সারাদেশ

মির্জা ফখরুল জেলের বাইরে থাকলে ভালো হতো: কাদের

ডেস্ক রিপোর্ট: সংসদ নির্বাচনে শরীকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নৌকা ছেড়ে দিতে রাজি হলেও স্বতন্ত্রদের নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় বাড়ছে অস্বস্তি। আসন বণ্টনের বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ গত ২৫ নভেম্বর প্রার্থিতা ঘোষণা করে। তবে সেখানে শরিকদের জন্য কোন আসন না ছেড়েই ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসনে প্রার্থী দেয় দলটি। যা নিয়ে শরিকরা কোন রাখ ঢাক না রেখেই সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের। পরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করে ১৪ দল। ফলে আসন বণ্টন করতে ৪ জনের একটি কমিটিও করে দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তবে সে কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দলগুলো।

স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তি আছে নৌকার প্রার্থীদের মাঝেও। তারা মনে করেছিলেন, স্বতন্ত্রদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে দল। তবে এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আগের অবস্থানেই অনঢ় আছে দলটি। অন্যদিকে, মনোনয়ন বাছাই শেষে ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনের যোগ্য বলে ঘোষণা করেছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এই অবস্থায় দলীয় ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ঘটতে শুরু করেছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই নামছেন নৌকার বিপক্ষে আবার কোথাও কোথাও হচ্ছে সহিংসতাও।

একাদশ সংসদ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শরীক ১৪ দলের জন্য ১৬ টি আসন ছেড়ে দিলেও ৮টি আসনে জয়ী হতে পারে শরিকরা। তাই আওয়ামী লীগ এবার শুধু জয়ী হতে পারবে এমন আসনগুলোতেই ছাড় দিতে চায় শরিকদের। অন্যদিকে শরিকরা চায় আরও বেশি আসনে সমঝোতা। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারেও তাদের আপত্তি। দলগুলো চায়, শরিকদের ছেড়ে দেয়া আসনে নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও প্রত্যাহার করতে হবে। তবে তাতে সায় দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

শরীকদের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করবো শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রেরই বিষয়। তারা (স্বতন্ত্র প্রার্থীরা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। সে সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের শরিকদের কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।’

এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ শরিকদের জন্য ছেড়ে দিতে পারে এমন বেশ কিছু আসন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে শরিক প্রার্থীদের। সে ক্ষেত্রে, কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শরিকদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলেও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন।  সে ক্ষেত্রে শরিকরা বলছেন, নৌকা না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের হওয়ায় তাদের আসলে লড়তে হবে আওয়ামী লীগেরই বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সুফল তারা পাবেন না। তাই তারা চান, নৌকার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রকেও যেনো প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নেয় দলটি।

কুষ্টিয়া-২ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার আর ছাড় দিতে নারাজ দলটির নেতারা। সেই সাথে মিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে নির্বাচনের জন্য নিজের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।

যদিও আসনটিতে আওয়ামী লীগ কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি। তথাপি, কামারুল আরেফিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখনো মাঠে আছেন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থীতা বাতিল হলেও আপিল করে ফিরে পান প্রার্থিতা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও একজোট তার সাথে। সে ক্ষেত্রে এ আসনেও কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে জোট প্রার্থীকে।

বগুড়া-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একেএম রেজাউল করিম তানসেন। এবারও জাসদ থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আসনটি থেকে একাদশ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলে উপনির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তানসেন জয়ী হন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। তাকে যদি জোট সমীকরণে আওয়ামী লীগ প্রত্যাহার ও করে নেয়, তারপর ও শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর মুখে পড়তে হবে তাকে।

এছাড়াও এ আসনটিতে গত ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হিরো আলম। সে নির্বাচনে রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এবারও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। সে ক্ষেত্রে এ আসনটিতেও জোটের প্রার্থীকে পরতে হবে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে।

রাজশাহী-২ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি জোট প্রার্থী হিসেবে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার তার বিরুদ্ধে শরীকরা সহ সবাই একজোট। তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, নির্বাচিত হবার পর খবর রাখেন না নেতাকর্মীদের। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী কামাল।

এছাড়াও আসনটি থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদ ও রেজাউন নবী আল মামুন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে তাদের সবার মনোনয়ন বাতিল হলেও, আপিল করেছেন সবাই। সে ক্ষেত্রে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলে লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে জোটের প্রার্থীকে।

চট্টগ্রাম-২ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ত্বরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি জোট থেকে মনোনয়ন চান আসনটিতে। তবে এবার আওয়ামী লীগ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি কে নৌকার মনোনয়ন দেন। জোট সমীকরণে শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পরতে হবে তাকে।

এছাড়াও ফেনী-১, মুন্সীগঞ্জ-১, লক্ষ্মীপুর-৪, মৌলভীবাজার-২, লক্ষ্মীপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, পিরোজপুর-২, চট্টগ্রাম-৮ আসনসহ আরও বেশ কিছু আসনে ছাড় চায় শরীক দলগুলো। দফায় দফায় বৈঠক করেও সমঝোতায় না আসতে পারায় আরও সময় চায় আওয়ামী লীগ। তবে ক্ষমতাসীন দলের সময় ক্ষেপনের কৌশলে খুশি নয় শরীকরা। তারা চায় দ্রুত সমাধানে আসতে। তবে যায় হউক, তা হতে হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের আগেই।

জোট বিষয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ কে বলেছি, জোটকে যে প্রার্থী দেবেন, সেখানে আওয়ামী লীগের কোন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে না। যদি থাকে, স্বতন্ত্র হলেও সে যেহেতু আওয়ামী লীগের নেতা; দল বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইটা হয়ে যাবে। জোটের যে নীতি, সে নীতি মার খাবে। জোটের প্রার্থীকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে নির্বিঘ্নে বিজয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর একসঙ্গে কাজ করা উচিত।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *