এক বছরে আকাশপথে যাত্রী বেড়েছে ৩৮ লাখ
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশই নয়, করোনা মহামারির পর সারাবিশ্বে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের বার্ষিক প্রকাশনা কমার্শিয়াল মার্কেট আউটলুকের পূর্বাভাস বলছে, ২০৩২ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ৫ শতাংশের বেশি হারে বাড়বে, যা বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। সেই সঙ্গে উড়োজাহাজে ভ্রমণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৮ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পক্ষ থেকেও আগামী এক দশকে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে হবে কয়েকগুণ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। বেবিচকের এক নিরীক্ষা বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো প্রায় এক কোটি যাত্রী পরিচালনা করেছে। বিগত ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৫ লাখের কিছু বেশি। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আকাশ পথে যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
বোয়িং এবং বেবিচকের ওইসব পূর্বাভাসের সত্যতাও যেন মিলতে শুরু করেছে দেশের বিমান চলাচল খাতে। বেবিচকের তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুই রুটেই ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন ৩২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সবগুলো বিমানবন্দর এক কোটি ৫৩ লাখ যাত্রী পরিচালনা করেছে। অথচ ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিমানবন্দরগুলো এক কোটি ১৫ লাখ যাত্রী পরিচালনা করেছিল। আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিমানবন্দরগুলো মাত্র ৫৮ লাখ যাত্রীকে পরিচালনা করেছিল।
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির হার শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বব্যাপী ঊর্ধ্বমুখী ছিল। আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) প্রতিবেদন বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্বেও এপ্রিল আকাশপথে বার্ষিক যাত্রী পরিবহন ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছিল। এপ্রিলে যাত্রী পরিবহন বেড়ে হয়েছে ৪৮ শতাংশ। সব বাজারেই যাত্রী বৃদ্ধির শক্তিশালী রেকর্ড দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে আবার এগিয়ে রয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের এয়ারলাইন্সগুলো।
তারা বলছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এসব পূর্বাভাসের কারণেই সরকার তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজে হাত দেয়। গত অক্টোবর মাসে এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এটি পুরোপুরি চালু হবে। বলা হচ্ছে, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১ ও টার্মিনাল ২ এর তুলনায় এর আয়তন দ্বিগুণেরও বেশি। আগের দুটি টার্মিনাল দিয়ে বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া হতো। আর তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে এক কোটি ৬০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়ার পরিসংখ্যান বোয়িং ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে তাদের উড়োজাহাজ বিক্রির ব্যাপারে আরও উৎসাহিত করছে। সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকেই বিমানের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রি করতে ঢাকায় দেন দরবার করতে দেখা গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পরিমাণ যাত্রী সংখ্যা বাড়বে, তা পরিবহনের সক্ষমতা নেই দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর। যদি এই সক্ষমতা বাড়াতে হয় তাহলে তাদের নতুন নতুন উড়োজাহাজ কিনতেই হবে। এরই মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ারবাস থেকে ১০টি ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ (এয়ারবাস ৩৫০-৮০০) কেনার পরিকল্পনা করছে। বিমান থেকে কার্যাদেশ পেলেই আগামী বছরের মধ্যে প্রথমে ৩৫০ উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে তারা।
অন্যদিকে ইতিমধ্যে বিদেশি ১৫টির বেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান এয়ার, ইরাকি এয়ার, কোরিয়ান এয়ার, জিন এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা এয়ারলাইন্স, উইজ এয়ার। এছাড়াও বন্ধ হয়ে যাওয়া পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ), ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এমিরেটস, এয়ার এশিয়া, এয়ার এরাবিয়া ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে আগ্রহী।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলছেন, নতুন উড়োজাহাজ এলে তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হবে। কানাডায় ফ্লাইট সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে, নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুসহ আরও নতুন নতুন রুট চালু করা হবে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।