সারাদেশ

ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’: অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন অবস্থান

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সময় আছে তিন মাসেরও কম। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করে জানুয়ারীর শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই রাজনৈতিক দলগুলোও ব্যতিব্যস্ত রাজপথ দখলে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় জড়ো হচ্ছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। বিএনপি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মিশনে মরণ-কামড় দিতে ব্যতিব্যস্ত, অন্যদিকে সরকারি দল ব্যস্ত ক্ষমতার আসন ধরে রাখতে।

এত কিছুর পরেও গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা অলিখিত নিয়ম দাঁড়িয়ে ছিল যে, তারা বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো সরকারি ছুটির দিনে রাখতো। যেন মানুষের ভোগান্তি তুলনামূলক কম হয়।

এসময় রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি দেয়ার আগে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা রাখতো যেমন- বড় কোনো পরীক্ষা আছে কিনা, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান আছে কিনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা আছে কিনা বা অন্য কোনো সামাজিক সংগঠনের বড় অনুষ্ঠান আছে কিনা এসব বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচি দেয়া হত। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে সে অবস্থান ছেড়ে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

রাজনীতি বিশ্লেষক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ জানিপপ’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বার্তা২৪.কম কে বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার লক্ষে সরকার, শাসক দল এবং নির্বাচন কমিশন সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছেন । ফলে দলগুলোর হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে বলে মনে হয় না। তারা একটি এসপার-ওসপার করবার চিন্তা মাথায় নিয়ে পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করছেন। ফলে আউট অফ ডেসপারেশন তারা পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছেন। কর্মদিবসগুলোতেও কর্মসূচি দেওয়ার কথা মাথায় রেখেছেন। দলগুলো যে মহাযাত্রা শুরু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তার অনেক বিষয়ই পরিষ্কার হয়ে যাবে ২৮ অক্টোবরের মধ্য দিয়ে।

এসময় তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, ‘জন দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে এবং জনস্বার্থে সবার উচিত হবে একটি মীমাংসায় উপনীত হওয়া। শান্তিপূর্ণ একটি আবহে একটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা।’

চলতি বছরের জুলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি পালনের সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিও তত তীব্র হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি কে শুধু ছুটির দিনে আবদ্ধ রাখতে পারছে না। ছুটির দিন পেরিয়ে এখন তা কর্মদিবসেও চলে আসছে। তাতে করে রাস্তায় যানজট বাড়ছে, বাড়ছে জনভোগান্তিও।

বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছেন। অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, অনশন, রোডমার্চ ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি নিয়েই দাবি আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। তবে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, সহিংসতার শঙ্কা ততই বাড়ছে। দাবি মানা না হলে রাজপথ উত্তপ্ত করারও ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাদের কোন কোনো নেতা।

গত জুলাই থেকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেখা যায়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য অপরাপর দলগুলোও কর্মদিবসে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। গত এক মাসে রাজনৈতিক দলগুলো যে কর্মসূচি পালন করে তার অধিকাংশই ছিল কর্মদিবসে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দল সমাবেশ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করে। অপরদিকে বিএনপি ধোলাইখালে সমাবেশ করে। এছাড়াও একই মাসের ২৭ তারিখ বুধবার গাবতলীতে সমাবেশ করে বিএনপি।

চলতি মাসের ২, ৯, ১২, ১৬ ও ১৮ তারিখেও বিএনপির কোনো না কোনো কর্মসূচি ছিল, যার সবগুলোই কর্মদিবসে। সে তুলনাই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ছিল কম। ৯, ১২ ও ১৮ তারিখ আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করে। এসবই রাজধানীর চিত্র। রাজধানীর বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলো মাসব্যাপী নানান কর্মসূচি পালন করে আসছে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি ও তত তীব্র হবে। তাতে করে সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন কোন কর্মসূচি থাকবে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল যেভাবে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে, দ্রুত তারা যদি কোন সমঝোতায় আসতে না পারে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।

এনিয়ে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘আমরা শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিনই সমাবেশ করি। আমরা পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করি। তাতে করে মূল যে সড়ক তা বন্ধ হয় না। আগামী ২৮ তারিখের সমাবেশের জন্য আমরা গত ২০ তারিখে ডিএমপির কাছে আবেদন করে আসি। আমাদের দেখে বিএনপিও ২১ তারিখ আবেদন করে।’

আওয়ামীলীগ বন্ধের দিনই সমাবেশ করতে চায় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আছে তা অব্যাহত রাখার জন্য ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোর চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরতেই আমাদের সমাবেশ। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমেও সেগুলো দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে জানানোর চেষ্টা করি। যার কারণে আমরা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করি।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *