সারাদেশ

৯৯৯-এ কল; সড়ক থেকে ছিনতাই হওয়া ট্রাক উদ্ধার

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর বিএনপি হরতাল ডাকে। এরপর দফায় দফায় অবরোধ-হরতাল ডাকছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। এতে প্রায় এক মাস ধরে বিঘ্নিত হচ্ছে সারা দেশের যান চলাচল। দীর্ঘ সময় হরতাল-অবরোধের ফলে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে প্রায় এক কোটির বেশি শ্রমিকের আয়ের উৎস পরিবহন খাত। পরিবহন শ্রমিকরা দৈনিক কাজের ভিত্তিতে মজুরি পেয়ে থাকেন। গাড়ির চাকা ঘুরলে তাদের পকেটে টাকা ঢুকে, না ঘুরলে পকেট ফাঁকা।

জানা যায়, অবরোধের কারণে শুধু রাজধানীতেই পরিবহন সেক্টরে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে এক কোটির বেশি টাকা। করোনাকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তথ্য অনুসারে সংগঠনটির নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ লাখ। এর বাইরে আরও ২০ লাখ শ্রমিক আছে বলে দাবি তাদের।

বর্তমানে বিআরটির নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার ২৪১টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত শ্রেণির ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি গাড়ি বাদ দিলে নিবন্ধিত মোটরযান ৫৪ লাখ ৩০৭টি।

বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, লাগাতার হরতাল অবরোধের ফলে প্রায় ১ কোটির বেশি পরিবহন শ্রমিক ভুগছে অর্থ সংকটে। গাড়ি না চলায় আয়ের পথ থমকে গেছে তাদের। ফলে টাকার অভাবে তিন বেলা খাবারের জোগানের পাশাপাশি এসব শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনও বঞ্চিত হচ্ছে সামাজিক বিভিন্ন অধিকার থেকে।

রাজনৈতিক এমন সংকটে পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়ে বিস্তর জানতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু বাসচালক ও ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা বলে বার্তা২৪.কমের করেসপন্ডেন্ট। চলমান হরতাল-অবরোধে পরিবারের জন্য চাল, ডালও কিনতে পারছেন না বলে জানান পরিবহন শ্রমিকেরা।

রংপুরের রিশা এন্টারপ্রাইজের বাসচালক জসিয়ার রহমান জানান, গত সপ্তাহে এক কেজি তেলাপিয়া মাছ কিনে বাড়ি এসেছিলাম। সেদিন থেকে বসা। গাড়ি না চললে টাকা নেই, খরচও নেই। মুলা, শাক ভর্তা দিয়ে খেয়ে দিন যাচ্ছে।

প্রত্যাশা পরিবহনের বাসচালক তইবার রহমান বলেন, লজ্জায় বাড়িতে যাই না। বাসায় গেলে বাচ্চারা ভালো তরকারির কথা বলে। দেশের রাজনীতি যেদিকে যায় যাক, গাড়ির চাকা ঘুরবে এটাই আমাদের দাবি।

রাজধানীর বলাকা এন্টারপ্রাইজের সুপার ভাইজার আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত কয়েকদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি বের করেছি। কিন্তু মানুষতো ভয়ে গাড়িতে উঠছে না। হুটহাট গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

হরতাল-অবরোধে আগুন ও ভাঙচুরের শঙ্কায় এমনিতেই রাজধানীতে যানবাহন চলাচল কম। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা হরতাল অবরোধে রাজধানীসহ সারা দেশে সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ গণপরিবহন চলছে।

এছাড়া সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতিদিন তিন হাজার বাস চলাচল করে। এতে বাস প্রতি গড়ে দিনে ৪ হাজার ৫০০ টাকা আয় ধরলেও, মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিদিন আয় হয় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অবরোধের কারণে এই আয় ৩০ লাখের নিচে নেমে এসেছে বলে দাবি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির। সে হিসাবে শুধু রাজধানীতেই বাস চলাচল কম থাকায় প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ কোটির বেশি টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, টানা হরতাল-অবরোধে এখন পর্যন্ত শুধু পরিবহন সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার ৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর আগুন, ভাঙচুর করে ধ্বংস করা হয়েছে ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি।

তিনি আরও বলেন, যারা হরতাল-অবরোধকারী, তাদের বলব মিল ইন্ড্রাস্ট্রি, অফিস আদালত সবকিছু চলমান আছে, পরিবহন কি অপরাধ করল? তারা হরতাল আহ্বান করে পরিবহন জ্বালানো ছাড়া আর তো কিছু করছে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং পরিবহনে নাশকতা থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাই।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *