সারাদেশ

উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে: এমপি ডিউক

ডেস্ক রিপোর্ট: একই সময়! একই জায়গা! মানুষও একই! কিন্তু সেই মানুষগুলোকে আগে-পিছে করে বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও প্রচার করা হলো তিন ইউনিটের নামে।

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, তফসিল বাতিলসহ নানা দাবিতে বিএনপির চলমান অবরোধ-হরতালের ১০ম দফার প্রথমদিন গত ৬ ডিসেম্বর এই কাণ্ড ঘটায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি, সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপি, চট্টগ্রাম উত্তর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের একাংশ। সেই ভিডিওগুলো প্রচার করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ এ।

বার্তা২৪.কমের নিজস্ব অনুসন্ধান ও বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে ভিডিওগুলো যাচাই করে একই জায়গা ও একই ব্যক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। একই মিছিলকে খণ্ড খণ্ড করে তিন ইউনিটের নামে দেখানো নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাই সমালোচনা করছেন। তারা এটির নাম দিয়েছেন, ‘ফেক রাজনীতি’।

কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আসতে ও আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় আছেন এটি জানান দিতেই তিন ইউনিটের কিছু নেতা ভিডিওগুলোকে খণ্ড খণ্ড করে সংগঠনের মিডিয়া সেলে পাঠায় বলে জানা গেছে। আর মিডিয়া সেলও যাচাই না করে সেই ভিডিওগুলো নিজেদের ফেসবুক পেজে ছেড়ে দেয়।

একই মিছিল তিন ইউনিটের নামে:

৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ১৭মিনিটে ২৮ সেকেন্ডের একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও ছাড়া হয় বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে। ‘সীতাকুণ্ড উপজেলা, চট্টগ্রাম উত্তর’ এর নামে ছাড়া সেই ভিডিওর ওপরে আরও লেখা হয়, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা, নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবিতে ১০ম দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধের সমর্থনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওতাধীন সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ মিছিল। এতে উপস্থিত দেখানো হয় উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কাজী সেলিম উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাহেদুল ইসলাম,আবদুল্লাহ আল মামুন, যুবদল নেতা শাহাদাত হোসেনকে। 

তিনটি মিছিলেই কয়েকজন নেতাকে একই পোশাকে দেখা গেছে। ভিডিওর স্ক্রিনশট থেকে। একইদিন বেলা ১টায় ১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করা হয় বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে। ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলা’ বিএনপির নামে প্রকাশ করা হয়। এবারের ভিডিওতে বলা হয় অবরোধের সমর্থনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ঢাকা-চিটাগং মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ মিছিল। এতে উপস্থিত থাকাদের মধ্যে কয়েকজনের নামও দেওয়া হয়। নামগুলো হলো চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জি. বেলায়েত হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, কাজী মো. সালাহ্ উদ্দীন, সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দীন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজি, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছ আক্তার টিটু।

পরদিন ৭ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ৪৯ সেকেন্ডের আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয় বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে। ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল’-এর নামে ছাড়া এই বিক্ষোভ মিছিলে থাকা নেতাদের কয়েকজনের নামও দেওয়া হয়। তারা হলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কাজী মো. সেলিম উদ্দিন ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিস আকতার টিটু। তবে বিএনপি ও ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘এই মিছিলের ভিডিওটিও ৬ ডিসেম্বরের। সেখানে থাকা নেতাকর্মীদের পোশাক দেখলেই সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়। নিশ্চয় সবাই একই পোশাকে পরপর দুদিন একই জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করবেন না।’

মিডিয়া সেলে প্রকাশ করা এই তিন ভিডিও এবং ভিডিওর সঙ্গে দেওয়া নেতাদের নাম পর্যালোচনা করেও বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেননা কয়েকজন নেতা তিনটি বিক্ষোভ মিছিলেই অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে ভিডিওগুলোর সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে।

এই মিছিলগুলোতে অংশ নেওয়া বিএনপি ও ছাত্রদলের তিনজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের জিপিএস ইস্পাত কারখানা এলাকায় ৬ ডিসেম্বর ভোরে এই ঝটিকা মিছিলটি করা হয়েছিল। ৪-৫ মিনিট স্থায়ী ছিল মিছিলটি। মিছিলটি করার সময় তিন ভাগে খণ্ড খণ্ড হয়ে তিন ইউনিটের প্রধান নেতাদের সামনে এনে পৃথকভাবে ভিডিও করা হয়। সেই ভিডিওগুলো পরে তিন ইউনিটের নামে মিডিয়া সেলের কাছে পাঠানো হয়।

এমন নেতিবাচক রাজনীতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি-ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, ‘এমন ঘটনা চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে।

তিনটি মিছিলেই কয়েকজন নেতাকে একই পোশাকে দেখা গেছে। ভিডিওর স্ক্রিনশট থেকে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সরকারপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে হাস্যরস করতে পারে। মূলত ভবিষ্যতে কমিটিতে সুবিধা পেতে তিন ইউনিটের নামে মিছিল দেখিয়েছেন কিছু নেতা। কিন্তু গুটিকয়েকজনের অপরাজনীতির কারণে বিএনপির মতো বৃহত্তম একটি দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ণ হয়েছে। পাশাপাশি এর প্রভাব পড়েছে তৃণমূলে, যারা পুলিশের নির্যাতনের ভয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া-তাদের মনোবলেও আঘাত দিয়েছে এমন ঘটনা।’

তিনটি মিছিলেই বিএনপি ও ছাত্রদলের উত্তর জেলা শাখার শীর্ষ নেতারা ছিলেন না। এই মিছিলগুলো মূলত হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। অভিযোগ আছে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের পরামর্শ ও নির্দেশে এই মিছিলগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাহবুবের রহমান শামীম ও নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

একই বিষয়ে কথা বলতে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার এবং উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল আফছার জুয়েলকে ফোন দিলে, তাদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে মুঠোফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এই সময়ে পরিচিত নম্বর বাদ দিয়ে অন্য নম্বরে এবং অনলাইনে যোগাযোগ সারছেন তারা। সে কারণে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *