সারাদেশ

বরিশাল থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু। ২৫ অক্টোবর ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ঢাকার নটর ডেম কলেজের পাঠ চুকিয়ে ১৯৭৮ সালে পড়াশোনার জন্য বিদেশ যান। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরেন। শুরু করেন ব্যবসা। ইমপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তিনি। ব্যবসায়িক পরিচয় ছাপিয়ে দেশ-বিদেশে তিনি প্রকৃতিবন্ধু নামেই সমধিক পরিচিত।

জন্মভূমির প্রতি আজন্ম ঋণই তাকে করে তুলেছে প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধ। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি দূষণমুক্ত সুস্থ-সুন্দর প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা বাংলাদেশ উপহার দেয়ার প্রত্যয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। ২০১০ সালে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা ও অভিযোজন সম্পর্কিত গণসচেতনতা সৃষ্টিতে চ্যানেল আইতে ধারাবাহিক তথ্যচিত্র অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’ শুরু করেন। ইতোমধ্যেই দর্শকনন্দিত অনুষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে তিনশো পর্ব প্রচারিত হয়েছে।

মুকিত মজুমদার বাবু নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। প্রতিবছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রকৃতিবিষয়ক বই। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘আমার অনেক ঋণ আছে’, ‘আমার দেশ আমার প্রকৃতি’, ‘আমার রূপসী বাংলা’ ‘সবুজ আমার ভালোবাসা’, ‘স্বপ্নের প্রকৃতি’, ‘সবুজে সাজাই আমার বাংলাদেশ’, ‘হৃদয়ে সবুজ বাংলা’ ইত্যাদি। খ্যাতিমান লেখকদের লেখা নিয়ে সম্পাদিত বই ‘প্রকৃতিকথা’। ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রকৃতিবার্তা’র সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি তিনি। এ ছাড়া নিয়মিত লিফলেট, বই, দিনপঞ্জী প্রকাশ করাসহ বিনামূল্যে তা তৃণমূল পর্যায়ে বিতরণ করছেন।

পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন মুকিত মজুমদার বাবু ও তার প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ, বন্যপ্রাণী অবমুক্তকরণ, দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতিবিষয়ক তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, প্রজাপতি পার্ক প্রতিষ্ঠা, পরিবেশবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক, পরিবেশ সংরক্ষণ বিভিন্ন কর্মশালা, পাখিশুমারি ও পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণ, মহাবিপন্ন বড় কাইট্টা (বাটাগুর বাসকা) কাছিম প্রজনন ও সংরক্ষণ, বিপন্ন শকুন সংরক্ষণ, শিকারি পাখি গবেষণা ও সংরক্ষণ, বন বিভাগের সঙ্গে ‘সুফল’ -এর কার্যক্রমে সহযোগিতা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গাছের পরিচিতি ফলক সংযুক্তিকরণ, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া, পরিবেশ সচেতনতামূলক স্কুল প্রোগ্রাম, প্রকৃতিপল্লী প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকৃতি সংরক্ষণে উৎসাহিত করছেন প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক দিয়ে। শহুরে মানুষের ভেতর প্রকৃতি সংরক্ষণের বার্তা ছড়াতে আয়োজন করছেন প্রকৃতি মেলা। তৃণমূল পর্যায়ে প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টিতে ২০২২ সালের ৫ জুন গঠন করা হয় ‘প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব’। এরই মধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের শাখা গঠন করা হয়। এই ক্লাবের উদ্যোগে ২০২৩ সালের ৫ মে থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শাখা ক্লাবগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী ১০ লাখের বেশি দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ করা হয়। একই সাথে বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করতে পুরস্কৃত করা হয় ক্লাবগুলোকে।

প্রকৃতিবান্ধব কাজের পাশাপাশি মুকিত মজুমদার বাবু দেশব্যাপী মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ ৩ হাজারেরও বেশি দুস্থ ও অসহায় মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ, প্রসূতিসেবা, অস্ত্রপচার খরচ, হুইলচেয়ার ইত্যাদি প্রদান করেছে। এছাড়াও দেশের ৩০ জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলে মেডিক্যাল ক্যাম্প করে ৪৩ হাজারেরও বেশি সুবিধাবঞ্চিতদের জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা, ওষুধ ও শীতবস্ত্র প্রদান করেছে। অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, সেলাই মেশিন, রিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব আয়বর্ধনমূলক সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া করোনাকালে বিভিন্ন জেলায় ওষুধসহ মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি পাঠানো, দুঃস্থদের আর্থিক সহযোগিতা, ঝরে পরা শিশুদের স্কুলমুখী করতে ও পুষ্টির জোগান দিতে স্কুলের বাচ্চাদের বিনামূল্যে দুপুরের খাবার সরবরাহ, বন্যা কবলিত অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। এ বছর তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাভারের সিআরপিতে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সাথে জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন।

পরিবেশবিষয়ক বহুমাত্রিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মুকিত মজুমদার বাবু ও তার প্রতিষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’ ‘জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১২’, ‘বঙ্গবন্ধু এ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০১৩’, ‘জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৫’, ‘এইচএসবিসি-দি ডেইলি স্টার ক্লাইমেট এ্যাওয়ার্ড-২০১২’, ‘ঢাকা আহছানিয়া মিশন চাঁদ সুলতানা পুরস্কার-২০১৫’, ‘ফোবানা এ্যাওয়ার্ড ইউএসএ-২০১৬’, ‘বিজনেস এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর-২০১৪’, ‘পল্লীমা গ্রিন স্বর্ণপদক-২০১৭’, ‘এ ফ্রেন্ড অব নেচার-২০২১’ সহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *