড্ডা আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান ধীরন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডাক্তার এ কে মাহবুবুল হক দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *