সারাদেশ

বঙ্গবন্ধু ব্লু-ইকোনোমি গবেষণা কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন

ডেস্ক রিপোর্ট: শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের আন্তঃর্জাতিক মানদন্ড নিশ্চিত করতে পারছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। একটি বিভাগে ৬৬ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। শিক্ষাছুটি নিয়ে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যাওয়া, বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নতুন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ভোগাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট শিক্ষক আছেন ২৬৬ জন। এর মধ্যে ৯৩ জন আছেন শিক্ষাছুটিতে।

ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৪। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী যা হওয়া উচিত ছিল কমপক্ষে ১:২০।

শিক্ষাছুটিতে থাকা শিক্ষক বাদে পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভাগগুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত করে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বিভাগই আন্তর্জাতিক এই মানদন্ড পূরণ করতে পারছে না৷ শিক্ষকপ্রতি ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আছে মোট চারটি বিভাগে৷ ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ এবং আইন বিভাগে এই অনুপাত ১:২৫। উভয় বিভাগেই বর্তমানে অবস্থানরত শিক্ষকসংখ্যা মাত্র আট জন। অন্যদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এই অনুপাত ১:৬৬.৬৭।

বিভাগটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগটির মোট আট শিক্ষকের চারজনই উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাছুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছেন৷ একজন সম্প্রতি মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছেন। বর্তমানে বিভাগটির সকল কার্যক্রম দেখাশোনা করছেন তিন জন শিক্ষক।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ইউজিসির কাছে পদ চেয়েছে। ইউজিসি পদ দিলে আশা করি বিভাগ শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠবে।’

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইউজিসিতে আগে বিধান ছিল শিক্ষাছুটির বিপরীতে শিক্ষকের চাহিদা দেখিয়ে আবেদন করলে নতুন শিক্ষকের পদ পাওয়া যেত৷ তবে তা ইউজিসি বাতিল করে নতুন বিধান করে- যতজন শিক্ষাছুটিতে যাবে তার ২৫ শতাংশ নিয়োগ করা হবে।

ইউজিসির এই নিয়ম বিপদে ফেলছে কুবির নতুন বিভাগগুলোকে৷ যথেষ্ট শিক্ষক না থাকা এবং শিক্ষাছুটি মঞ্জুর করে দেওয়ায় কমছে শিক্ষক, বাড়ছে বাকীদের টিচিং লোড।

এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা (সাধারণ) ২০২২ মতে, একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪০ হবে। এই কর্মঘণ্টা কন্টাক্ট আওয়ার এবং নন-কন্টাক্ট আওয়ার সমন্বয়ে পরিপূর্ণ হবে। ৪০ ঘন্টার মধ্যে একজন শিক্ষক গড়ে ১৩ ঘন্টা ব্যয় করবেন কন্টাক্ট আওয়ার হিসাবে। কিন্তু বিভাগ/ইনস্টিটিউটের প্রধানের সাপ্তাহিক কন্টাক্ট আওয়ার ৬ ঘন্টা হবে।

কিন্তু শিক্ষক সংকট থাকার ফলে কর্মে নিয়োজিত থাকা শিক্ষকদের টিচিং লোড পড়ছে অতিরিক্ত। এ প্রসঙ্গে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটির বিষয়ে নির্ধারিত বিধি থাকলেও কুবিতে নেই। এছাড়া কর্মস্থলে থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের উপর চাপ বেশি পড়ছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষক ব্যবস্থাপনার সমস্যা। শিক্ষা ছুটির জন্য আলাদা নিয়ম করার মাধ্যমে এবং ইউজিসি থেকে নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা উচিত।’

রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ চেয়েছি। কিন্তু ইউজিসি পদ না দেয়ায় প্রশাসনও কোনো নিয়োগ দিতে পারছে না। ইউজিসি থেকে পদ পেলে শিক্ষক সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষক ভালো স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন। বিভাগ থেকেও সুপারিশ যায়। তখন শিক্ষক সংকটের কথা বলে সুপারিশ না দিলে শিক্ষকের মধ্যেও এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করে। কাজ করতে চায় না। প্রশাসন কিংবা আমাদের কারোই উপায় নেই। এখন নতুন পদ দরকার সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য।’

প্রকৌশল অনুষদের ডিন ও কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মাহমুদুল হাসান রাজু বলেন, ‘আমাদের বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এই শিক্ষক সংকট কাটাতে আমাদের বিভাগে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করছি আমাদের বিভাগে যেন অতিসত্বর শিক্ষকদের পদ দেয়া হয়। নতুন নিয়োগের মাধ্যমে বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে অনুপাত সেটাও রক্ষা পাবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এর মধ্যে এই বছর আরও কয়েকজন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। যে সমস্ত শিক্ষক উচ্চশিক্ষার পরেও ফিরে আসছিলেন না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসতে বলি । যারা আসেনি তাদের অনেকের দেনাপাওনা নিষ্পত্তি করে তাদের ধরে রাখা পদগুলো শূন্য করা হয়েছে, আর বাকিদের দেনা পাওনা নিষ্পত্তি সহ পদ শূন্য করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই বছর বিদেশে যাওয়া শিক্ষকদের শূন্যতা পূরণের জন্য আমি পদ চেয়ে ইউজিসিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করি এবং তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সেই প্রেক্ষিতে ইউজিসি চলতি মাসে আমাদের সেই ৭ টি পদ দিয়েছে। এজন্য ইউজিসিকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আরও কিছু পদ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত আমরা আরও পদ পাবো। আমি আশা করি দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের পদের যে সঙ্কট তা অনেকখানি লাঘব হবে।’

এ ব্যাপারে ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন। এছাড়া তিনি আরো বলেন, ‘পদ দিচ্ছে না এমন না। কিছুদিন আগেও পদ দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *