সারাদেশ

সতর্ক থাকুন, ভোট যেন প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চম্পকনগর ও সোনাপুর এলাকায় অবস্থিত শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ। কালের বিবর্তনে এখনও অক্ষত রয়েছে ফেনীর ভাটির বাঘ খ্যাত বাংলার বীর শমসের গাজীর সুড়ঙ্গটি। অবিভক্ত বাংলায় তৈরি হওয়া এ সুড়ঙ্গের বর্তমানে রয়েছে দুই পাশে দুই দেশ। সুড়ঙ্গের একমুখ বাংলাদেশে, অন্যমুখ ভারতে। রহস্যময় এ সুড়ঙ্গ দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

এলাকাটি পরিচিত শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান হিসেবে। সেখানে রয়েছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট, দিঘিসহ নানা স্থাপনা। স্থানীয়দের তথ্যমতে, ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী এবং ত্রিপুরার রোশনাবাদ পরগণার কৃষক বিদ্রোহের নায়ক শমসের গাজীর প্রাসাদসহ অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।

শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ পথটি নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প ও উপাখ্যান। ইতিহাসের এই আশ্রমটি দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, এ সুড়ঙ্গের দিকে তাকালেই রহস্যময় অনু্ভূতির সৃষ্টি হয়। ছোট থেকে এটি নিয়ে নানা কথা শুনে আসছি।

রিজওয়ান নামে এক পর্যটক বলেন, শমসের গাজী পরিবারের নারীদের জন্যই এ সুড়ঙ্গ পথটি তৈরি করা হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। এ পথ দিয়ে গাজীর পরিবারের নারী সদস্যরা গোসলে যেতেন বলে একটি কথার প্রচলন রয়েছে।

সুড়ঙ্গের অদূরেই রয়েছে শমসের গাজীর দিঘী। যাকে এক খুইল্লা দিঘীও বলা হয়। এটি নিয়েও রয়েছে নানা গল্প। কথিত আছে, এ দিঘীটিরওপর ঢিল ছুঁড়ে কেউ কখনও দিঘী পার করতে পারেনি। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এতে অলৌকিক শক্তি আছে। যে কারণে ঢিল ছুঁড়ে দিঘী পার করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে ইব্রাহীম খলিল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এখানে ঘুরতে এসে প্রায় সবাই একটি পাথর নিয়ে দিঘীর পশ্চিম পাশে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে দরবেশের দোয়ায় তাদের হাতের শক্তি কমে যায়। যার ফলে কেউ ঢিল ছুঁড়ে পার করতে পারে না।

শমসের গাজীর স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট। নবাব শমসের গাজীর বংশধর পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঞাঁ নবাবের স্মৃতি ধরে রাখতে ৫ একর জায়গায় শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্টটি তৈরি করেন। এখানের প্রতিটি আসবাবপত্রই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা।

বাঁশের নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে গড়ে তোলা হয় এই কেল্লা। রিসোর্টটির পুরো আঙিনায় রয়েছে নানা শৈল্পিক আয়োজন, বিভিন্ন ধরনের ফল আর ফুলের বাগান। সেই বাগানের পাশের খোলা আঙিনার ধারে বাঁশের মাচা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি ঘরের নমুনায় নির্মিত হয়েছে স্থাপনা।

দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা বলছেন, সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পটকে ঘিরে যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয় এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায় তাহলে এটির কদর বাড়বে আরও বহুগুণে।

ছাগলনাইয়ার শিল্পপতি মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, শমসের গাজী এবং এ স্থানের ইতিহাস নিয়ে একটি ছবি বানানো যেতে পারে। সুড়ঙ্গসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রাখা প্রয়োজন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, নবাব সিরাজদ্দৌলার ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে প্রথম নিহত হন ত্রিপুরা রাজ্যের শেষ স্বাধীন মুসলিম নবাব বীর শমসের। জীবনব্যাপী বহু কৃতিত্ব রয়েছে তার। মৃত্যুর আগে তিনি দুর্গ ও রাজধানী গড়েন। প্রতিরক্ষার জন্য আধুনিক রণকৌশলে সাজান পুরো এলাকা। তার রাজকীয় বাড়ির পাশে ৪.৩৬ একর জায়গা জুড়ে দিঘী এবং একটি সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করেন তিনি।

সে সময় তিনি চোর ডাকাত ও জলদস্যুদের রুখতে এক শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন। বর্তমান ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শমসের গাজীর পিতার নাম পীর মুহাম্মদ মতান্তরে পেয়ার মুহাম্মদ খান এবং মাতার নাম কৈয়্যারা বিবি। তিনি প্রথম জীবনে এক জমিদারের ক্রীতদাস ছিলেন।

তারপর নিজের জ্ঞান, শক্তি, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনিও একসময় হয়ে উঠেন জমিদার। টানা এক যুগ ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করেন এই বীর। পরে পরিচিতি লাভ করেন ভাটির বাঘ হিসেবে। বহু যুদ্ধক্ষেত্র দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন বীর শমসের। শত্রু সেনা বিনাশ করতে কখনো পিছপা হননি। তার কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংরেজ বেনিয়ারা। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঐপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, এ জায়গাটি ফেনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। দারুণ সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান হিসেবে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে এখানে আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। পর্যটন করপোরেশনের সাথে কথা বলে সে ধরনের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ফেনী জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ ও দিঘীর বিষয়াবলী দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার জন্য ফেনী গাইড নামে একটি প্রকাশনা করা হয়েছে। সেখানে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

সুড়ঙ্গ দেখতে যাবেন যেভাবে-

ঢাকা থেকে স্টারলাইন পরিবহনে সরাসরি ছাগলনাইয়া। অথবা, শ্যামলী, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন ও সৌদিয়া পরিবহনের বাসে ফেনী যাওয়া যাবে। এছাড়াও ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মহানগর গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে ফেনী যেতে পারবেন। এরপর ফেনী সদর হাসপাতাল মোড় থেকে সিনএনজি অটোরিকশা যোগে ছাগলনাইয়া উপজেলা হয়ে স্থানীয় পরিবহনে শুভপুর এলাকায় শমসের গাজীর দিঘী ও সুড়ঙ্গপথ দেখতে যেতে পারেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *