সারাদেশ

নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে যুবলীগের প্রতি আহবান সাঈদ খোকনের

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ২৯৮ জনকে নৌকার চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ৩০০ আসনের বিপরীতে স্বতন্ত্র মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দলটির প্রায় ৪৪০ জনেরও বেশি নেতাকর্মী। এর মধ্যে আছেন ২৭ জনেরও বেশি বর্তমান সংসদ সদস্য। সে হিসেবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে লড়তে হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এখন পর্যন্ত মাঠে লড়াইয়ে থাকা প্রার্থীদের অনঢ় অবস্থান যেন সে কথাই জানান দিচ্ছে।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্রদের নিয়ে নমনীয় থাকার ঘোষণা দলটির চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রকাশের আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। আর তাতেই যেন শক্তি ফিরে পেয়েছেন নির্বাচনে আগ্রহী মনোনয়ন বঞ্চিতরা। তাই তো রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী এবারের নির্বাচনে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ১৭ ডিসেম্বরের আগেই সিদ্ধান্ত নিবে নেতাকর্মীরা এমন কথা বললেও মাঠ পর্যায়ে পরিলক্ষিত হয়নি তেমন কিছু। বরং ৩ ডিসেম্বর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে দলটির মনোভাব আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘স্বতন্ত্র হলে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হবে এটা কি আমরা বলেছি? এ সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।’

এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে নেই দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাই নির্বাচনী মাঠকে সতেজ রাখতে ও ভোটারকে ভোটদানে প্রলুব্ধ করতে আওয়ামী লীগ কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম মাঠে থাকলেও তাদের উপর ভরসা রাখতে পারছে না দলটি।

এছাড়াও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য রয়েছে বৈশ্বিক চাপ। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমারা নির্বাচনকে স্বচ্ছ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বার বার তাগাদা দিয়ে আসছে সরকারকে। সেই সাথে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতির মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার বার্তাও দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, নৌকা মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা উস্কে দিতে পারে দলীয় কোন্দল। বিভক্তি সৃষ্টি হতে পারে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। নির্বাচনী শোডাউন ও সমাবেশ থেকে হতে পারে সংঘাত। এছাড়াও যেহেতু একই দলের নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাই নষ্ট হতে পারে দলের সংহতি।

আরো পড়ুন: ‘আ.লীগে দুর্ভিক্ষ হয়নি যে বিএনপি’র বিভক্তির সুযোগ নিতে হবে’

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, পুলিশ বা অন্যান্য এজেন্সিগুলো আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একরকমভাবে দেখে আর যারা ভিন্ন দলের প্রার্থী তাদের ভিন্নভাবে দেখে। এখন সেখানে আওয়ামী লীগের যদি তিন জন প্রার্থী দাঁড়িয়ে যায়, তখন প্রশাসনও ভাগ হয়ে যাবে। প্রশাসনে যারা আছে তারা সবাই তো আওয়ামী লীগ করা লোক। ফলে ব্যাপক মারামারি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তৃণমূলে ব্যাপকভাবে দ্বন্দ্ব হবে এবং সে ক্ষেত্রে হয়তো নির্বাচনটাও ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে।

মাঠ থেকেও পাওয়া যাচ্ছে তেমনই আভাস। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জায়াগায় প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের বক্তৃতা দিতে দেখা যায়। সেই সাথে দেখা দিয়েছে সহিংসতার শঙ্কাও। সে শঙ্কা বাড়াচ্ছে অতীতের অভিজ্ঞতা। নিকট অতীতে হওয়া বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে সংঘাতে প্রাণ গিয়েছিল বহু মানুষের।

যদিও প্রার্থীরা একমত নন একথার সাথে। তারা বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষেই কাজ করবে দলের সকল নেতাকর্মী। নৌকার পক্ষ হয়েই তারা মাঠে থাকবে নির্বাচন পর্যন্ত। এখানে বিভক্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। নৌকা ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হাল পাবে না নির্বাচনে লড়াইয়ে। বাজেয়াপ্ত হবে জামানত।

আরো পড়ুন: স্বতন্ত্রদের বহিষ্কারের কোন সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের নেই: কাদের

এনিয়ে বার্তা২৪.কম থেকে প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলতে চাননি তারা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সে দিকেই তাকিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থীরা। তারা এখনো আশায় আছেন, ১৭ তারিখের আগেই দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। তাই সে পর্যন্ত তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চান। তারপর অবস্থা বিবেচনায় তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবেন। 

নরসিংদী-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, দলে কোনো বিভক্তি সৃষ্টি হবে না। আওয়ামী লীগ যখন একজন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ করেছে সুতরাং (স্বতন্ত্রদের ব্যাপারে) সে ব্যবস্থা দলের হাইকমান্ড নিবে। তবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭ তারিখ পর্যন্ত। এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কামরুল।

রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন মনোনয়ন না পেয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তিনি এর আগেও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এনিয়ে আসাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, দ্বন্দ্বের কোনো সুযোগ নেই। আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ। উনি ভোট করবে তবে ভোট করলে উনার (বর্তমান সংসদ সদস্য) জামানত থাকবে না। তার অপকর্মের জন্যই তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমি ভাবছি না।

দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে ২৭১৩টি। এর মধ্যে ২৮ টি রাজনৈতিক দলের ১৯৬৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এবার সর্বাধিক ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাতে প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। তবে ১৭ ডিসেম্বরে যাচাই-বাছাই ও মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে পাওয়া যাবে প্রার্থিতার আসল চিত্র।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *