সারাদেশ

নতুন কারিকুলাম: প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ৩৯৩ জন শিক্ষক

ডেস্ক রিপোর্ট: শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড-শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে এই বাক্যটি বাল্যকালে শিখিয়েছেন স্কুলের মাস্টাররা। প্রত্যেক ধর্মেই শিক্ষা গ্রহণের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি দেশের মূল সম্পদ হচ্ছে শিক্ষিত ও কর্মমুখী মানবসম্পদ। যে সম্প্রদায় যত বেশি শিক্ষিত, তারা সমসাময়িক সময়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে শিক্ষায় নানামুখি পদক্ষেপ ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জিং বিষয়। শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়, বঙ্গবন্ধু তা অনুধাবন করেছিলেন। অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা। তিনি সে লক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, সংবিধানে শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে উপস্থাপন, শিক্ষা কমিশন গঠন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছেন।

দেশের স্বাধীনতার পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতির ব্যতিরেকে শিক্ষা ব্যবস্থায় নানান সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’। ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিশনের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এই কমিশন কুদরত-ই-খুদা কমিশন নামেও পরিচিতি পায়। কমিশন প্রশ্নমালার আকারে শিক্ষিত এলিট শ্রেণির লোকদের নিকট থেকে মতামত গ্রহণ করে এবং ওই সব মতামত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই বাছাই করে প্রণীত রিপোর্টে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ করে। কমিশন ১৯৭৪ সালের ৩০ মে সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।

দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের ওপর ভিত্তি করে কমিশন তার রিপোর্ট প্রণয়ন করে। এই রিপোর্ট প্রণয়নে সমসাময়িক বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতও বিবেচনায় আনা হয়। কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার সকল স্তরে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং ভবিষ্যৎ কর্ম-সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে শিক্ষার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কতিপয় বড় ধরণের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়।

কমিশনের মতে, প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। মাধ্যমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি চার বছর মেয়াদি সম্মিলিত ডিগ্রি কোর্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স চালু হবে। কমিশন প্রাথমিক স্তরে সর্বজনীন ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন, প্রচলিত অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা (১ম থেকে ৫ম শ্রেণি) ১৯৮০ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলক করণ এবং ১৯৮৩ সাল নাগাদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করে। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এনে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে পনের বছর বয়স পর্যন্ত তাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়।

শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বিতীয় সংস্করণটি হয় ১৯৭৬ সালে জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি নামে। কুদরত-ই-খুদা কমিশনের ১৯৭৪ সালের সুপারিশের আলোকে ১৯৭৫ সালে সরকার জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। প্রফেসর শামসুল হকের নেতৃত্বে ৫১ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সমন্বয়ে গঠিত এই জাতীয় কমিটি ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে এর কার্যক্রম শুরু করে। এই কমিটি জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি বিশদ কার্যপ্রণালী ও কর্মকৌশল গড়ে তোলে। লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কমিটি দশটি সাব-কমিটি ও ২৭টি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি ১৯৭৬, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে সাত খণ্ডে এর সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করে। কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে একমুখী ও সমরূপ মাধ্যমিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রবর্তন এবং ১৯৮০ সালের স্কুল সেশন থেকে নবম শ্রেণি স্তরে এই পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ করে।

১৯৭৮ সালে সরকার কুদরত-ই-খুদা কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং শিক্ষার সমস্যাবলি নতুনভাবে চিহ্নিত করার উদ্দেশে একটি উপদেষ্টা কমিটি নিয়োগ দেয়। এই কমিটি ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি সুপারিশ শিরোনামে একটি রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় যাতে জনগণ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। রিপোর্টে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলিত কাঠামোকে তিনটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়, যথা নিম্ন মাধ্যমিক ৩ বছর, মাধ্যমিক ২ বছর এবং উচ্চ মাধ্যমিক ২ বছর। মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে, সাধারণ শিক্ষাস্তরের সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার স্তরের সমানুপাতের বিষয়টি এমনভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন যাতে মাদরাসার ‘দাখিল’ স্তর সাধারণ মাধ্যমিক স্তরের এবং ‘আলিম’ স্তর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সমপর্যায়ভুক্ত হয়।

১৯৮৩ সালে গঠিত মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট ব্যাপক প্রচারলাভ করেনি এবং এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৮৭) বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মফিজউদ্দীন আহমদকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিশনকে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, পুনর্বিন্যাস ও উন্নয়নের উপায় সুপারিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশনের চেয়ারম্যানের নামানুসারে এটি মফিজউদ্দীন শিক্ষা কমিশন নামেও পরিচিতি লাভ করে। এই কমিশন সেমিনার, আলোচনাসভা ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী শ্রেণি, রাজনৈতিক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে পরামর্শ ও প্রস্তাব গ্রহণ করে। কমিশনের দুই সদস্য বিশিষ্ট দুটি দল উন্নততর শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার লক্ষ্যে থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন ও জাপান সফর করেন। কমিশন ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।

কমিশন দেশে উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি ও উৎকর্ষের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা সম্বলিত সুপারিশ পেশ করে। রিপোর্টে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্স এবং দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন এবং ডিগ্রি কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়। কমিশন প্রস্তাব দেয় যে, ডিগ্রি পর্যায়ের ছাত্ররা তাদের পঠনীয় হিসেবে তিনটি বিষয় নির্বাচন করবে এবং তৃতীয় বর্ষে তার মধ্যে যেকোন একটি বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করবে। কোনো ছাত্র ফাইনাল পরীক্ষায় এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে যে বিষয়ে ৭০ শতাংশের অধিক নম্বর পাবে তাকে ওই বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি প্রদান করা হবে। কমিশনের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে ছিল- প্রতিটি বৃহত্তর জেলায়, বিভাগীয় শহরে এবং রাজধানীতে একটি করে কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণ; দুটি অধিভুক্তি দাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং প্রথম ডিগ্রি প্রদানকারী সকল সাধারণ কলেজকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনয়ন; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য নীতি ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকরণ; সরকারকর্তৃক বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের পূর্ণ বেতন ও ভাতাদি প্রদান; বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনার জন্য সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার স্থাপন ও গবেষণা কেন্দ্রের উন্নয়ন, মাস্টার্স কোর্সে গবেষণার সুযোগ, পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য ছাত্রদের ফেলোশিপ প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও পিএইচডি পরবর্তী গবেষণার জন্য কোনো বিশেষ বিভাগকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলা; বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপ্লয়মেন্ট ব্যুরো স্থাপন করে ছাত্রদের জন্য চাকরি লাভের সুযোগ সৃষ্টি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি জারিকৃত এক আদেশবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এম শামসুল হককে চেয়ারম্যান করে ৫৬ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। একটি বাস্তবধর্মী, গণমুখী ও গতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়নে কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কমিশন দেশের জন্য উপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালায়। কমিশন ১৯৯৭ সালে এর রিপোর্ট পেশ করে। কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার তিনটি পর্যায়ের সুপারিশ করা হয়েছে, প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর ও উচ্চশিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার পরিধি পাঁচ বছরের পরিবর্তে আট বছর করার সুপারিশ করা হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ২০০১ সালে ড. এম এ বারীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২০০২ সালে রিপোর্ট পেশ করে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার ও পরিবর্তনের সুপারিশ করে। এসব সুপারিশ ২০০৩ সালে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন কর্তৃক বিবেচনায় আনা হয়।

শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ ছিল ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন। এই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এই কমিশন মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন নামেও পরিচিত। এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা- সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষা। কমিশন শিক্ষার সার্বিক ক্ষেত্রে মোট ৮৮০টি সুপারিশ প্রণয়ন করে। কমিশন ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্য নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষালাভের সমান সুযোগ সৃষ্টির এবং অনুন্নত এলাকায় সরকারি অর্থায়নে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করে। কমিশন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, একমুখী মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত হ্রাস, শিক্ষকদের যোগ্যতা আপগ্রেড করা, কারিকুলাম ও শিক্ষাদান পদ্ধতির সংস্কার এবং মাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির উৎকর্ষের সুপারিশ করে। কমিশনের রিপোর্টে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নির্বাচনের সুপারিশ করে। শিক্ষকদের বেতন স্কেল, পদোন্নতির মানদণ্ড এবং চাকরির শর্তাবলী এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কমিশন মত প্রকাশ করে যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাবার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে একটি টেলিভিশন চ্যানেল নিয়োজিত করা যায়। এছাড়াও প্রাক-প্রাথমিক স্তর ও অবারিত শিক্ষার জন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা যায়। মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন পদ্ধতিতে গড়ে তুলতে হবে যাতে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীরাও জীবিকা অর্জনের কোনোও না কোনো পথ বেছে নিতে পারে। মানবসম্পদের যথার্থ ব্যবহারের এমন জাতীয় নীতি রূপদান করা প্রয়োজন যাতে শিক্ষিত বেকারত্বের সৃষ্টি না হয়।

সরকার ২০০০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিকে সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। এই কমিটি ১৯৭৪ সালের কুদরাত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট এবং ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকে একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর খসড়া সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হয় ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর।

কমিটির সুপারিশের মুখ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- স্নাতকপূর্ব শিক্ষার প্রচলিত তিনটি পর্যায়কে দুইটি পর্যায়ে রূপান্তর, শিক্ষার সকল পর্যায়ে কতিপয় আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ, শিক্ষাকে আরও প্রয়োজন-নির্ভর করা, এবং একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন। এই শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ আবশ্যিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করে মাদরাসা শিক্ষাকে পুনর্বিন্যাস করার কথাও বলা হয়। কমিটি বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য একটি কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানান গবেষণা করে সরকার। যার প্রেক্ষিতে নতুন শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২৩ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরু করে। এ বছর ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে ৩য়, ৪র্থ, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে চালু হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন এই শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমের মূল ভিত্তি হলো- মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত চেতনা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য, নতুন শিক্ষাক্রমের অভিলক্ষ, সকল শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা বিকাশে কার্যকর ও নমনীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীর বিকাশ ও উৎকর্যের সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের বাইরেও বহুমাত্রিক শিখনের সুযোগ সৃষ্টি ও স্বীকৃতি প্রদান, সংবেদনশীল, জবাবদিহিমূলক, একীভূত ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাব্যবস্থার সকল পর্যায়ে দায়িত্বশীল, স্ব-প্রণোদিত, দক্ষ ও সংবেদনশীল, জবাবদিহিমূলক, একীভূত ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ঠিক করা হয়।

নতুন এই শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি থাকবে না। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। ২০২৩ সাল থেকে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। সামষ্টিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগে পড়বে- একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। আগের মত ৯ম-১০ম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজনের সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

নতুন ‘শিক্ষা আইন-২০২২’ এ ৫৮টি বিধান রেখে খসড়া চূড়ান্ত হয়। এই আইনে নোট-গাইড প্রকাশ ও বাজারজাত করা নিষিদ্ধ করা হয়। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে চার স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। তা হলো- ১ম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক; ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক; একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা স্তর। এছাড়া আলাদাভাবে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কথাও আইনে বলা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *