সারাদেশ

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভা, পঞ্চগড়ে আনন্দ মিছিল

ডেস্ক রিপোর্ট: নানা নাটকীয়তার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬ টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে নৌকা প্রতীক না থাকলেও তাদের লড়তে হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে পুড়তে পারে ১৪ প্রার্থীর কপাল।

এর আগে, ২৫ নভেম্বর ২৯৮ টি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তারপর থেকে আসন বণ্টন নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয় জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে আসন বণ্টন নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসে দলটি। সেখানে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির জন্য ২৬ টি আসন ও ১৪ দলীয় শরিকদের জন্য ৬টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের আগে থেকেই জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসলেও কথা পাল্টেছে বার বার। শেষ পর্যন্ত ২৮৩টি আসনে প্রার্থিতা দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের ছেড়ে ২৬টি ছাড়াও বাকি সব আসনেই লাঙ্গল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দলটি।

আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও ছিল লুকোচুরি। দলটির সভাপতিও কিছুদিন ধরে এড়িয়ে চলেন দলের নেতাকর্মীসহ গণমাধ্যমকে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে আসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়। তবে সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে ২৬ আসনের সমঝোতাতেই নির্বাচনে আসে দলটি।

জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়া আসনগুলো থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে কোন সমঝোতায় আসেনি আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ সদস্য সহ আওয়ামী লীগের হ্যাভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে লাঙ্গল প্রার্থীদের। এমন অবস্থায়, অনেক প্রার্থীকেই জামানত হারানোর মত অবস্থায় ও পরতে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ব্যাপারে তারাও কিছু টা চিন্তিত। তবে তারা জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগের নৌকা না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষেই দলটির নেতাকর্মী কাজ করবে বলে মনে করেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করে সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের হস্তক্ষেপ চান তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রকাশ্য নৌকার চেয়ে অপ্রকাশ্য নৌকা নিয়েই বেশি শঙ্কিত। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা কতটা টানতে পারবেন তাদের পক্ষে তার উপরই অনেকটা জয় পরাজয় নির্ভর করছে বলে মনে করেছেন তারা। জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যাহার করা ২৬ টি আসন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তার অধিকাংশতেই লাঙ্গলকে লড়তে হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের বিরুদ্ধে। সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নির্ধারণ হবে ফলাফল। তাই নৌকা না থাকলেও আশঙ্কা কাটছে না লাঙ্গল প্রার্থীদের।

নীলফামারী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়বেন রানা মোহাম্মদ সোহেল। আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেও নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অপর স্বতন্ত্ররা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ শামিম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুকুম আলী খান ও থাকছেন মাঠের লড়াইয়ে। তাই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেই পড়তে হচ্ছে লাঙ্গলকে।

নীলফামারী-৪ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন আহসান আদেলুর রহমান। সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিনসাখাওয়াত হোসেন লড়বেন এ আসন থেকে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হ্যাভিওয়েট স্বতন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

রংপুর-১ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু ও সাবেক জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তাই আসনটিতে ত্রিমুখী নির্বাচনি লড়াইয়ে জিতে আসতে হবে লাঙ্গলকে।

গাইবান্ধা-২ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল পেয়েছেন আব্দুর রশিদ সরকার। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন সদ্য সাবেক গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবীর। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন, তবে নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়াও তার আরেক পরিচয় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকার শাহ্ আবদুল হামিদের নাতি ও গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম জিন্না। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ মাহমুদুর রহমান মান্নাকে হারিয়ে আবার সংসদ সদস্য হন। আসনটি তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম। এটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত হওয়ায় বিএনপির সাবেক নেত্রী কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে লড়বেন মো. আশ্রাফুজ্জামান। আসনটি থেকে নৌকা প্রত্যাহার করে নিলেও মুখোমুখি হতে হবে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম মুজিবুর রহমান এর। সে ক্ষেত্রে লাঙ্গল কে পড়তে হবে চতুর্মুখী লড়াইয়ের সামনে।

পিরোজপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে লড়বেন মুশরেকুল আজম রবি। তিনি জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টা । আসনটি থেকে চারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান রুস্তম আলী ফরাজী দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। পরে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আছেন মাঠে। সে ক্ষেত্রে আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোন হ্যাভিওয়েট প্রার্থী না থাকলেও লাঙ্গল কে লড়তে হবে নিজ দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিপক্ষে।

ময়মনসিংহ-৮ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল পেয়েছেন ফখরুল ইমাম। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। এ আসনে ফখরুল ইমামের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন। লাঙ্গলের বিপরীতে মাহমুদ হাসান সুমন শক্ত প্রতিপক্ষ বলে জানা যায়। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পড়তে হবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বদরুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আসনটিতে।

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তার বিপরীতে আসনটি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুল হক হায়দার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এডিসি মেজর (অব.) মো. নাসিমুল হক ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. গোলাম কবির ভূঁইয়া। তাই জাতীয় পার্টির মহাসচিবকেও জেতার জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পরতে হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ-১ আসনে লাঙ্গল পেয়েছেন জহুরুল আলম রুবেল। আসনটি থেকে আওয়ামী লীগ তাদের নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিলেও থাকছে আওয়ামী লীগের হ্যাভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী। যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ লড়বেন আসনটি থেকে। তার সঙ্গে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রতীক পেয়েছেন শরিফা কাদের। তিনি দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এর সহধর্মিণী। এছাড়াও জাতীয় পার্টির একজন উপদেষ্টা। আসনটি তে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি। এছাড়াও তিনি বিজিএমইএ’র পরিচালক ও নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তাই আসনটি তে লাঙ্গল প্রতীক কে জয়ী হতে পড়তে হবে কঠিন লড়াইয়ের মুখে বলেই জানা যাচ্ছে।

হবিগঞ্জ-১ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়বেন মো. আব্দুল মনিন চৌধুরী। আসনটি থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, বর্তমান এমপি শাহনেওয়াজ গাজীর ছোট ভাই গাজী মো. শাহেদ। তাই ত্রিমুখী লড়াইয়ে মুখে পড়তে হবে জাতীয় পার্টিকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবেন আব্দুল হামিদ। নৌকা না থাকলেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পড়তে হবে কঠিন লড়াইয়ের মুখে। আসনটি তে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের হ্যাভিওয়েট বলে পরিচিত দুইবারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী মো. সোলাইমান আলম শেঠ। এ আসন থেকেও নৌকা প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। তবে আসনটি তে আছে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সাবেক সিডিএর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। তাই আসনটি থেকে লাঙ্গল কে জিতে আসতে পড়তে হবে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে।

এছাড়াও রংপুর-৩ জি এম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ-৫ এ কে এম সেলিম ওসমান, চট্টগ্রাম- ৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফেনী-৩ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-১ এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, গাইবান্ধা-১ শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-৩ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল-৩ গুলাম কিবরিয়া টিপু ও ময়মনসিংহ-৫ সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তির আসনে নৌকা প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। তবে আসনগুলোতে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *