সারাদেশ

নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আবারও ঊর্ধ্বৃমূখী ডেঙ্গু

ডেস্ক রিপোর্ট: নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। ২২ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে প্রাণ ঝরেছে ২২২ জনের, আর আক্রান্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৫২৩ জন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪ হাজার ১৭৮ জন (২৩ নভেম্বর)।

স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্র জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয় ১৫ নভেম্বর। ওই দিন ২৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়। ওই দিনের পর থেকে কমতে থাকে মৃত্যুর হার। ২০ নভেম্বর মৃত্যুর সংখ্যা কমে পাঁচে নেমে আসে। তবে কমতির সেই ধারা আর বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২১ ও ২২ নভেম্বর মৃত্যুর সংখ্যা আবার বাড়ন্ত দেখা গেছে ওই দুই দিনে ১৬ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

২২ নভেম্বর ডেঙ্গুতে মারা যান ৮ জন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১১৬২ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭০ জনে। ১ জানুয়ারি থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৯৮ জন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা ১ লাখ ৬ হাজার ২৭১ জন, আর ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৭ জন। চলতি বছর ২২ নভেম্বর পর্যন্ত   হাসপাতালে চিকিংসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫০ জন।

দেশজুড়ে করোনা মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে উঠনে না উঠতেই শুরু হয় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। মশা মারতে নানা উদ্যোগ নিলেও কোনই কাজে আসছে না। প্রতি বছরেই বেড়ে চলছে মৃত্যূ ও আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গু ঠেকাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানান প্রশ্ন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করে, সুনির্দিষ্ট কৌশলবিহীন ও বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কার্যকর না হওয়া, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি ও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকাই দায়ি।

তবে নগর কর্তৃপক্ষ মনে করে, সাধারণ জনগণের সচেতনতার অভাবে মশা নির্মুল করা যাচ্ছে না। জনগণ তাদের নাগরিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না অনেক ক্ষেত্রেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ২৮১ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে ৭ জন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের বড় প্রাদুর্ভাব হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। বছর বছর এই মৃত্যুহার ভয়ানকভাবে বেড়েছে। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু, তবে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রতি বছর বিশ্বের ১০০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের দিক থেকে সবার শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয় অবস্থানে পেরু, আর তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।

তবে আক্রান্তের দিক থেকে  তৃতীয় হলেও মৃত্যুতে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলে। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ৯১২ জনের। সে হিসাবে মৃত্যুহার দশমকি শুন্য ৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পেরুতে  আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪২৪ জন। অর্থাৎ দেশটির মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু তৃতীয় অবস্থানে থাকা দেশ বাংলাদেশে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২ লাখ ৪০ হাজার ৯৭ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২১৪ জনের। মৃত্যুর সংখ্যা ও হারে সবার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশে মৃত্যুহার দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পর মৃত্যুহার বেশি ফিলিপাইনে। দেশটিতে ৮০ হাজার ৩১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ২৯৯ জনের। মৃত্যুহার দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে গবেষণা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি জানায়, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ধারাবাহিকভাবে বছরব্যাপী বিদ্যমান থাকলেও এ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিকভাবে পর্যাপ্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। আইন অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *