সারাদেশ

পাল্টে যাওয়া রোলে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশ 

ডেস্ক রিপোর্ট: ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি প্রবেশপত্রে যে রোল নম্বর নিয়ে পরীক্ষার হলে বসেছিল শিক্ষার্থীরা, ফলাফলের আগে পাল্টে গেছে সেই রোল। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল নতুন প্রবেশপত্রও। সেই অনুযায়ী অন্তত ৮ হাজার শিক্ষার্থী বদলে যাওয়া রোল নম্বরে পরীক্ষার ফল জেনেছেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বোর্ড কর্তৃক অসৎ উদ্দেশ্যে এমনটি করার অভিযোগ তুললেও শিক্ষা বোর্ডের দাবি, প্রযুক্তিগত ক্রটির কারণে এমনটি হয়েছে। এতে ফলাফলের কোনো ভিন্নতা ঘটেনি।

রোববার (২৬ নভেম্বর) এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলে, ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী কাকন আক্তার তার রোল নম্বর অনলাইনে অনুসন্ধান করে দেখেন, নিজের নামের পরিবর্তে সুসং দূর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাজাহারুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর নাম আসে। একই ঘটনা ঘটেছে ওই কলেজের ইসরাত জাহান জেরিনসহ ৫১ জন শিক্ষার্থীর।

একই উপজেলার মল্লিকবাড়ি শহীদ নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অংশগ্রহণ করেন ৫৬ জন শিক্ষার্থী। ৫৬ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে মাত্র ১৬ জন কৃতকার্য হয়েছেন।

ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মর্নিং সান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ১৫ টি কলেজই এ ঘটনা ঘটেছে।

ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থী মোছা. কাকন আক্তার বলেন, তিনি ফেল করার কথা নয়। 

৪০৮৭২৪ রোল নম্বরে তিনি সকল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু রেজাল্টের জন্য কলেজে গেলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ৭০৮৭২৪ রোল নম্বর উল্লেখিত প্রবেশপত্র হাতে ধরিয়ে দেন।

আরও অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, পরীক্ষার ফলাফল আনতে গিয়ে জানতে পারেন, তাদের রোল নম্বর পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে ভালো পরীক্ষা দিলেও তাদের ফেল দেখানো হয়েছে।

ভালুকার মর্নিং সান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান জুয়েল বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে এই বছর ৮১৫ জন পরীক্ষা দিয়েছে। তার মাঝে ৩০-৩৫ জনের এই সমস্যা হয়েছে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বোর্ডের অধীনে চারটি জেলায় ২৮৬ টি কলেজের ৭৫ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। বোর্ডে পাশের হার ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মোট পাশ করে ৫৩ হাজার ৪২৬ জন। মানবিক বিভাগের পাশ করেছে ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।

শিক্ষা বোর্ড বলছে, নিজস্ব জনবল না থাকায় এই শিক্ষা বোর্ডের প্রোগ্রামিংয়ের কাজ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর শিক্ষা বোর্ড। ফলাফল প্রকাশের আগ মুহুর্তে তথ্য আসতে শুরু করলে ধরা পরে জটিলতা।

বোর্ড আরও জানায়, শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ডুপ্লিকেশন হয়েছে। এক রোল নম্বর দু’জন শিক্ষার্থীর বেলায় হয়েছে। কারিগরি জটিলতার কারণে এমনটি হয়েছে। পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি বিষয়টি সামাধানে কাজ করা হয়।

রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও খাতার সঙ্গে মিল করে পুরোনো রোল নম্বরের শুরুতে নতুন একটি সংখ্যা যুক্ত করে নতুন করে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের ১৫ দিন আগে নতুন প্রবেশপত্র পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। নতুন প্রবেশপত্রের রোল নম্বর অনুযায়ীই শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল পায়। ফলাফল নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকে অভিযোগ দিলে তাদেরকে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. সামছুল ইসলাম বলেন, আট হাজারের মতো শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ডুপ্লিকেশন হয় প্রযুক্তিগত ক্রটির কারণে। পরে বিষয়টি তদারকি করে নতুন রোল নম্বর দিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। রোল নম্বর পরিবর্তনের সঙ্গে ফলাফলের কোনো সম্পর্ক নেই।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল বলেন, নিজস্ব জনবল না থাকায় প্রযুক্তিগত ক্রটির কারণে এমনটি হয়েছে। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো না। প্রবেশপত্র পরিবর্তনের কারণে অকৃতকার্য হয়েছে এমন অভিযোগ অমূলক। মফস্বলের কলেজগুলোতে শিক্ষার মানের কারণে অনেকে অকৃতকার্য হয়েছে। শহরের কলেজগুলোতে রোল নম্বর পরিবর্তন হলেও সেখানে পাশের হার অনেক ভালো।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *