সারাদেশ

হরতাল-অবরোধে ক্রেতার খরা, বিপাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা!

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘ভাই, কি আর বলব! এক মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধ চলছে; কোন বেচা-বিক্রি নেই। দোকানের ভাড়া-বিদ্যুৎ বিল উঠছে না। খুব কষ্টে আছি। সংসার চলবে কী করে। ধার-দেনার পথও বন্ধ। এমন চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।’

দেশজুড়ে বিএনপি জামায়াতসহ সমমনা দলের ডাকা এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধে ফাঁদে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক খাত। রাজনৈতিক এই অস্থিরতা পরিবহন খাত থেকে শুরু করে অর্থনীতির সব খাতেই সংকট তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসার দৈন্যদশার কথা জানাচ্ছিলেন রাজধানীর ফার্মগেটের কাপড় ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন।

আজিম উদ্দিনের মতো চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে আগে নাকাল হয়ে পড়ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ক্রেতা সংকটে ভুগছেন তারা। বেচা-বিক্রির ভাটা পড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

এদিকে রাজনৈতিক অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে ভয়ানক বিপদ নেমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধের কারণে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক খাতে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা ছিল; তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র তথ্য মতে, দেশে এক দিনের হরতালে দেশে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। চলমান হরতাল অবরোধের কারণে দেশে অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, হরতাল-অবরোধেও খোলা রয়েছে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ক্রেতার অভাবে মালিক ও কর্মচারীরা অবসর সময় কাটাচ্ছেন। হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা আসলেই তাকে নিয়ে হাঁকডাক শুরু হচ্ছে। প্রতিযোগিতা করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা।

কাপড় ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, যে দিনগুলোতে হরতাল অবরোধ থাকে সেই দিনগুলোতে কোন ক্রেতা আসে না। যে দু-একজন আসেন তারা ঘুরে চলে যান। এত বড় মার্কেটে দু-একজন ক্রেতা আসলে কি তাতে বেচাকেনা হয়?

অপর এক ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বলেন, এই যে এক মাস ধরে অবরোধ হরতাল চলছে। এই এক মাসে যে টাকা বেচাকেনা করেছি সেই টাকায় বিদ্যুৎ বিলও হয় না। এরপর আবার দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতনসহ কত টাকা খরচ আছে- একটা দোকান চালাতে।

শ্যামলী স্কয়ারের এক ব্যবসায়ী বলেন, করোনার সময় একবার দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়েছিল। তারপর করোনা শেষ হলে আস্তে আস্তে আবার নতুন করে ব্যবসা গুছিয়ে নিচ্ছি। আর আবার হরতাল-অবরোধ শুরু হলো। এই হরতাল অবরোধে দোকান বন্ধও থাকছে না, তবে বিক্রিও নেই। কিন্তু একদিন দোকান খুললেও অনেকগুলো টাকা খরচ হয়। দোকান খুলে যদি ক্রেতা না আসে দোকানের খরচই না ওঠে তইলে দোকান খুলেই লাভ কি বলেন? এর থেকে তো বন্ধ রাখায় ভালো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড সালেহ উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেকোন দেশেই যদি পলিটিক্যাল স্ট্যাবল না থাকে, যদি অস্থিরতা থাকে তাহলে সেই দেশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। আমরা দেখতেই পাচ্ছি সব ধরনের ওয়ার্কাররা (কর্মীরা) টেনশনে আছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা টেনশনে আছেন, মালিকরা টেনশনে আছে। সব থেকে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে। আর যারা খেটে খাওয়া মানুষ তারা যথাসময়ে যথাস্থানে কাজে যেতে পারছে না। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রান্সপোর্ট খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে এই হরতাল অবরোধে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ প্রায়।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সার্বিকভাবে বলা যায় যে- দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক কোন ঝামেলা না থাকলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। চলমান এই হরতাল অবরোধের কারণে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশে এক দিনের হরতালে দেশে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই হিসেবে বিগত মাস থেকে চলমান হরতাল অবরোধের কারণে দেশে অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ইকোনমিক (অর্থনীতির) সাইজ অনেক বড়। আগে আমাদের মাত্র ৭০ বিলিয়ন ইকোনমিক সাইজ ছিল কিন্তু এখন সেটা ৪৭০ থেকে ৪৮০ বিলিয়ন। এখন আমাদের ইকোনমিক সাইজ বড় হয়েছে; আমাদের ইকোনমিকে ক্ষতিও বেশি লাভও বেশি। দেশের অর্থনীতিকে এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে হরতাল-অবরোধ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *