সারাদেশ

আমরা পারিবারিকভাবে আ.লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত: সাকিবের বাবা

ডেস্ক রিপোর্ট: হঠাৎ তৎপর তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। নতুন গঠিত দল দুটিতে বিএনপির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ অনেকে যোগ দিতে পারেন—আলোচনা ছিল এমনই, কিন্তু এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে সেটা হয়নি। কেবল এ দুটো দলই নয়, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নিয়েও ছিল আগ্রহ, ছিল দৌড়ঝাঁপ— তবে তারাও সফল করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থা পর্বতের মূষিক প্রসব!

তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। বিএনপি সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়ে পরে চার-চারটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। নিজের গঠিত দল থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন তিনি। তার সবশেষ গঠিত তৃণমূল বিএনপি তার মৃত্যুর পর আদালতের আদেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়। এই দলটির নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা, এবং সভাপতি ও মহাসচিব হিসেবে এসেছেন যথাক্রমে বিএনপির সাবেক দুই শীর্ষ নেতা সমশের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। ধারণা করা হচ্ছিল, তারা বিএনপিতে বড় ধরনের ঝাকুনি দিতে পারবেন, সরকারও তেমনটা আশা করেছিল, তবে বাস্তবে সেটা হয়নি।

বিএনএম নামের যে দল নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছিল সেই দলটিতে রয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতারাই। দলটি আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুর রহমান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে ছিল তখন আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার তখন আওয়ামী লীগের দাবি মানতে বাধ্য হয়, ওই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১২ দিন। দুই সপ্তাহের কম সময় টিকে থাকা সংসদের এই সদস্যের নেতৃত্বে গড়া দলটিতেও ভাবা হচ্ছিল বিএনপির দলছুটদের ভিড় জমবে, সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্য দলটিতে ভিড়েছেন সত্য তবে সেটা রাজনীতির হিসাবনিকেশ পালটে দেওয়ার মতো নয়।

এই দলগুলোকে বলা হচ্ছে কিংস পার্টি’, অর্থাৎ সরকারের আনুকূল্য-সহায়তায় গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা এবং সরকারের উদ্দেশ্য পূরণের রাজনৈতিক দল। তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, করছে, কিন্তু ফলাফল এখনো শূন্য। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এবং বিভিন্ন পর্যায়ের মনোনয়ন প্রত্যাশী মতো নেতাদের দলগুলো ভেড়াতে পারেনি। দলগুলোর নেতারা এবং সরকার দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার ইঙ্গিত এ ক্ষেত্রে সত্য হয়নি।

কিংস পার্টিগুলো বিএনপি থেকে নেতা ভাগিয়ে নিতে চেয়েছিল, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; এটা যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য যে তারা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। মাঠের রাজনীতি দিয়ে দাবি আদায়ে ব্যর্থ বিএনপির এটা অন্যতম সাফল্য। বিএনপির বেশিরভাগ নেতা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকেই অন্তরীণ আছেন কিন্তু তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন না। নেতৃত্ব সংকটে থাকা বিএনপির এটা বড়ধরনের সাফল্য নিঃসন্দেহে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। গত ১৫ নভেম্বরের তফসিল থেকে ভোটগ্রহণের দূরত্ব দীর্ঘ ৫৩ দিনের। পৌনে দুই মাসের এই ব্যবধান মূলত বিভাজনের রাজনীতি থেকে উত্তরণে ইসির দেওয়া একটা সুযোগ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসির দেওয়া এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটেনি। আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলন থেকে শরিকদের হারালেও তারা নির্বাচনে আসেনি।

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না হলে ফের ২০১৪ সাল ফিরতে পারে—এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নিয়েছে অন্য কৌশল। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণে এবং কেন্দ্রে ভোটার অংশগ্রহণ বাড়াতে বিকল্প বা ‘ডামি’ প্রার্থিতাকে উৎসাহিত করছে। দলীয় চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে গণভবনে সকল মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন প্রার্থী যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। আওয়ামী লীগের ধারণা এতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে।

বিএনপি নির্বাচনে আসুক—এটা আওয়ামী লীগ কতটুকু চেয়েছে এনিয়ে প্রশ্ন আছে রাজনৈতিক মহলে। ২৮ অক্টোবরের ব্যর্থ মহাসমাবেশের পর বিএনপি ও সমমনাদের যুগপৎ আন্দোলন সরকারের হার্ডলাইনে চলে যাওয়া এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। বিএনপি ছাড়া সবগুলো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। সরকার দলের অপ্রকাশ্য এই উদ্যোগে নিবন্ধিত ৪৪ রাজনৈতিক দলের অন্তত ৩০টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে আছে অনিবন্ধিত অগণন দল। এই এত সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী আগ্রহের সৃষ্টি হবে কিনা— এমন অবস্থায় নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের নির্বাচনে উৎসাহিত করা ছাড়া উপায় ছিল না আওয়ামী লীগের।

তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বিএনএফ, সুপ্রিম পার্টি নামের দলগুলো বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে পারেনি। পালিয়ে বেড়ানো বিএনপি নেতারা সাড়া না দেওয়ায় পৃথক কৌশলে এখন আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিতদের কেউ প্রার্থী হলে সেটা এখন ‘বিদ্রোহ’ নয়, মনোনয়নবঞ্চিতদের কেউ প্রার্থী হলে সেটা বরং দলীয় সভানেত্রীর উৎসাহকে গ্রহণ করাই!

এবার আওয়ামী লীগের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পেয়েছেন সর্বসাকুল্যে ২৯৮ জন। এই বিপুল সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সকলেই নির্বাচনে আগ্রহী এমন না, অনেকেই নিজেদের জাহির করতে, নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে, এলাকার নেতাকর্মী ও কেন্দ্রের কাছে নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণে ফরম কিনতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তবে মাঠের রাজনীতিতে অনেকের অবস্থা শোচনীয়, তবু স্রেফ টাকার জোরে নিজেদের নাম কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। উন্মুক্ত কিংবা বিকল্প প্রার্থিতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বা নির্দেশনায় আসার পরেও বেশিরভাগই নির্বাচন করবেন না।

কিছু আসনে শরিকদের ছাড় দিলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটগত নির্বাচন হচ্ছে না। যত বেশি প্রার্থী, তত বেশি ভোটারের উপস্থিতি—এমনটাই মনে করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিকল্প বা ডামি প্রার্থীর ধারণাও এসেছে বিএনপির নির্বাচন বর্জন, কিংস পার্টিগুলোর ব্যর্থতা থেকেও। কিংস পার্টিগুলো বিএনপি নেতাদের ‘ভাগিয়ে’ নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারলে দলের বিদ্রোহীদের বিদ্রোহী হিসেবেই দেখা হতো, বহিষ্কার করা হতো। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীরা এখন আর বিদ্রোহী নয়, তাদেরকে বরং সহায়ক শক্তি, বৈশ্বিক বৈধতার একক হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *