সারাদেশ

চট্টগ্রামে সেরা ৪২ করাদাতাকে সম্মাননা

ডেস্ক রিপোর্ট: অপরূপ সৌন্দর্য ঘেরা বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষে সোনার চর। এখানে যেনো প্রকৃতি আপন মনে সেজেছে নানা রূপে। রয়েছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। বনবিভাগের সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সহ পশু পাখিদের অভয়াশ্রম। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা। পর্যটনের অপার এই সম্ভাবনাকে এবার কাজে লাগাতে সোনার চরকে ট্যুরিজম এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে রাঙ্গাবালী উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠে সোনার চর। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় সোনালী রং ধারণ করে পুরো সৈকত জুড়ে। এ কারণে ওই চরের নাম দেয়া হয় সোনার চর।

গত ২৭ অক্টোবর ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোনার চরকে ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়াও ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংরক্ষিত এই বনভূমি বন্যপ্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তিতে বন‌বিভাগ বনায়ন করে ওই বনে ছাড়া হয় তিন’শ হরিণ, কয়েকটি বানর ও বন্য মহিষ। এছাড়াও এখনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও নানা প্রজাতির পশু পাখি।

সোনার চরে যা রয়েছে:

২হাজার ২৬.৪৮ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উত্তর এবং পশ্চিমে বুড়া গৌড়াঙ্গ নদী এবং দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে আছে বঙ্গোপসাগর। আর দক্ষিণ পূর্ব দিকে রয়েছে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। দুই পাশে সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছালি এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় একাধিক খাল। বনের মধ্যে রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, ছৌলা, করমচা, হেতাল, বাবলা, নোনাঝাউ, গোলপাতা সহ অসংখ্য প্রজাতির গাছপালা। রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, শুকর, বন বিড়াল, গুইশাপ, চামচিকা সহ বিভিন্ন প্রাণীর উপস্থিতি। আর সারাদিনই পাখির কলরবে মুখর থাকে পুরো চর। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ১০ লক্ষাধিক অতিথি পাখির সমাগম ঘটে এখানে। গাঙচিল, গাঙকবুতর, বালিহাঁস, পাতিহাঁস, সাইবেরিয়ান লালহাঁস, পানকৌড়ি, বক, মদনটাক উড়ে বেড়ায় এখানে-সেখানে। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপরুপ সৃষ্টি।

সোনার চরে উড়ছে অতিথি পাখি কিভাবে যাবেন সোনার চর:

সড়ক পথের থেকে নৌপথে সোনার চরে যাওয়া সহজ। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে সরাসরি চর মোন্তাজের লঞ্চে উঠে চর মোন্তাজ চলে যান, সেখান থেকে ট্রলারে করে সোনার চরে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। আবার কুয়াকাটা থেকেও সোনার চরে যাওয়া যেতে পারে। যেতে হবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। এবং পটুয়াখালী সহর থেকে সড়ক পথে গলাচিপা যেতে হবে। গলাচিপা থেকে নৌপথে লঞ্চ যোগে চর মোন্তাজ এবং চর মনতাজ থেকে সোনার চর। এছাড়া সোনার চর রিজার্ভ ট্রলারে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন:

সোনার চরে থাকার মত আরামদায়ক কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে চর মোন্তাজে রয়েছে বন বিভাগ, স্যাপ বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির ব্যবস্থাপনায় মোটামুটি সুবিধা সম্পন্ন বাংলো। আরো রয়েছে কিছু হোটেল। এছাড়া রয়েছে বনবিভাগের ক্যাম্প। আর আপনি যদি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে চান তবে চরেই তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন। এছাড়া থাকতে পারেন রাঙ্গাবালী জেলা পরিষদ ডাকবাংলো।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে সৈকত লাগোয়া এলাকার বেশ কিছু গাছ মারা গেছে, যার ফলে এখানে আগত পর্যটকরা কিছুটা হতাশা প্রকাশ করছেন।

পানকৌড়ি পর্যটকরা যা বলছেন:

ঢাকা থেকে আগত ফারহানা ইসলাম জলি,‘সোনার চরের কথা আমি তা শুনেছি বা পেপার পত্রিকায় যেমনটা পড়েছি সেটি এখন আর নেই কারণ এখানে অনেক গাছ কাটা পড়েছে ও পড়ে গিয়েছে। আসলে কেন এমন হলো এই কারণ উদঘাটন করা দরকার। তাহলে এই সোনারচর একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে এটি খুবই চমৎকার একটি জায়গা।’

অপর এক পর্যটক জহিরুল ইসলাম বলেন,‘ সোনার চরের অনেক গল্প শুনে ঘুরতে এসেছি আসলে সোনারচরের কাছাকাছি না এসে কেউই বুঝবে না এত সুন্দর একটি জায়গা রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। তাই সোনারচরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত।’

সাগরে বকের উড়াউড়ি পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের উপবন সংরক্ষক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন,‘সোনার চরের সৈকতের গাছের গোঁড়ায় অধিক পরিমাণ বালু জমায় গাছগুলো মারা গেছে। তবে সোনারচরের পূর্বদিকে জেগে ওঠা নতুন চরে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সৃজন করার পাশাপাশি এখানে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে বিশেষ একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।’

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন,‘ সোনারচর সহ এর আশ পাশের দ্বীপ চর নিয়ে বিশেষ পর্যটন এলাকা ঘোষণার জন্য বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ জন্য রাঙ্গাবালী উপজেলার সাথে খুব শীঘ্রই ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *