সারাদেশ

৩০০ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা আজ

ডেস্ক রিপোর্ট: এক সময় আসনগুলো থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের বাবারা। বারবার নির্বাচিত হয়ে এই নেতারা হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, জনতার নেতা। তাদের অনেকেই আজ পৃথিবীতে নেই, কারও বা হয়ে গেছে বয়স।

বাবার রেখে যাওয়া আসনে এবার সংসদ সদস্য নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে পাঁচ আসনে নতুন মুৃৃখকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের বাবাই অতীতে এসব আসনের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ছিলেন।

১৯৭০ সাল থেকে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এখনও তিনি ওই আসনের সংসদ সদস্য। তিনি দু’দফায় মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের হাল ধরা অন্যতম নেতা মোশাররফ বর্তমানে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সদস্য। 

মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথমদিন গত ১৮ নভেম্বর সকালে মোশাররফ হোসেনও যান বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তবে নিজের জন্য মনোনয়নপত্র না কিনে তিনি নিজের আসন মীরসরাইয়ে ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মোশাররফ তখন জানান, প্রায় ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম তিনি নিজের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। শেষ পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোশাররফপুত্র রুহেল।

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে রফিকুল আনোয়ার চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনে মনোনয়ন তুলে দেয় আওয়ামী লীগ। তখন ফটিকছড়ির মানুষের কাছে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত রফিকুল আনোয়ারের গ্রহণযোগ্যতা ছিল তুঙ্গে।

প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিকে হারিয়ে রফিকুল আনোয়ার জয়ী হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিকূল সময়েও তিনি ফটিকছড়িকে এই আসনটি উপহার দেন।

এরপর ওয়ান ইলেভেনে অনেক রাজনীতিকের মতো রফিকুল আনোয়ারের ওপরও নেমে আসে খড়গ। এ কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। ২০১২ সালে মারা যান এই নেতা। এরপর থেকে বাবার আসনে চষে বেড়ান খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ২০১৪ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। এবার সরাসরি জনগণের ভোটে জিতে সংসদে যাওয়ার সুযোগ তার সামনে।

নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সনি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীকের নমিনেশন দিয়েছিলেন। সেবার জোটের কারণে আমি নমিনেশন প্রত্যাহার করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমাকে মহিলা সাংসদ মনোনীত করে বিশেষভাবে ফটিকছড়িতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সেই দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠার সাথে পালন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে দিন রাত পরিশ্রম করেছি। প্রধানমন্ত্রী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হতে নৌকা প্রতীকের নমিনেশন উপহার দিয়েছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ফটিকছড়ির আসনটি প্রধাানমন্ত্রীকে উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এ বি এম আবুল কাশেম মাস্টার। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। তবে ২০১৪ সালে মনোনয়ন পাননি তিনি। ২০১৫ সালে আবুল কাশেম মাস্টার মারা যাওয়ার আগেই সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারই বড় ছেলে এস এম আল মামুন। বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মামুনও সংসদ সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যর্থ হলেও এবার বেশ আটঘাট বেঁধে নামেন তিনি, পদত্যাগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকেও। শেষ পর্যন্ত উত্তর জেলা যুবলীগের এই সাবেক সভাপতিকেই এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম-৪ আসনে এস এম আল মামুনের নাম ঘোষণা করতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তার সমর্থকেরা।

পরে ফেসবুকে উচ্ছ্বাসের ভিডিও দিয়ে এস এম আল মামুন লেখেন, শুকরিয়া সৃষ্টিকর্তার দরবারে। কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -৪ (সীতাকুণ্ড, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী আংশিক) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী হলাম। সবার সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের আরেক প্রবাদপ্রতিম নেতা ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এই সাবেক সভাপতি চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১২ সালে বাবুর মৃত্যুর পর এই আসনে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তার বড় পুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ২০১৪ সালে এই আসনে জিতেই ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জাবেদ। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পর তার ওপর আবার ভরসা রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এবার তাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়। এবারও যথারীতি মনোনয়ন পেয়েছেন জাবেদ।

মনোনয়ন পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক পেজে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামিনের ওপর। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের আরেক অবিসংবাদিত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। কখনো সংসদ সদস্য পদে না দাঁড়ালেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টানা ১৭ বছর মেয়র ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আমৃত্যু সোচ্চার থাকা এই নেতা দলমত নির্বিশেষে ছিলেন সকলের কাছে জনপ্রিয়। ২০১৭ সালে এই নেতার মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে মনোনয়ন পান মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় পুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নির্বাচিত হওয়ার পর পান শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বও। এবারও একই আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। বাবার জনপ্রিয়তা, নিজের দক্ষতায় এবারও নওফেল জয়ী হবেন বলে আশাবাদী নেতাকর্মীরা। 

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন সুলতানুল কবির চৌধুরী। সত্তরের দশকের তুখোড় এই ছাত্রনেতা ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও। তিনি চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এবার বাবার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী। এজন্য ক’দিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদও ছাড়েন তিনি। তবে এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ওপরেই ভরসা রেখেছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে অপেক্ষা বেড়েছে চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলীর। 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *