সারাদেশ

টোল প্লাজায় আগুনের ঘটনায় সরকারি প্রকল্পে নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ

ডেস্ক রিপোর্ট: শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরে যায়। আগুনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে বাসটিতে আগুন ধরে। এই আগুনে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজার একাধিক লেনসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আগুনে পুড়েছে।

এদিকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রাখে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশের পরবর্তী সময়ে হরতাল ও টানা অবরোধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে নাশকতাকারীরা। পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়।

এর ফলে আগুন দূর্বৃত্তদের তান্ডবে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। যদিও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জান-মাল রক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপর্ণূ সকল স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশিদের নজর কাড়তে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে টার্গেট করতে পারে নাশকতাকারীরা। এই সকল প্রকল্পে বিশ্বের বহু দাতা গোষ্ঠি অর্থায়ন করেছে। বিদেশি নাগরিকরা কাজ করছে। তাই প্রকল্পগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন।

দেশের সড়ক মহাসড়কে চলমান প্রকল্প ও যানবাহনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল মুখার্জী বলেন, ‘হাইওয়েতে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আমরা সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েছি। দেশের ৩ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক জুড়ে ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।’

সড়ক মহাসড়কে সরকারের চলমান প্রকল্পের নিরাপত্তা কেমন হওয়া প্রয়োজন জানতে চাইলে বুয়েটের পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যে সকল প্রকল্পে কাজ চলে সেগুলো বিশ্বের দাতা গোষ্টির নজরকাড়ার জন্য অন্যতম একটি টার্গেট হতে পারে। তাই এই সকল প্রকল্পগুলোকে কঠোর নিরাপত্তার আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি এই সকল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত বিদেশি নাগরিকদেরও নিরাপত্তার আওতায় আনা উচিৎ। কারণ বর্তমানে আক্রমণাত্মক বার্তা আমরা দেখেছি।’

বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে টোল প্লাজায় বাসে আগুনে ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশী টোল প্লাজগুলোকে নিরাপত্তা চৌকি হিসেবে তৈরি করা হয়। যদিও এটি যোগাযোগের জন্য তৈরি স্থাপনা। কিন্তু অপরাধীদের ধরা বা কোনো গাড়িকে যদি আইনের আওতায় আনার প্রয়োজন হয় তখন টোল প্লাজা ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি টোল প্লাজায় যদি অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে সেটি প্রতিরোধ করা হয়। থানাও নির্মাণ করা হয়।’

বিশেষ করে আগুনের প্রতি সতর্কতা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রাথমিক আগুন নির্ভাপণ যন্ত্র থাকে। পাশপাশি যারা টোল প্লাজায় কাজ করেন তাদেরও আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় এমন কোনো কিছুই আমাদের চোখে পড়েনি। ফলে দেখলাম আগুনের কারণে একটি জনসম্পদ নষ্ট হয়ে গেল।’ 

যোগাযোগ খাতের এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক কিছুর আয়োজন থাকে। ব্যবহার করার পদ্ধতি না জানার ফলে কিন্তু প্রয়োগ করা হয় না। আমরা গতকাল সেটাই দেখলাম।’

এ দিকে ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুসারে, ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর (২৪ দিন) পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক সারাদেশে মোট ১৯৭টি (যানবাহন ও স্থাপনাসহ) আগুনের তথ্য পায় ফায়ার সার্ভিস। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৪ জেলার  ৬০টি উপজেলায় আগুন ঘটনা ঘটেছে। জেলা হিসেবে গাজীপুরে, উপজেলা হিসেবে বগুড়া সদরে সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনার ঘটে।

ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত গত ২৩ দিনে দিনে গড়ে ৭টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। তাদের দেওয়া আগুনে অন্তত ১০ জন বাসযাত্রী আহত হয়ে শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

টোল প্লাজায় আগুনে ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিন রেজা বার্তা২৪.কমকে বলেন, টোল প্লাজায় আগুনের ঘটনায় তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও আগুনে দুইটি পিটিজেড ক্যামেরা, একটি বুলেট ক্যামেরা, তিনটি লেন ক্যামেরা নষ্টসহ টোল প্লাজার ৪০ ভাগ সিস্টেম নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি টোলপ্লাজার ছয় ও সাত নম্বর লেনের কাউন্টার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *