আন্তর্জাতিক

ঝড়ে উপড়ে পড়া দেখিয়ে প্রাচীন বটগাছ বিক্রি!

ডেস্ক রিপোর্ট: গ্রামবাসীর বাঁধার মুখে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের জাবারিপুর কোলাপাড়ায় একটি প্রাচীন বটগাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম।

বুধবার (২২ নভেম্বর)সন্ধ্যা থেকে একদল মানুষ কুঠার-করাত নিয়ে গাছটি কাটতে শুরু করেছিল। তারা গ্রামবাসীকে জানায় উপজেলা পরিষদ থেকে গাছটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) মোকামতলা ইউপি চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে নিলামকারী আবারও গাছ কাটতে গেলে পুনরায় বাধার মুখে পড়েন তারা। এরপর গ্রামবাসী শরণাপন্ন হন জেলা প্রশাসকের। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয় গাছ কাটা।

ওই গ্রামের বাসিন্দা শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিব হাসান জানান, বুধবার তারা যখন গাছটি কাটতে আসে, সেসময় তারা নিলামের একটি কাগজ দেখায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ঝড়ে উপড়ে পড়া বটগাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। অথচ পুরো গাছ এখন দণ্ডায়মান, আর জীবন্ত। কিছুদিন আগে গাছটির একটি ডাল ভেঙে পড়েছিলো। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।

তারপরও সেই গাছকে ঝড়ে উপড়ে পড়া দেখিয়ে তা নিলাম করা হয়। অথচ জাবারিপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে গাছটি। সেটি রক্ষা না করে কেন নিলাম করা হলো সেটা নিয়েই গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা বাধা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার মোকামতলা ইউপি চেয়ারম্যান নিজে নিলামে ডেকে নেওয়া ভাকখোলা গ্রামের রানার সাথে আবারও গাছ কাটতে যান। তখন গ্রামবাসী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করলে গাছ কাটা বন্ধ হয়।

ওই গ্রামের বাসিন্দা খট্টু সরকার বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে গাছটা আছে। গাছের বয়েস তিনশ’ বছরের কম না।

রাজিব সরকার নামের অপর গ্রামবাসী বলেন, ‘কত কত পাখির বাসা আছে গাছটাতে। এতো বড় গাছ এই অঞ্চলে আর কোথাও নাই। সেটা যেটিকে থাকে সেই চেষ্টা না করে উপজেলা প্রশাসন কি করে কাটার অনুমতি দিলো?’

সেখানে গিয়ে নিলামকারিকে না পেলেও কথা হয় মোকামতলা ইউপি চেয়ারম্যান আহসান হাবিব সবুজের সঙ্গে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ওই গাছের একটি ডাল ভেঙে পড়ার কারণে তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরই উপজেলা প্রশাসন থেকে গাছের যে ডালগুলো আশপাশের বাড়ির ওপরে আছে সেসব কেটে ফেলার জন্য নিলাম করা হয়। সেটাই কাটতে যায় ভাকখেলা গ্রামের রানা। গ্রামবাসীর ধারণা সে গোটা গাছই কেটে নিয়ে যাবে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পরে সেটা সমাধান করা হয়েছে।

গত ১৩ নভেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও উপজেলার পুরাতন মালামাল/গাছ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় কমিটির সদস্য সচিব মো. তাসনিমুজ্জামান স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ পত্রে(ওয়ার্ক ওর্ডার) ওই গ্রামের ঝড়ে উপড়ে পড়া একটি বটগাছ ১২ হাজার ৭০০ টাকায় নিলামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যাদেশপত্র প্রাপ্তির ৭দিনের মধ্যে সেটি অপসারণ করতে হবে বলেও ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে মো. তাসনিমুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুরো গাছ না, যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধু সেটুকুই নিলাম করা হয়েছে। পুরো গাছ নিলাম করার কোনোই কারণ নেই।

শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু বলেন, উপজেলা থেকে যেভাবে নিলামের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে তাতে তো পুরো গাছের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। পরে যখন গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হয়েছে তখন তারা বলছে যে পুরো গাছ নয়, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অংশ নিলাম করেছে। একটি জীবন্ত প্রাচীন বৃক্ষকে ঝড়ে উপড়ে পড়া কীভাবে তারা উল্লেখ করলো সেটি তদন্ত হওয়া দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *