সারাদেশ

লক্ষ্মীপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মতবিনিময় সভা

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফরের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ) ও শাহপরানের (রহ) মাজার জিয়ারতও বিশাল নির্বাচনী জনসভার মাধ্যমে প্রচারণার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। জনসভায় সিলেটবাসীকে আরও একবার নৌকায় ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সিলেটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সফরের যোগ শুরু ১৯৮১ সাল থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দুই সপ্তাহের মধ্যে শেখ হাসিনা সিলেট সফর করেন। মাজার জিয়ারত করেন, এবং সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাষণও দেন। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের আগে সিলেট দিয়েই শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়, এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই। এবারের নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি অংশ নিচ্ছে না, অংশ নিচ্ছে না তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোও। তবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের অন্তত ২৯টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গণতন্ত্রী পার্টি নামের দলটির সকল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে নেতৃত্ব বিষয়ক সমস্যার কারণে। তবে সকল আলোচনা ছাপিয়ে এবার আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতদের আগে যেখানে বিদ্রোহী বলা হতো, এখন তাদেরকে বিদ্রোহী বলা হচ্ছে না। বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে না। বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। এই উৎসাহ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে, দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে।

নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে এবার নতুন কৌশলে আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়নে প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি মনোনয়নবঞ্চিতদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেয়নি দলটি। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে রেখেছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই উৎসাহে সারাদেশের প্রায় প্রতিটি আসনে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা। এতে হেভিওয়েট অনেক প্রার্থী বিপত্তিতে পড়লেও সবার জন্যে সমান সুযোগ রাখার পক্ষপাতী দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফলে নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশিরভাগ জায়গায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বতন্ত্রের মোড়কে আওয়ামী লীগ নেতাদেরই। শেখ হাসিনা বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন, তবু তাদের নিয়ে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ভাবনার মধ্যে তিনি নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে সিলেটে যে জনসভা করলেন সেখানেও উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ। তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল স্থানীয় আয়োজকেরা। এই আমন্ত্রণ সম্পর্কে নিশ্চয় ওয়াকিবহাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব; দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী যখন জনসভামঞ্চে উপস্থিত হন তখন দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি উপস্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী সে সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মঞ্চে উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেননি, প্রশ্ন করেননি সাধারণ সম্পাদকও।

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রয়েছেন ১৮টি আসনে। হবিগঞ্জের একটি আসনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নৌকা প্রতীকের প্রত্যেক প্রার্থীই উপস্থিত ছিলেন জনসভামঞ্চে। এমনকি নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অন্তত সাতজন উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে। এদের মধ্যে চারজন বর্তমান সংসদ সদস্য, আর বাকিদের কেউ বর্তমান সংসদের সদস্য নন। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেও প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ছিলেন উপস্থিত। কেবল তাই নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের অনেকেই জনসভায় এসে তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান জুড়েছেন, যদিও বিশাল জনসমুদ্রে সংখ্যায় তারা ছিলেন অল্পসংখ্যক, তবু তাদের উপস্থিতিও উল্লেখের।

প্রধানমন্ত্রী সিলেট এসেছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায়। তিনি তার বক্তব্যে নৌকার জন্যে ভোট চেয়েছেন। এই জনসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু না বললেও, সভামঞ্চে তাদের উপস্থিতিকে ভিন্ন চোখে দেখেননি। তিনি হয়ত এখানে চুপ ছিলেন, তবে তার এই চুপ থাকাটাও বার্তাবাহী। একই মঞ্চ ব্যবহার করেও তিনি তাদের অগ্রাহ্য করেননি।

মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাদের যারা ভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, তারাও কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নির্বাচন করছেন। শেখ হাসিনা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। আগের মতো আওয়ামী লীগ যদি স্বতন্ত্রদের প্রতি বিরূপ হতো, তবে এরইমধ্যে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিদ্রোহী হিসেবে ধরে নিয়ে বহিস্কার করত। বলা যায়, এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের রক্ষাকবচ খোদ শেখ হাসিনাই!

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে নানামুখী আলোচনা আছে। নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে সকল মহলে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিবিধ নিষেধাজ্ঞার গুজব আছে। এমন অবস্থায় এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে যত বেশি সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করবে, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এই নির্বাচন ততবেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আসছে নির্বাচনের সবকটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জিতে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার আসন-ভাগাভাগি শেষে শতভাগ জয়ের সম্ভাবনা এখন নাই। তবে এরবাইরে যে কটি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক রয়েছে সে সব জায়গায় জিতে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল, যদি স্বতন্ত্রের মোড়কে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করত। আসছে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাফল্যের ওপর নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও অনেকটা নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অস্বীকার করার উপায় নাই যে, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচনে ফের জিততে যাছে আওয়ামী লীগ। খেলার আগেই ফলাফল নির্ধারিত অনেকটাই। তবে এই ফলাফলের বাইরেও কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ ছড়াতে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদেরকে ইতিবাচক চোখে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভামঞ্চে জায়গা করে দিয়ে সে প্রমাণ রেখেছেন আরও একবার। স্বতন্ত্রদের নিয়ে শেখ হাসিনা কিছু বলেননি ঠিক, তবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের নেত্রী স্বতন্ত্রদেরও প্রার্থী হতে বলেছেন।’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে স্বতন্ত্র, স্বতন্ত্ররা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে, নৌকা করবে নৌকার নির্বাচন—এমনই মন্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের।

আওয়ামী লীগের প্রধান ও দ্বিতীয় প্রধান নেতা স্বতন্ত্রদের নিয়ে বিব্রত নন। তবে মাঠচিত্র ভিন্ন। মাঠে প্রশ্নের মুখে সহনশীলতা, দলীয় শৃঙ্খলা। দেশের জায়গায়-জায়গায় বিরোধে জড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকেরা। সংঘর্ষ হচ্ছে প্রকাশ্যে, গোপনে বাড়ছে বিভেদ। এই বিভেদ-সংঘর্ষ সাংগঠনিক শৃঙ্খলাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয় কি-না সন্দেহ!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *