সারাদেশ

‘হেফাজতের সমাবেশের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’

ডেস্ক রিপোর্ট: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলছে প্রার্থীদের জোর প্রস্তুতি।ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশসহ নানা কার্যক্রমে ব্যস্ত প্রার্থীরা। তবে কেউ কেউ প্রচারণায় এগিয়ে থাকতে ভাঙছেন নির্বাচনী আচরণ বিধি। এদিকে, এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

এই মুহূর্তে চলছে মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আপিল কার্যক্রম। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার প্রচারণা নিষিদ্ধ। তবে এমন বিধিনিষেধ থাকলেও কিছু কিছু প্রার্থী ক্ষেত্রে তা যেন কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। অভিযোগ উঠেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীরা রঙিন পোস্টার দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারণা শুরুর আগেই বিধি ভেঙে প্রচারণায় নেমেছেন তারা।

ইসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে শোডাউনসহ মনোনয়নপত্র দাখিল, প্রচারণা চালানো, ব্যানার পোস্টার লাগানোসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলা আছে নির্বাচনী আইনে। আর এসব অপরাধের কারণে প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল, ব্যাখ্যা দেওয়াসহ জরিমানার বিধান রয়েছে।

গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিলে বলা হয়, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই। ৫-৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল গ্রহণ। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল শুনানির মাধ্যমে রায় ঘোষণা করা হবে। আগামী ১৭-১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। আর প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ।

নির্বাচন কমিশন গত ২ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের আগে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। ফলে এর আগে কোনো নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনী প্রচারণারও সুযোগ নেই।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ১২ ধারায় বলা আছে, ভোটগ্রহণের ৩ সপ্তাহ পূর্বে কোনো প্রচারণা চালানো যাবে না। এছাড়া প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের সময় ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

তবে নির্বাচনী বিধিমালায় এসব থাকলেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রর্থীদের নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেছে। কেউ শোডাউন দিয়ে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন। আবার প্রার্থী হিসেবে বৈধ হলেই শোডাউন দেন। কেউ কেউ আবার প্রতীক বরাদ্দের আগেই ব্যানার পোস্টার লাগানোসহ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন, জনসমাগম ও নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, বাবা হাজী মো. সেলিম ও নিজের ছবি দিয়ে নির্বাচনী পোস্টার লাগিয়েছেন সোলায়মান সেলিম।

এসব ব্যানার ফেস্টুন নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি মোড়ে, ভবনের দেয়ালে, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় টানানো হয়েছে। ব্যানার ও ফেস্টুনে নিজের বড় ছবি দিয়ে সোলায়মান সেলিম লিখেছেন, সন্ত্রাসের বিপক্ষে, শান্তির স্বপক্ষে ঢাকা-৭ আসনে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নৌকা মার্কায় ভোট দিন।

শুধু তিনিই নন, ঢাকার সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের নৌকার প্রার্থী সাঈদ খোকনের ব্যানার-ফেস্টুনও দেখা গেছে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। তাতেও নৌকায় ভোট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইস্কাটনের মোড়ে দেখে গেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের রঙিন ফেস্টুন দেখা গেছে। যদি এই এলাকা তার নির্বাচনী আসন নয়। এছাড়াও সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ অনেক প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শোকজ করা হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে।

এদিকে ঢাকা ৮ আসনের আফম, বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধেও নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও রাজধানীর শাহবাগের যাদুঘরের গেট, নয়াপল্টন কালভার্ট রোড রুপায়ন টাওয়ার, মৌচাক মোড় ফ্লাইওভার, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর মোড়, দৈনিক বাংলার মোড়, আমতলা মোড়, শাহজাহানপুর চৌরাস্তা বিভিন্ন এলকাায় বাহাউদ্দিনের নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে বিশাল বড় রঙিন ব্যানার, বিলবোর্ড দেখা গেছে। এ সব বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী এই নেতাকে ইসিতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পর্যবেক্ষক হওয়ায় আমা‌দের কা‌ছে অনেকেই অভিযোগের ক‌পি প্রদান ক‌রেছেন। আইন লঙ্ঘ‌নের একা‌ধিক অভি‌যোগ পে‌য়ে‌ছি ঢাকা ৭ আসন থে‌কে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী সে‌লি‌মের পুত্রের বিপরীতে দাঁড়ি‌য়ে‌ছেন জাতীয় পা‌র্টির প্রার্থী তা‌রেক মো. আদিল। তিনি নির্বাচন বি‌ধি লঙ্ঘ‌নের অভিযোগ করেছেন রিটার্নিং অফিসার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে। তার কপি আমাদের কাছে আছে। কমিশন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ানিং বা সতর্কীকরণ এবং কি কারণে আইন লঙ্ঘন করেছে সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেন। প্রাথমিকভাবে সতর্ক করার পরেও তারা যদি আবারও আইন অমান্য করেন তাহলে প্রার্থিতা বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই বিশেষ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ দেখছি না। এদিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। কোন কোন প্রার্থী হয়তো নিয়ম না মেনে আগে থেকে ক্যাম্পেইনে এগিয়ে থাকতে চাচ্ছেন।   

ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বার্তা২৪.কমকে বলেন, যারা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সিদ্ধান্ত আছে। ইতিমধ্যে যারা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তাদের ডেকেছেন। নির্বাচন কমিশন থেকেও তাদেরকে শোকজ করা হচ্ছে। কমিশনে হাজির হওয়ার জন্য তাদেরকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০০-এর বেশি প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *