মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সম্মেলন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক
ডেস্ক রিপোর্ট: চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোকে কৃষি ও পল্লী ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। খাদ্য উৎপাদনের বিস্তার ঘটাতে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তবে অর্থবছরের চার মাসে পাঁচটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশেরও কম ঋণ বিতরণ করেছে। যার মধ্যে কৃষি ঋণ বিতরণে পুরোপুরি ব্যর্থতা দেখিয়েছে দুই ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বেসরকারি খাতের সিটিজেন ব্যাংক এবং বিদেশি ওরি ব্যাংক কৃষি ও পল্লী খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য কমপক্ষে ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। যে-সব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে প্রতিবছরই সাধারণ ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি ঋণ বিতরণ।
এজন্য বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বছরজুড়ে বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময় মতো ঋণ পান। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ১৪ বছর আগে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে। ১৪ বছরে কৃষি ঋণ বিতরণ তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিতরণকৃত কৃষি ও পল্লি ঋণের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো ৮৪৪ কোটি এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৭ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বিদেশি ব্যাংকগুলো। এই ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৮০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষি ঋণ বিতরণে পরিমাণের পাশাপাশি মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে সব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করে সে জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সেসব ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার বা এনজিও মাধ্যমে বিতরণ করে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) নিবন্ধিত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুদ নির্ধারণেও এমআরএ নির্ধারিত সুদ হারের যাতে বেশি সুদ না নিতে পারে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি কৃষকের ফেরত দেওয়া ঋণের হার সন্তোষজনক। আবার কৃষি ঋণে খেলাপি কৃষকের হারও তুলনামূলক কম। তথ্য বলছে, কৃষি ঋণে খেলাপির হারও ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। অক্টোবর শেষে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। এ মধ্যে খেলাপির পরিমাণ মাত্র ৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষকেরা কখনো ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন তারা। কিন্তু দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপের মত ঋণ খেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই। তবুও কৃষকদের স্বল্প অর্থের ঋণ আদায়ে বেশি তৎপর ব্যাংকগুলো। মাত্র ৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার ঋণ আদায় চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মামলা করেছে ৭৪ হাজারের বেশি।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। আর অক্টোবর শেষে এই খাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, এই চার মাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। জুলাই-অক্টোবর মাসে মোট ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। ৯৮০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। আলোচ্য চার মাসে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৬৪২ কোটি, ডাচ বাংলা ব্যাংক ৪৮৮ কোটি এবং আইএফআইসি ব্যাংক ৪৭৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পল্লী ও কৃষিঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ ঋণ মৎস্য খাতে দিতে হবে। প্রথম চার মাসে এই খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ১৫ শতাংশ ঋণ দেওয়ার কথা প্রাণিসম্পদ খাতে। আলোচিত সময়ে পশুসম্পদ ও পোলট্রি খাতে বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এছাড়া চার মাস শেষে দারিদ্র বিমোচনে ৮২০ কোটি, শস্য খাতে ৫ হাজার ৩৪৭ কোটি, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৭০ কোটি, সেচ যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৭৫ কোটি, শস্য গুদামজাত ও বিপণন খাতে ৪১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
দেশের কৃষকদের দেয়া ঋণ সুবিধার বড় অংশই বিতরণ হচ্ছে এনজিওর মাধ্যমে। ব্যাংক থেকে কৃষকরা ঋণ পান সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদে। কিন্তু এনজিওর মাধ্যমে নেয়া ঋণের সুদহার দাঁড়াচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশে। প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছার সক্ষমতাই দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক তৈরি করতে পারেনি। এ কারণে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতের ঋণের ৫০-৮০ শতাংশ এনজিওকে দিয়ে দিচ্ছে। এনজিওগুলো ব্যাংক থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দ্বিগুণ-তিন গুণ সুদে বিতরণ করছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।