সারাদেশ

‘পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, অথচ বিবৃতিজীবীরা হারিয়ে গেছে’

ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এক সঙ্গে পথ চলা অনেক দিনের। একই সাথে বিশ্বস্ততার সঙ্গে পার করেছে তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচন। তবে সে বন্ধনে চির ধরেছিলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। তবে তাকে বেশি দূর এগুতে দেননি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। চির থেকে ফাটলে রূপান্তর হবার আগেই বৈঠকে বসেন জোট নেতাদের সঙ্গে। আর তাতেই আবার অটুট হয় জোটের বন্ধন।

মূলত ২০০৪ সাল থেকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলীয় জোট। তারপর থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই করে আসছিলো দলগুলো। তবে দূরত্ব বাড়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেখানে আওয়ামী লীগ দুইটি আসন ছাড়া বাকি সব আসনের জন্য ঘোষণা করে নৌকার প্রার্থী।

তবে সে দূরত্ব ঘোচাতে সময় নিলেও ভুল করেনি আওয়ামী লীগ। ৪ ডিসেম্বর ১৪ দলের শরীকদের সঙ্গে বসে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আশ্বাস দেয় জোটকে সাথে রেখেই নির্বাচন করার। সেদিন জোটের প্রয়োজনে কোনো কোনো আসনে নৌকা প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে শরীকদের সমর্থন দেবার কথাও জানান তিনি। সে জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে প্রধান করে গঠন করে দেন ৪ সদস্যের কমিটিও।

সে কমিটি মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাসদ ও ওয়ার্কাস পার্টির সাথে বৈঠক করে। পরে  ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা এক সঙ্গে নির্বাচন করেছি। নির্বাচন ও আন্দোলন এক সাথে করি। আমরা এখনো বলছি, আমাদের নির্বাচন এক সাথে হবে। আমাদের ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব। সেই সিদ্ধান্তে আমরা অটুট রয়েছি। আসনের ব্যাপারে কোথায় কী করা যায়, কীভাবে আসন বিন্যাস করা যায়, যার যার মতো করে যদি বলে, সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। সে আলোচনা করে আমরা নেত্রীকে জানাব। আজকে মেনন সাহেব, ইনু সাহেব এসেছেন, আলোচনা হয়েছে; আমি সেই বিষয়গুলো নেত্রীকে জানাব। আলাপ করার পর আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।’ 

এ নিয়ে শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে শীঘ্রই সম্মানজনক সমাধানে আশাবাদী। তারা মনে করছেন, আসন বন্টনের সমাধান খুব তাড়াতাড়ি হবে। তবে এবার তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেশি আসন ছাড় চান। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে পজিটিভ আশ্বাস পাবার ও দাবি করেন কেউ কেউ।

মঙ্গলবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানিয়েছিলেন, জোট আছে, জোটের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। যেখানে জোটের প্রার্থী দেয়া হবে সেখানে আওয়ামী লীগের আসন ছেড়ে দেবে। দরকষাকষি হবে এটাই স্বাভাবিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আওয়ামী লীগের শরীক ১৪ দলের প্রভাবশালী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাদের ব্যাপারে ইতিবাচক। ২-১ দিনের মধ্যে আপনারাও জানতে পারবেন বিস্তারিত। তবে এখন এটুকু বলতে পারি, যেটুকু কথা হচ্ছে তা পজিটিভ। আমরা আশাবাদী আসন বণ্টনের ব্যাপারে ইতিবাচক ফল আমরা পাবো।

বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ আলী ফারুকী বার্তা২৪.কম কে বলেন, আসন বণ্টনের বিষয়টা এখনো সমাধান হয়নি, আরও ২-১ দিন সময় লাগবে। আমাদের সিট আগেই দুইটা ছিলো, এবারা আশা করি ইনশাআল্লাহ ৫টা পাবো। একটা এক্সক্লুসিভ বৈঠক হবে। আমরা গতকাল কাদের ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। আমরা জোটগতভাবে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে আছি। এগুলো সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। 

এসময় তরিকত ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-২, চট্টগ্রাম-১৪, কুমিল্লা-৮ অথবা ৯, চাদপুর ৪ অথবা ৫ ও ময়মনসিংহ-৪ আসনের জন্য কথা চলছে বলেও জানান তিনি।  

এনিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমাদের আলোচনা চলছে। অতি দ্রুত এটা (সিট বণ্টন) শেষ হবে। আমরা চেষ্টা করছি এটা বেশি দেরি যেনো না হয়। আমরা আগে বলেছিলাম ১৬-১৭ তারিখের মধ্যে শেষ হবে। আমার মনে হয় তার আগেই শেষ হবে। সমঝোতা ও পারস্পরিক যে বুঝাপড়া এটা এর আগেই হবে।

 জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিলো ১৪ দল। পরে ২০০৬ সালে জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়ে গঠন হয় মহাজোট। সে জোট প্রথমবারের মতো ২০০৮ সালে নির্বাচনে আসে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেদের জন্য ২৬৪টি আসন রেখে বাকী আসনগুলো জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ২৭টিতে, জাসদ তিনটিতে ও ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলো।

এরপর ২০১৪ সালের বিএনপি বিহীন নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলো। সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৪ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ছয় জন, জাসদের পাঁচ, জেপির দুই জন এবং তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফ এর একজন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার মহাজোট শরিক দলগুলোকে দিয়েছিলো ৪৫টি আসন। যার মধ্যে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছিল ২৯টি আসন। আর বাকি ১৬টি আসন দেয়া হয়েছিলো ১৪ দলীয় জোটের শরীকদের। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২২জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ৫ জন, জাসদ (ইনু)-র ৩ জন, তরিকত ফেডারেশন ২ জন, যুক্তফ্রন্ট-বিকল্পধারার ৩ জন, এবং জাসদ (বাদল)-এর ১ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছিলো।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *