সারাদেশ

আমদানি মূল্য পরিশোধের সময়সীমা বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট: মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হ্রাস করার লক্ষ্যে মিডওয়াইফারি খাত বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যু, অসুস্থতা এবং মৃতসন্তান প্রসব কমানোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আসছে দিনগুলোতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের সম্যক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে মিডওয়াইফারি শিক্ষা ও পেশার সম্প্রসারণ।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) হোটেল ওয়েস্টিনে ‘Transitioning to Midwifery Models of Care: Advancements made in Bangladesh’- শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর (ডিজিএনএম) এবং মিডওয়াইফারি এডুকেশন প্রোগ্রাম, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশে মিডওয়াইফারিতে অর্জিত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দিকে তুলে ধরে আলোচকরা বলেন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হ্রাস করার লক্ষ্যে এই খাত বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। উন্নয়ন পরিমাপের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সূচক ব্যবহার করে, সরকারের নেতৃত্বে এবং তত্ত্বাবধায়নে নীতি নির্ধারনিমহলের জন্য গবেষণা প্রতিবেদনের যে সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি তৈরি করা হয়েছে তাতে মিডওয়াইফারিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত ফলপ্রসু হবে বলে দেখা গেছে। মিডওয়াইফারি শিক্ষার সুফল বিবেচনা করলে এই শিক্ষা কার্যক্রমে ক্রমাগত বিনিয়োগ করাটাই সবদিক থেকে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি মিডওয়াইফারি শিক্ষার জন্য উপযুক্ত নীতিমালা প্রনয়ণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের মাধ্যমে মিডওয়াইফদের একটি দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে- ২০০৮ সাল থেকে সরকারে নীতিগত অবস্থান, কৌশলগত দিকনির্দেশনা গ্রহণ, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল অ্যাক্ট এবং ২০১৮ সালে মিডওয়াইফারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা।

বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতিতে মিডওয়াইফারি শিক্ষা, প্রয়োজনীয় সহযোগি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা এবং তাদের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করার উদ্যোগকে অগ্রগতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, সঙ্কটের সময় মিডওয়াইফরা যে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে সফলভাবে তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে মিডওয়াইফারিকে একীভূত করেছে, মিডওয়াইফারি পরিষেবার সহজলভ্যতা বাড়িয়েছে, মিডওয়াইফ লেড কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পাবলিক সেক্টরে মিডওয়াইফদের নিয়োগ দিয়েছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর বলেন, ২০৩০ সালের জন্য নির্ধারিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা বাংলাদেশে মিডওয়াইফারি পেশায় বিদ্যমান শূন্যতা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি এবং সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, পেশাদার মিডওয়াইফদের দেওয়া পূর্নাঙ্গ সেবা মাতৃত্বকালীন পরিচর্যা, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমাতে এবং অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখন সরকারকে পর্যায়ক্রমে সমগ্র বাংলাদেশে মিডওয়াইফ এর সেবার এই পরিক্ষীত মডেলটির শুধু সম্প্রসারণ করে যেতে হবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডওয়াইফারি শিক্ষা কার্যক্রমের প্রধান ডা. শারমিনা রহমান বলেন, বাংলাদেশে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে মিডওয়াইফরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। সারাদেশে তাদের পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে অদূর ভবিষ্যতে জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধায় ২২ হাজারেরও বেশি মিডওয়াইফের নিয়োগ এবং পদায়ন করা প্রয়োজন। মিডওয়াইফারি শিক্ষা এবং পরিষেবার জন্য বেসরকারী খাতের অন্তর্ভূক্তিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

গবেষণা প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্যখাতের সাথে জড়িত সকল নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি এবং দেশের মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যতের সাথে জড়িত সকল অংশীদারের জন্য মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারবে বলে আলোচকরা মতামত দেন। দেশব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে এবং দক্ষ মিডওয়াইফদের জন্য সঠিক কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে অনুষ্ঠানে বক্তারা সামগ্রিক ভাবে কাজের পরিবেশের উন্নতি এবং নারী ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইউএনএফপি-বাংলাদেশ অঞ্চলের মিডওয়াইফারি স্পেশালিস্ট জয় কেম্প, বেগম রোকেয়া পদক বিজয়ী ডা. হালিদা হানুম আখতার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্টার রাশিদা আখতার।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *