সারাদেশ

জাপায় বড় চমক নেই, বাদ পড়ছেন ৩ এমপি!

ডেস্ক রিপোর্ট: জাপায় বড় চমক নেই, বাদ পড়ছেন ৩ এমপি!

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিকেলে ৪টায় (২৭ নভেম্বর) দলীয প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। বর্তমান সংসদের ৩ জন সংসদ সদস্য বাদ পড়তে পারেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙা এমপি। বিগত দুই সংসদে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে নির্বাচিত হন মোটর মালিক সমিতির এই নেতা। জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত রাঙার আসনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন জিএম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আসিফ শাহরিয়ার। জিএম কাদেরের স্নেহধন্য আসিফ শাহরিয়ারের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে।

বাদ পড়াদের নিশ্চিত তালিকায় রয়েছেন পিরোজপুর -৩ (মঠবাড়িয়া) আসন থেকে নির্বাচিত রুস্তম আলী ফরাজি এমপি। তার পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন মোশরেকুল আলম রবি।

অন্যদিকে এক-এগারোর কুশীলব মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবার মানোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে। মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বিগত নির্বাচনে ফেনী-৩ (সোনাগাজী ও দাগনভূঞা) থেকে নির্বাচিত হন। ওই আসনের রিন্টু আনোয়ারকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বিকেলে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণার তোড়জোড় চললেও এখন পর্যন্ত রওশন এরশাদ এবং তার পুত্র সাদ এরশাদ দলীয় মনোনয়ন ফরম নেননি। যে কারণে তাদের আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে জাপা। বড় পরিবর্তনের মধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান লালমনিরহাট সদর আসনের পরিবর্তে রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের আসন অপরিবর্তিত থাকছে বলে জানা গেছে।

দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা রাঙার

মসিউর রহমান রাঙা

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বহিষ্কৃত নেতা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙা এবার দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিশ্চিত।

কিন্তু তিনি এখন কি করবেন তা নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। অনেকে আবার দলীয় প্রার্থী হওয়ার আশা ছাড়েননি। সবমিলে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের জাতীয় পার্টির সমর্থকরা রাঙাকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।

তবে রওশন এরশাদ রাঙাসহ ১২ জনের মনোনয়ন চেয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানাগেছে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না! এতে ধারণা করা হচ্ছে, তিনবারের এমপি রাঙার আমছালা দুই-ই গেল।

এদিকে রংপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন জি এম কাদেরের ভাতিজা ও সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার (আসিফ)। আর রাঙা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠরা।

এর আগে, গঙ্গাচড়ায় প্রচার হয়, রওশনপন্থি হিসেবেই লাঙল প্রতীকে প্রার্থী হবেন দল থেকে বহিষ্কৃত মসিউর রহমান রাঙা। কিন্তু গত শনিবার রওশন এরশাদ যে তিনজনের জন্য মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন তাদের মধ্যে রাঙার নাম নেই। জাপার একটি সূত্র জানায়, রওশন এরশাদ তিনটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন তার নিজের জন্য, আরেকটি তার ছেলে সাদ এরশাদের জন্য এবং অন্যটি ময়মনসিংহের জাপার নেতা ডা. কে আর ইসলামের জন্য। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠকে রওশন এরশাদ যে ১২টি আসন জিএম কাদেরের কাছে চেয়েছেন তার মধ্যে রাঙার নাম আছে।

গঙ্গাচড়ায় রাঙার অনুসারীরা বেশ হতাশ। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টির দখলে থাকা এই আসনে লাঙল প্রতীকই বড় কথা। অন্য প্রতীকে প্রার্থী হয়ে এখানে জয়ী হওয়া কঠিন। রাঙার জন্য এটি কঠিন পরিস্থিতি বলে মনে করছেন কেউ কেউ। গত বছর রওশন-কাদের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষ নেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙা। এর জের ধরে গত বছরের ১8 সেপ্টেম্বর তাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এরপর রওশনপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিতি পান রাঙা কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই কূল (রওশন ও জিএম কাদের) হারিয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মসিউর রহমান রাঙা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দলীয় মনোনয়ন জমা না দিলেও চূড়ান্ত তালিকায় আমার নাম আসবে। আর যদি না আসে তা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো।

তিনি বলেন, রওশন এরশাদের যেমন দলীয় মনোনয়ন নিতে হয় না, তেমনি আমি দুই বারের মহাসচিব ছিলাম আমারও লাগবে না।

;

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণ শুরু

ছবি: বার্তা২৪.কম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

এর আগে, রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। তিনশ সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি বাদ রেখে ২৯৮টি আসনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে দলটি।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এই চার দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ১২১ জন ফরম কিনেছেন। ফরম বিক্রি করে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে দলটির।

এর আগে, ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

;

বিএনপি কার্যালয় বন্ধ থাকলেও নিয়মিত আসছে পত্রিকা

ছবি: বার্তা২৪.কম

মহাসমাবেশে গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। গ্রেফতার এড়াতে কার্যালয়টিতে ঘেঁষছেন না নেতাকর্মীরাও।তবে বন্ধ কার্যালয়ে নিয়মিত আসছে দৈনিক পত্রিকা। কেচি গেটের ফাঁকা অংশ দিয়েই পত্রিকাগুলো রেখে যাচ্ছেন হকাররা।

সরেজমিনে সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকালে দেখা গেছে বণিক বার্তা, সময়ের কণ্ঠস্বরসহ গত দিনের বেশকিছু পত্রিকা রাখা হয়েছে ইসির চিঠি রেখে যাওয়া সেই চেয়ারে।

আজকের তারিখে পত্রিকাগুলোর উজ্জ্বলভাব থাকলেও গত দিনের পত্রিকাগুলোর বর্ণের পরিবর্তন এসেছে ধুলোবালিতে। তবে দীর্ঘদিন কার্যালয় বন্ধ থাকায় বেশ কিছু দিন কোন পত্রিকা আসেনি এই কার্যালয়ে। কিন্তু হঠাৎ আবার কেন পত্রিকা আসছে এটাই ভাবছে অনেকে। তাহলে কি কার্যালয়ে আবারও দলীয় কার্যক্রম শুরু করবে বিএনপি?

দলের শীর্ষ নেতারা জেলে এবং বাকি নেতারা গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেওয়ায় এ প্রশ্নের কোন জবাব পায়নি বার্তা২৪.কম। তবে কার্যালয়টিতে এখনো পুলিশের শক্ত অবস্থান থাকায় সেখানে কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি সম্ভব না বলছেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, পুলিশ বলেছিলো আমাদের কার্যালয়ে আমরা কাজ করতে পারব। সে লক্ষে আমরা কয়েকজন নেতা কর্মীদের সেখানে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। এখন বলেন বিএনপি নেতা জানলেই গ্রেফতার করা হলে কার্যালয়ে কাজ কিভাবে চালাবো। সেখানে তো রাতদিন পুলিশ। আমাদের নেতৃত্ব শূন্য করতেই এই প্রচেষ্টা তাদের। দয়া করে আমার নাম প্রকাশ করবেন না পত্রিকায়। আপনি জানতে চাইলেন তাই জানালাম।

ছাত্রদলের ওই নেতা ছাড়াও দলটির একাধিক নেতা এমন দাবি করেছেন।

তবে এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান জানান, সারা বছরই বিএনপি কার্যালয় এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা থাকে। সেই নিরাপত্তার অংশ হিসেবেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে বিএনপি কার্যালয়ে কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। এছাড়া ওই সংঘর্ষের পর থেকেই টানা হরতাল অবরোধ পালন করছে বিএনপি ৷ চলছে দলটির দেওয়া সপ্তম দফার অবরোধ।

;

‘বিকল্প প্রার্থিতায়’ হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দৃশ্যায়ন

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্যে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের লক্ষ্য দলটির। গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের প্রধান কার্যালয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের মনোনয়ন বোর্ডের কয়েক দফা বৈঠক, এবং সবশেষ গণভবনে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে সভানেত্রী শেখ হাসিনার মতবিনিময় শেষে এই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৩ হাজার ৩৫৬ জন। তাদের সকলের সঙ্গে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার নাম মতবিনিময় হলেও এটা আদতে সকলের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর বার্তা কিংবা নির্দেশনা সভা। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিষয়ে নিজের অপছন্দের কথা জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না করতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটে কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে। ফলে কোনো আসনে প্রার্থী শূন্য হয়ে পড়তে পারে বা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি তা চান না।

প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত এই নির্বাচনেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে। ৩০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ। এমন অবস্থায় বিএনপি চাইলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন। যদিও দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে না। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা কারাগারে, বাইরে যারা তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় বাইরে থাকলেও রাজনীতি থেকে দূরে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ডিত এবং আদালতের ভাষায় পলাতক। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে। ফলে ভয়াবহ নেতৃত্ব সংকটে থাকা বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার লোকেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে বিএনপি যে নির্বাচনে যাচ্ছে না এটা ধরেই নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি নির্বাচনে না গেলে প্রার্থিতা সংকটের বিষয়টি আগেও ঘটেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা। ওই নির্বাচনে তাদের দেখাদেখি ছোটবড় বেশ কিছু দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিছু প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও পরে সেটা প্রত্যাহার করে নেন, এবং অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল নজিরবিহীন। জাতীয় সংসদের অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় ওই সংসদ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এটা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্যে একটা বাজে উদাহরণ হয়ে আছে। সরাসরি স্বীকার না করলেও অদ্য প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য এবং সব আসনে নির্বাচন চাওয়া সেই ক্ষতে মলমের প্রলেপ, একই সঙ্গে পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর চেষ্টা বলাই যায়।

প্রধানমন্ত্রী চাইছেন প্রতি আসনে বিকল্প প্রার্থী, যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত না হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই চাওয়া আদতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর একটা চেষ্টা। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার কৌশল, একই সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাইরের উৎসুকদের ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন আয়োজন দেখানোর প্রয়াস। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ যদি জয়ী হন তবে সরকার দাবি করবে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব। এতে করে বিএনপির এক দফা আন্দোলন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিটিও অযৌক্তিক বলে প্রমাণের চেষ্টা করতে পারবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনই শেষ কথা নয়। সামনে কঠিন দিন, বন্ধুর পথ। মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি কোণঠাসা হলেও মাঠের বাইরের রাজনীতিতে এখনো তারা শক্তিশালী, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেকগুলো দেশ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। বিএনপির চলমান আন্দোলনে প্রধান শক্তি দেশীয় জনসমর্থনের চাইতে বিদেশিদের সমর্থন। এই নির্বাচনের ফলাফল যদি একপাক্ষিক হয়, তবে নির্বাচনে পর পরই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে যাবে। তখন এটা মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে তাদের। ফলে নিজেরা নিজেদেরকে পক্ষ-প্রতিপক্ষ বানিয়ে এখানে তারা এই পর্ব উৎরে যেতে চাইছে। নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থী রাখা, এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না করার কৌশল তাই রাখছে আওয়ামী লীগ।

প্রতি আসনে ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আওয়ামী লীগে। একাধারে তিন মেয়াদে সরকারে থাকার কারণে অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি থাকাও স্বাভাবিক।  এই বিপুল সংখ্যক লোকজন থেকে তিনশ’ জনকে বাছাই করা কঠিন। বাস্তবে সেটাই করতে হয়, এবং রোববার ঘোষিত হয়েছে ২৯৮ জনের নাম, এবং অন্যদের জন্যে উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে নির্বাচন। ফলে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে। দলীয় সমর্থন না পেয়েও যারা প্রার্থী হবেন তারা ভোটার টানবেন নির্বাচনে। ফলে সাম্প্রতিক কয়েকটি উপনির্বাচনে ভোটার-খরার যে দৃশ্য আমরা দেখেছি, সেখান থেকেই কিছুটা রেহাই মিললেও মিলতে পারে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অনিশ্চিত থাকায় আওয়ামী লীগের সদ্য মনোনীত প্রার্থীরা এখনই নিজেদের ‘অটো-পাস’ ভাবতে শুরু করত। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থিতাকে উৎসাহিত করায় কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জ সামনে চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসনে-আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বাইরে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ জন্মাবে, যা তাদেরকে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এরবাইরে আছে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ, যা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সহায়ক হবে।

বিএনপি নির্বাচনে এলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, এবং হবে—প্রচলিত এই ধারণার অন্য রূপ দেখাতে চাইছে আওয়ামী লীগ। দেশের রাজনীতিতে বিএনপির উপযোগিতাকে হালকা দেখানোর প্রয়াস এই প্রায়-উন্মুক্ত প্রার্থিতার সুযোগ। এখানে বিকপ্প কিংবা বিদ্রোহীদের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যাওয়া হতে পারে আওয়ামী লীগের আরেক অস্ত্র, বলা যায় ব্রহ্মাস্ত্র!

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *