সারাদেশ

ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই সামাজিক ও অতিথিপরায়ণ বলে স্বীকৃত। সামাজিকভাবে মিলেমিশে বসবাসের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের ধর্ম পরিচয় বা অন্যকোনো ভিন্নতা কখনো বাধা সৃষ্টি করেনি। গ্রামাঞ্চলে এর ধারাবাহিকতা কিছুটা বজায় থাকলেও শহরাঞ্চলে ‘প্রতিবেশী’ ধারণাটাই আজ বিলুপ্তির পথে।

কর্মব্যস্ত শহুরে জীবনে বছরের পর বছর পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করলেও কেউ কাউকে চেনে না এমন সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অথচ ইসলাম প্রতিবেশীকে অনন্য মর্যাদায় ভূষিত করেছে। ইসলামের ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় মানুষ প্রতিবেশী সম্পর্কে উদাসীন। জেনে নেওয়া যাক, প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে।

সাধারণত বসতবাড়ির আশেপাশে যারা বসবাস করে, তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীর পরিচয় প্রদানে ইরশাদ হয়েছে, হজরত হাসান (রা.) বলেছেন, ‘নিজের ঘর থেকে সামনে ৪০ ঘর, পেছনে ৪০ ঘর, ডানে ৪০ ঘর এবং বাঁয়ে ৪০ ঘরের অধিবাসীরা হচ্ছেন প্রতিবেশী।’

ইসলাম প্রতিবেশীকে এত বেশি মর্যাদা দিয়েছে যে, প্রতিবেশীর ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হজরত জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি মনে হতো যে, হয়ত তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন।’

প্রতিবেশীর যেসব অধিকার রক্ষায় আমাদের সমাজজীবন আরো সুন্দর হতে পারে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।

সুতরাং সুন্দর আচরণ পাওয়ার প্রথম হকদার প্রতিবেশী সুন্দর আচরণ : বিপদ-আপদ বা সুখ-দুঃখে যাকে প্রথমে পাশে পাওয়া যায়, তিনি প্রতিবেশী। সুতরাং সুন্দর আচরণ পাওয়ার প্রথম হকদার তিনি। হাদিসে রয়েছে এর প্রতিফলন, হজরত আবু শুরায়হ খু্যায়ি (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।’ শুধু হাদিস নয়, কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং সুরা নিসায় প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দেন, ‘আর তোমরা নিকট প্রতিবেশী ও দূর-প্রতিবেশীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো।’

কষ্টের কারণ না হওয়া : নিজের কোনো কাজের দ্বারা যাতে প্রতিবেশী কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা। এক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল-হারামের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা জরুরি। ইসলাম কোনোভাবেই মানুষকে কষ্ট দেওয়া সমর্থন করে না। রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ -মুত্তাফিকুন আলাইহি

প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া : প্রতিবেশী কোন অবস্থায় আছে সেটা জানা আমাদের জন্য সামাজিক ও ঈমানি দায়িত্ব। ইসলাম সবসময় একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন চায়, সমাজে কারো অবস্থান অতি উচ্চে আর কারো অবস্থান অতি নিম্নে- এটা হতে পারে না। আপনি ভালো অবস্থানে থাকা মানে আপনার প্রতিবেশীকে ভালো রাখার দায়িত্ব আপনার ওপর বর্তায়। এটাই ইসলামের শিক্ষা।

হাদিসের ভাষ্য হলো, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ -আদাবুল মুফরাদ : ১১২

বিপদে পাশে থাকা : বিপদ-আপদে প্রতিবেশীর পাশে থাকতে হবে। বৈচিত্র্যময় সমাজব্যবস্থায় হরহামেশা মানুষের বিপদ-আপদ ঘটতে পারে, এমতাবস্থায় বিপদগ্রস্ত কোনো ব্যক্তির সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা প্রথম ব্যক্তি হবেন তার প্রতিবেশী। ভাইয়ের বিপদে ভাই এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক৷ আর্থিক সমস্যায় অর্থ দিয়ে, প্রয়োজনে শ্রম দিয়ে, সময় দিয়ে প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে হবে। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ -সহিহ বোখারি

অসুস্থতায় সেবাযত্নের দাবিদার : মানুষ অসুস্থ হলে স্বাভাবিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা কমে যায়। শক্তিমত্তা কমে যাওয়ায় নিজেকে অসহায় মনে হয়। এই অবস্থায় কারো হাতের লাঠি হওয়া মানে তার হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া। ফলে সামাজিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আসতে বাধ্য। তাই প্রতিবেশী অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা ও সেবাযত্ন করতে হবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে, অথবা তার কোনো ভাইকে আল্লাহর জন্য দেখতে যাবে, আসমান থেকে একজন ফেরেশতা আহ্বান করে বলতে থাকে, তুমি সৌভাগ্যবান, তোমার হাঁটা কল্যাণকর এবং তুমি জান্নাতে তোমার অবস্থান করে নিলে।’ -জামে তিরমিজি

হাদিয়া বিনিময় : একসময় গ্রামাঞ্চলে রেওয়াজ ছিল যে, কোনো বাড়িতে ভালো রান্না হলে তা পাশের বাড়িতেও পাঠানো। এর সুফল দেখা যেত পারস্পরিক সম্পর্কে, রক্ত সম্পর্ক না থাকলেও তাদের আত্মিক বন্ধন রক্ত সম্পর্কের চেয়ে কোনো অংশে কম হতো না। ইসলামের নির্দেশনাও এর ভিন্ন নয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তার আশেপাশের লোকদের সঙ্গে হাদিয়া বিনিময় করতেন ও অন্যদের তাগিদ দিতেন। যেমন তিনি হজরত আবু যর (রা.)-কে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘হে আবু যর! তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার পানি বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো।’ -সহিহ মুসলিম

এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিম নারীদের উদ্বুদ্ধ করে আরো বলেন, হে মুসলিম রমণীরা! তোমরা প্রতিবেশীর বাড়িতে সামান্য বস্তু পাঠানোকে তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকি তা যদি বকরির পায়ের সামান্য অংশও হয়। -সহিহ বোখারি

প্রতিবেশী আমাদের ভালো-মন্দ হওয়ার সাক্ষী : একজন মানুষ কতটা ভালো-মন্দ তা প্রতিবেশীই সবচেয়ে ভালো জানেন। কারণ সে তাকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়। তাই হাদিসে প্রতিবেশীকে ভালো-মন্দ হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট উত্তম সঙ্গী, যে তার নিজ সঙ্গীর নিকট উত্তম। আল্লাহর দৃষ্টিতে উত্তম প্রতিবেশী হলো- যে তার নিজের প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।’

সুতরাং প্রতিবেশীর হক আদায়ে তারতম্য করার সুযোগ নেই।

মুসলিম শরিফে বর্ণিত হাদিসে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট ছয়টি হকের আলোচনা এসেছে। যেগুলো পাওয়ার প্রথম ও প্রধান হকদার হচ্ছে প্রতিবেশী। হকগুলো হলো- ১. তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে। ২. সে যখন তোমাকে দাওয়াত করবে তখন তা গ্রহণ করবে। ৩. সে যখন তোমার কাছে পরামর্শ চাইবে, তখন তুমি তাকে পরামর্শ প্রদান করবে। ৪. যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে। ৫. যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তাকে দেখতে যাবে। ৬. যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাজা ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করবে।

ইসলাম যেহেতু আল্লাহপ্রদত্ত দ্বীন, তাই এর বাস্তবায়নের মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের যাবতীয় কল্যাণ। সমাজজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সামাজিক শিক্ষাগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে জানা ও তা মানার বিকল্প নেই।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *