সারাদেশ

ভোটের মাঠে টক্কর হবে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের

ডেস্ক রিপোর্ট: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না আসার শূন্যতা পূর্ণ করেছেন একগুচ্ছ স্বতন্ত্র প্রার্থী। দেশবিদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিয়ামক শক্তি এখন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। শীতের আবেশ ছিন্ন করে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের টক্কর। চাপমুক্ত নির্বাচন হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সবচেয়ে বড় চমক দেখাবেন বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী। অভিজ্ঞ মহলের মতামত আর সরেজমিন তথ্য জানাচ্ছে ভোটের মাঠে জয়পরাজয় নির্ধারণী এমনই মুখোমুখি লড়াইয়ের চিত্র।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই শেষে এখন চলছে চূড়ান্ত জনসংযোগ ও প্রচারণা পর্ব। ভোটের বাদ্য শোনা যাচ্ছে রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে। সর্বত্র চলছে ভোট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কের ঝড়। বাদ যাচ্ছে না গ্রামের হাট-বাজারের চায়ের দোকানও।

আলোচনার মুখ্য বিষয়- ভোটের মাঠে কে বিজয়ী হবে, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নাকি স্বতন্ত্র? এবার নির্বাচনে কোনোভাবেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের প্রতি রয়েছে জনসর্মথনের পাশাপাশি দলের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সুপ্ত সহানুভূতি। কেন্দ্রে ব্যাপক হারে ভোটার আনতে ও নির্বাচনী ট্রেনকে বেগবান করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দেখা যাচ্ছে অগ্রণী ভূমিকায়।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন একতরফা নির্বাচনের কলঙ্ক থেকে। আওয়ামী লীগের অনেকে বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে। ফলে এদের রাজনৈতিক শক্তি ও জনসমর্থনকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ সহ আরও অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগেরই বড় বড় নেতা ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের তথ্যে জানা গেছে, জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকায় কর্মী-সমর্থকদের দাবির মুখে তাঁরা ভোটের মাঠে নেমেছেন। দলের শীর্ষস্তর থেকেও তাঁদের প্রতি রয়েছে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’।

ফলে সাংগঠিকভাবে আওয়ামী লীগ নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করলেও দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা সমর্থন করবেন অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে, যারা আসলে দলেরই লোক। কোথাও দলীয় প্রার্থী না থাকায় বা প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয় সংগঠনের ‘গ্যাপ’ থাকায় অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন দলের বড় একটা অংশ। বিভিন্ন সংস্থার গোপন জরিপ রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরব অংশগ্রহণের কারণেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগ ২৬৩ আসনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবে। একই দলের ভেতর থেকে পরিস্থিতিগত কারণে বহু শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকায় সহজে জয় আসবে না অনেক আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। ১৫ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকেও লড়াই করে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে বলে মাঠের তথ্য থেকে জানা গেছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজয়ও বরণ করতে পারেন বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এতে অবশ্য আওয়ামী লীগেরই লাভ হবে। একতরফা নির্বাচনে সব আসনে আওয়ামী লীগে বিজয় হলে যে গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কট সৃষ্ট হতো, কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হলে সে বিপদও কেটে যাবে।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ পেয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচনে প্রার্থীদের বড় অংশই স্বতন্ত্র। তাছাড়া, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে প্রার্থী দিয়েছে ২৭টি দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছে ২৬৩ আসনে। দলটির আরও ২৬৯ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়াই করছেন; যাঁরা ইতিমধ্যে ‘আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে দলের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে পরিচিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ জন বর্তমান সংসদ সদস্যও রয়েছেন, যাঁরা এবার দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ বেশ নমনীয়। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে সদলবলে লড়াই করছেন বিজয়ী হবার আশায়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন বেড়েছে, ভোটার উপস্থিতির সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শুরুতে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। বাছাই ও আপিল শেষে তাদের বৈধ প্রার্থী ছিল ২৯৩ জন। সমঝোতার মাধ্যমে ১৪–দলীয় জোটের শরিক এবং বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ৩২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনের দুটিতে আগে থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা প্রতীকের) দেয়নি। বাকি ৩০টি আসনে গতকাল নৌকার প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এখন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছে ২৬৩ আসনে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক জাসদ তিনটি (বগুড়া-৩, কুষ্টিয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৪) আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি (রাজশাহী–২ ও বরিশাল–২) আসনে এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) পিরোজপুর–১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় নির্বাচন করবে। জাসদ জানিয়েছে, মোট ৬৬টি আসনে তাদের প্রার্থী আছে। তাঁদের মধ্যে ৬৩ জন দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে এবং তিনজন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন।

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে ৭৩১টি বাতিল হয়। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান ২৮০ জন। আর বাছাইয়ে বৈধ হওয়ার পরও আপিলে বাদ পড়েন ৫ জন। গতকাল ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন সারা দেশে ৩৪৭ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *