সারাদেশ

‘শুধু বাঙালির জন্যই কি বাংলাদেশ?’ 

ডেস্ক রিপোর্ট: বাঙালি জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে ‘শুধু বাঙালিদের জন্যই বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে কিনা’ আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নগরীর কাজীর দেউড়িতে দলটির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাঠে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষে যারা আছে তারা বলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। শুধু যারা বাঙালি তাদের জন্যই কি বাংলাদেশ হয়েছে? সমস্ত বাংলাদেশের মধ্যে যারা বসবাস করে সকলের জন্য বাংলাদেশ। সকলেই সমানভাবে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা, অধিকার পাবে। এটা আমাদের ধারণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে বিএনপির মূলমন্ত্র।’

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এই সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ঐক্য ও সম্প্রীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এদেশকে রংধনু নেশনে পরিণত করতে চায়। অর্থাৎ একটি রংধনুতে যে-রকম অনেকগুলো রং থাকে সে রঙের মধ্যে আমাদের ১৭-১৮টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা আছে, বাঙালি যারা আছে সবাই এক একটি রং। সব রং মিলে কিন্তু রংধনু অর্থাৎ রেইনবো নেশন বাংলাদেশ। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বিএনপির মূলমন্ত্র। অনেকেই এটা হৃদয়ে ধারণ করে না। হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। আর যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে তারাই বৌদ্ধদের মন্দিরে আগুন লাগিয়েছে। তারা হিন্দুদের মন্দির ভাঙ্গে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিশ্বাস করেন, এটার মূল উৎস হচ্ছে যে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করবে। যার যার ভাষা ও ঐতিহাসিক ভূমিকা আছে, ইতিহাস আছে, সেটাকে পালন করবেন। এটার বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের একটি অংশ। এর মধ্যে সব ধর্মের মানুষ আছে। সব সম্প্রীতির মানুষ আছে। সব ইতিহাসের মানুষ আছে। সব ভাষার মানুষ আছে। সবাই মিলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।

তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে রামু মন্দিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় ছবি আছে। আমরা দেখেছি সব। এটার কোনো বিচার হয়নি। উখিয়াতে মন্দিরে আক্রমণ করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন কোনো বিচার হয়নি। হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমণ করেছে কুমিল্লায়। মিথ্যা মামলা দিয়েছে অন্য মানুষের নামে। সুতরাং এদের থেকে যদি বাঁচতে হয় আজ সম্মিলিত ভাবে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একটি ঐক্যবদ্ধ জায়গায় যেতে হবে।’

আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৌদ্ধদের মূল বসবাসের জায়গা। আপনাদের মধ্যে যদি ঐক্য থাকে, আপনারা যদি সমর্থন দেন আগামী দিনে যে রেইনবো নেশনের কথা বলছি সেটা করতে আমাদের অনেক সহজ হবে। সকলেই রাষ্ট্রের সমান অধিকার ভোগ করবে। আমরা চাই আপনাদের মধ্যে থেকে রাজনীতিতে উঠে আসুন। বিএনপিতে আপনারা অংশগ্রহণ করেন।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনে দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। বর্তমান সময়টা জাতির জন্য সবচেয়ে সংকটময়। এ সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক চ্যালেঞ্জের। আজকে প্রতিহিংসার কারণে শাসকগোষ্ঠী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মুমূর্ষু অবস্থায় রেখেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধী কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেই নির্বাচনী পরিকল্পনা সরকার তৈরি করেছে। তার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। সব রাজনৈতিক দল এখন সরকারের পদত্যাগ চাইছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবি আদায় করা হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এই চমৎকার অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ঐক্য সম্প্রীতির সম্মেলন। আজকে দেশের মানুষ শান্তিতে নাই। গত ১৭ বছরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে বিএনপি। তাই দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি আনতে হলে আওয়ামীলীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে। আগামীতে আমরা এমন শান্তির সুন্দর বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষ গুম হবে না, খুন হবে না।’

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ঝন্টু কুমার বড়ুয়ার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি মা ম্যা চিং, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রমুখ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *