সারাদেশ

ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড-এ ১৯ পুরস্কার জিতল বিকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাজার মনিটরিং সেলের প্রধান আমিন হেলালী বলেছেন, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির ফলে নতুন করে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত বিদ্যমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। এতে কৃষক ও আমদানিকারক-উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে চলমান তুলকালামের জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি। 

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আমিন হেলালী। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।  

বার্তা২৪.কম: বাজার পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের মূল্য লাফিয়ে বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে আপনারা এই অবস্থায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

আমিন হেলালী: পৃথিবীর অন্য জায়গা থেকে বাংলাদেশের মিডিয়া অনেক শক্তিশালী। পেঁয়াজের দাঙ্গাও কিন্তু আপনারা (গণমাধ্যম) লাগিয়েছেন। অসৎ লোক সব জায়গায় আছে। মানুষ সহজেই বিভ্রান্ত হয়। ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করেনি, সংকুচিত করছে ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত; তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য। এটা তাদের একটা পলিসি, আমাদের দেশেও সেই পলিসি রয়েছে। আমরা কি সুগন্ধী চাল বা বিভিন্ন স্পেশাল চাল এক্সপোর্ট করি না? কৃষিজাত অনেক পণ্য আমরা রফতানি করি, তার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। আমাদের উৎপাদন কখনো বেশি হয় আবার কখনো একটু কম হয়। আমি যদি আমদানির নাম করে বেশি পণ্য নিয়ে আসি তবে তো আমাদের আবার পুনরায় রফতানি করতে হবে। এজন্য সরকার একে নিয়ন্ত্রণ করে। সব আইটেম না, তবে কৃষিজাত পণ্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। ঠিক একইভাবে ভারতও সেটা করছে। এমন কোনো এবনরমাল কেস না। ভারত আমাদের নির্বাচন বা পলিটিক্যাল কোনো কারণে নাখোশ হয়ে এমনটা করলো বাংলাদেশের সঙ্গে, বিষয়টা এমন নয়। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদার জন্য এটি করেছে। মার্চের (২০২৪) ৩১ তারিখ পর্যন্ত যদি কেউ পেঁয়াজ রফতানি করতে হয় তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। অবাধে করতে পারবেন না। তাদের রফতানিকারকদের কেউ যদি বলে, আমার পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হয়েছে। কাছাকাছি কোনো বাজার থাকলে রফতানি করলাম। কারণ ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত হাজার হাজার মাইল। কিন্তু ভারতের ওই চিঠির কারণে বাংলাদেশের মিডিয়া যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে….যেভাবে নিউজটা দিল। তাতে ভোক্তারা তো আগামী কোরবানির ঈদের পেঁয়াজ কিনে নিতে শুরু করেছে। কিন্তু কেন আমি ঘরে এনে স্টক করব? এখন হচ্ছে পেঁয়াজ মৌসুমের শুরু। আমাদের কি এখন আমদানির দরকার আছে? বাজারে তো ইতিমধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু করেছে। যখনই মিডিয়া বোমা মারলো, পুরো বাংলাদেশ কিন্তু….আমি আজ ১০টি মার্কেটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছি, কে একদিনের জন্য বাড়িয়েছে? আলাপ আলোচনা করে তারা জানিয়েছে, বাজারে হয়তো মাল আছে ১০ মণ। মানুষ ন্যায্য মূল্যের পণ্য নিতে লাইন দিয়েছে। বিক্রেতারা তো সুযোগ পাবেই। সেও তো বুদ্ধিমান। দোকানিও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেটা হওয়া উচিত না।

বার্তা২৪.কম: গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বললেন আপনি, কিন্তু ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে কি আপনাদের কোনো দায় নেই? 

আমিন হেলালী: আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ সপ্তাহেই সবাইকে ডেকে আমরা মিটিং করব। দেখি কার কতটুকু স্টক আছে। আগামী কতদিনের মধ্যে আমাদের লাগবে। আমি শ্যামবাজারে কথা বলেছি, শ্যামবাজার আজ আমাকে রিপোর্ট দিয়েছে, আজ হোলসেল (পেঁয়াজ) প্রাইস হলো ৯০-১০০ টাকা। 

বার্তা২৪.কম: কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ভোক্তা পর্যায়ে এটি অনেক বেশি…আপনিই মনিটরিং সেলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন….

আমিন হেলালী: এখন অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। তবে আমি আশাবাদী দুই একদিনের মধ্যে তা স্বাভাবিক হবে। আমরাও যখন সব বাজারের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসব, তারা যখন কথা দিয়ে যাবে; তখন আরও অনেক স্মুথ হয়ে যাবে। এর জন্য আমাদের সবারই দায়িত্ব আছে। গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব আছে। তবে বিষয়টি ঢালাওভাবে আসছে, দু’একটি মিডিয়া ছাড়া। ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি, ভারত মার্চ পর্যন্ত সীমিত করেছে, রফতানি বন্ধ করেনি। অপরদিকে, দেশে এখন পেঁয়াজ উত্তোলন মৌসুমের শুরু।  ৭ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। গণমাধ্যমের নিউজের কারণে সরকার টালমাটাল। এখন দেখা যাবে যে টার্কি থেকে, ইরান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে বলবে সরকার। এখন যদি তারা বাইরে থেকে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি করে নিয়ে আসে তাহলে আমার দেশের উৎপাদকের পেয়াজটা কোথায় যাবে? ।

বার্তা২৪.কম: তার মানে আপনারা কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের মূল্য বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন? 

আমিন হেলালী: অবশ্যই। এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? কৃষক মরে গেলে কী অবস্থা হবে? এটা তো এবনরমাল কেস হয়ে গেছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছে। ৮০-৯০ বা ৯৫ টাকার পেঁয়াজ হয়ে গেছে ১৮০ টাকা বা ২০০ টাকা। এটা আতঙ্ক না? আমরা সংকট নিরসনে এ সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসব। আপনাদেরকেও আমন্ত্রণ করব। সবার কথা শুনে জাতি একটা কনসেনসাসে আসতে পারবে। আমরা তথ্য সংগ্রহ  করছি, দায়িত্বশীলভাবেই মন্তব্য করতে চাই। সংকট হওয়ার কোনো সুযোগই নাই। উল্টো কৃষক মরে যাওয়ার আশঙ্কা অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে। আপনি ধরুন, ইন্ডিয়া দিচ্ছে না। সরকার বললো, যেখান থেকে পারো নিয়ে আসো। দেখা গেল সব জায়গা থেকে বুকিং দিয়ে নিয়ে আসল। এখানে তখন পেঁয়াজের আধিক্য হয়ে যাবে। সবাই তার পুঁজিটা বের করার জন্য এবার কম দামে ছেড়ে দেবে। এতে কৃষকও মরবে, আমদানিকারকও মরবে। কৃষক তার উৎপাদন খরচ পাবে না। ক্রাইসিস আরও বাড়বে। কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদন বাদ দিয়ে অন্য কিছু করবে। 

বার্তা২৪.কম: তার মানে আপনি সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা আপনি করছেন? 

আমিন হেলালী: হ্যাঁ, আমি আশঙ্কা করছি। সবারই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। ভোক্তা, বিক্রেতা সর্বোপরি গণমাধ্যমেরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। বিশেষ করে গণমাধ্যমের সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কারণ মিডিয়ার খবরের কারণে পুরো দেশের মানুষ কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে উঠতে পারে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *